E-Paper

জমি-কাণ্ডে এক আধিকারিকও যুক্ত, তদন্তে ইঙ্গিত

জমি বেহাতের ঘটনা ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া এলাকায়। এখানকার ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমি অন্যের নামে দলিল করিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:২০
জমি বেহাতের প্রতিবাদে বামেদের মিছিল। রোহিণী এলাকায়।

জমি বেহাতের প্রতিবাদে বামেদের মিছিল। রোহিণী এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

জমি কাণ্ড নিয়ে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন তিন জন। একটি সূত্রের খবর, জমি হাতানোর চক্রান্তে সরকারি এক আধিকারিকের জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। উঠে আসছে চার-পাঁচ জন প্রোমোটারের নামও। গ্রামের মানুষের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্তে এঁরাই বড় মাথা হওয়ার সম্ভাবনা। সরকারি ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে সূত্রের খবর। জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘যে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের কেউ যুক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাদ কেউ যাবে না।’’

জমি বেহাতের ঘটনা ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া এলাকায়। এখানকার ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমি অন্যের নামে দলিল করিয়ে নেওয়া হয়েছে। জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভুয়ো উত্তরাধিকার শংসাপত্র জমা দিয়ে দলিল করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ১৬ সেপ্টেম্বর সাঁকরাইল থানায় জেলা নিবন্ধক জয়জিৎ চন্দ লিখিত অভিযোগ জানান। পুলিশ প্রথমে চিড়াকুঠি গ্রামের শুকরঞ্জন মাহাতোকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সিট' (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করেন। গত শনিবার ‘টাইপকারক’ দেবাংশু পাহাড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ।দেবাংশুকে পুলিশ ইতিমধ্যে দু’বার নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। সূত্রের খবর, দেবাংশুর দোকান থেকে ভুয়ো উত্তরাধিকার শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলার ডাবরা এলাকার একটি মন্দির থেকে দলিল লেখক সঞ্জয়কুমার দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জমি-কাণ্ড সামনে আসার পরই পলাতক ছিলেন সঞ্জয়। নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্যবহার করছিলেন স্ত্রীর ফোন। গা ঢাকা দিয়েছিলেন দিঘায়। কিছুদিন থাকার পর বাঁকুড়ার মন্দিরে চলে যান।

দেবাংশু ও সঞ্জয়কে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। একটি সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি মাস থেকে জমি কেনাবেচার কাজ চলছিল জোর কদমে। মোট ১০টি সংস্থার নামে জমি কেনা হয়েছে। সব সংস্থার মাথায় ছিল একটি সংস্থা। সেটি ছোট ছোট সংস্থার নামে বিপুল জমি কিনেছিল। অন্য সূত্র জানাচ্ছে, জমি হাতিয়ে নেওয়ার এই চক্রে শামিল সরকারি আধিকারিকটি বিপুল টাকা পেয়েছেন। চার-পাঁচজন বড় প্রোমোটারের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উঠে আসছে তদন্তে। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘তদন্ত যে ভাবে এগোবে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

জমি ফেরানো ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার মিছিল করে বাম সংগঠনগুলো। সাঁকরাইল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে স্মারকলিপি জমা দেয় বামেদের সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। এ দিন মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে এবং কৃষক সভার জেলা সহ-সম্পাদক অর্জুন মাহাতো। অর্জুন বলেন, ‘‘অবিলম্বে চাষি থেকে সাধারণ মানুষের জমি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এলাকায় পাট্টা ও বর্গাদারেরা ভূমি হারা না হয় তা জানানো হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sankrail

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy