টাকা বরাদ্দ হয়েছিল পুর এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়নের জন্য। কিন্তু তা দিয়ে কাজ হল গ্রামীণ এলাকায়। আর বিষয়টি জানা গেল, কাজ শেষের পরে!
মেদিনীপুর পুর এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়নে বরাদ্দ টাকায় কাজ হয়েছে শহর ঘেঁষা কেশপুর ফিডারের সমান্তরাল নতুন লাইনে সংযোগ স্থানান্তরিত করার জন্য। এ ব্যাপারে অভিযোগ আসার পরে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রশ্ন, কয়েক কোটি টাকার কাজ চলাকালীন কেউ জানতে পারলেন না!
অভিযোগ, দফতরেরই এক শ্রেণির আধিকারিকদের মদতে বেআইনি কাজটি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমির দালাল চক্রের আঁতাঁতও থাকতে পারে। কারণ, জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে তার দাম বেশি ওঠে না। কারণ, ওই জমিতে বহুতল নির্মাণ করা যায় না। শহরের বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়নে জন্য যেমন ‘রিস্ট্রাকচারড অ্যাকসেলারেটেড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্মস’ (আরএপিডিআরপি) থেকে টাকা মিলেছে, তেমনই গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রকল্প’ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। তা-ও কেন শহরের জন্য বরাদ্দ টাকায় গ্রামীণ এলাকার কাজ হল, তা জানতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার জয়দীপ চক্রবর্তী বলেন, “সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কাজটি হয়েছে। তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।” তবে মেদিনীপুর ডিভিসনের ডিভিশনাল ম্যানেজার নীহারকান্তি বিশ্বাসের যুক্তি, “ধর্মার কাছে থাকা সাবস্টেশন থেকে শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ ঢোকে। তাই সেটি আগে ঠিক না করলে শহরের পরিষেবার উন্নয়ন ঘটবে না।” কিন্তু গ্রামীণ এলাকার জন্য তো অন্য প্রকল্প রয়েছে? সদুত্তর এড়িয়ে নীহারকান্তিবাবুর জবাব, “নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই কাজটি করা হয়েছে।”
আরএপিডিআরপি প্রকল্পে ন্যূনতম ৩০ হাজার মানুষের বসবাস এমন শহর এলাকায় বিদ্যুতের কাজ করা যায়। বিশেষ ক্ষেত্রে তা ১০ হাজার জনসংখ্যাতেও করা যেতে পারে। যে সব শহরের জনসংখ্যা ৪ লক্ষের বেশি এবং বছরে সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়, প্রথম ধাপে সেখানেই এই প্রকল্পের জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৮টি পুরসভার মধ্যে মেদিনীপুর (৩২ কোটি), ঘাটাল (২২ কোটি), ঝাড়গ্রাম (২৫ কোটি) ও খড়্গপুরের (৩৪ কোটি) জন্য অর্থ মঞ্জুর হয়েছে। কোথাও কম ক্ষমতা সম্পন্ন সাব স্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, পুরনো তার বা বাতিস্তম্ভ সরিয়ে নতুন লাগানো, নিরাপত্তার জন্য তারের নীচে জাল দিয়ে ঘেরা প্রভৃতি কাজ করার কথা।
মেদিনীপুর শহরের চারিদিকে পুরনো তার ঝুলতে দেখা যায়। আর লো ভোল্টেজের সমস্যা তো রয়েছেই। তাছাড়া, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নয়নে অর্থ যে আসেনি তা নয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ১৩৫০ কোটি টাকা পাচ্ছে। কেশপুর ফিডারের পরিবর্তন সেই টাকায় সহজেই করা যেত। কে তা হল না তা জানতে আপাতত তদন্ত শেষের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy