ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে জামবনির শুশনি গ্রামে তৈরি হচ্ছে হোম স্টে। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটন শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। কেবলমাত্র বেলপাহাড়িতেই তৈরি হয়েছে ৬৭টি হোম স্টে। জেলার অন্যত্রও বেশ কিছু হোম স্টে তৈরির কাজ চলেছে। ফলে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতেও জমির দাম বাড়ছে লাফিয়ে।
জল-জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রাম জেলা বরাবরই শহুরে নাগরিকের পছন্দের জায়গা। কলকাতার বহু মানুষ এক সময় এই জেলায় জমি কিনে বাড়ি করেছে নিরিবিলিতে প্রকৃতির মাঝে থাকবেন বলে। আর এখন মহানগরের পর্যটকরা কোলাহল থেকে দূরে গ্রামীণ এলাকায় থাকতে পছন্দ করছেন। সেই কারণেই জেলার প্রত্যন্ত সব গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক হোম স্টে। সেই সূত্রে পুরনো গাছ-সহ রায়ত জমির দর এখন আকাশ ছোঁয়া।
জমির কারবারিরা জানাচ্ছেন, বেলপাহাড়িতেপ্রকৃতির মাঝে এমন রায়ত জমি প্রতি কাঠা ৪ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কলকাতা, ভিন্ জেলা, এমনকি ভিন্ রাজ্যের লোকজনও হোম স্টে গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন, বিনিয়োগও করছেন। বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের অদূরে একটি বিলাসবহুল হোম স্টে এবং রিসর্টে সুইমিং পুল পর্যন্ত রয়েছে। বাঁশপাহাড়ির বাগানবিলাস, কাঁকড়াঝোরে কেকা, আমলাশোলে কোজাগর, আমঝর্নায় কুড়চি— অভিনব সব হোম স্টে ইতিমধ্যেই মাথা তুলেছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলছেন, ‘‘আবেদনের ভিত্তিতে ১০২টি হোম স্টে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। বাকি গুলিকেও আবেদন করতে বলা হচ্ছে। সরকারি অনুমোদন মেলে সংশ্লিষ্ট হোম স্টে কর্তৃপক্ষ সরকারি আর্থিক অনুদানও পাবেন।’’
বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ জানাচ্ছেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসছেন বলেই নতুন-নতুন হোম স্টে তৈরি হচ্ছে। বাইরের লোকজনও বিনিয়োগ করছেন। বেলপাহাড়িতে ৬৭টিরও বেশি হোম স্টে হয়ে গিয়েছে। বিধান জানাচ্ছেন, হাউস কিপিংয়ের কাজে পেশাদার বাইরের লোকজনের পাশাপাশি স্থানীয়রাও এই সব হোম স্টে-তে কাজ পাচ্ছেন। ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসায়ী রিনিতা চট্টোপাধ্যায় বেলপাহাড়ির নোটাচুয়ায় পাহাড়ের কোলে জমি কিনেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘পর্যটকরা প্রকৃতির কোলে থাকতে পছন্দ করছেন। বেলপাহাড়িতে হোম স্টে তৈরির উদ্যোগ করছি।’’
শুধু বেলপাহাড়ি নয়, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে গড়ে দশ কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কিছু নতুন হোম স্টে গড়ে উঠছে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৯ কিমি দূরে জামবনি ব্লকের শুশনি গ্রামে পাঁচ বিঘে জমিতে হোম স্টে তৈরি করছেন ভুবনেশ্বর প্রবাসী ঝাড়গ্রামের ভূমিকন্যা উপাসনা কর্মকার। উপাসনা টুরিজ়ম ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী। উপাসনা বলছেন, ‘‘রায়ত জমিটিতে প্রচুর শাল, মহুল, সেগুন গাছ রয়েছে। গাছের ক্ষতি না করে সেখানেই কটেজ তৈরি করছি। পর্যটকরা জঙ্গলের মাঝে থাকার অনুভূতি পাবেন।’’
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার জানাচ্ছেন, জেলায় এই মুহূর্তে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ১০২টি হোম স্টে রয়েছে। এ ছাড়াও আরও অসংখ্য হোম স্টে তৈরি হয়েছে ও তৈরি হচ্ছে। আগে জেলায় বেসরকারি অতিথিশালার সংখ্যা ছিল ১৭টি। এখন অতিথিশালার সংখ্যা ৬৫টি। মধুসূদনের কথায়, ‘‘আগে মরসুমে স্থানাভাবে পর্যটকদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হত না। এখন সেই সঙ্কট অনেকটা মিটেছে। শহুরে জীবন থেকে দু’তিনটি দিনের জন্য প্রকৃতির মাঝে থাকার প্রবণতাটাই পর্যটকদের মধ্যে বেশি। সেই কারণে জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর হোম স্টে তৈরি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy