Advertisement
E-Paper

শিল্পে-পর্যটনে স্বনির্ভরতার স্বপ্নপূরণ

ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন এই গ্রামটির প্রকৃত নাম ‘লালবাজার’। কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেই গ্রামে গড়ে তুলেছে ‘ওপেন স্টুডিয়ো’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৬
ডোকরা শিল্পকর্ম তৈরি দেখছেন পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

ডোকরা শিল্পকর্ম তৈরি দেখছেন পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

ডোকরা শিল্পকর্মে হাত পাকিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছেন লোধা-শবর গ্রামের বাসিন্দারা। শীতের বেলায় লাল মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে গ্রামে ঢুকছে পর্যটকদের গাড়ি। ঢোকরা শিল্পসামগ্রীর পাশাপাশি, স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি কাটুমকুটম, গালার পুতুল, কাঠ ও বাঁশের শিল্পসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে ‘খোয়াব গাঁ’ এখন কার্যত পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন এই গ্রামটির প্রকৃত নাম ‘লালবাজার’। কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেই গ্রামে গড়ে তুলেছে ‘ওপেন স্টুডিয়ো’। শিল্পগ্রামটি এখন ‘খোয়াব গাঁ’ নামেই বেশি পরিচিত। সেখানে বাস করে ১৩টি পরিবার। তাদের সিংহভাগই আদিম জনজাতিভুক্ত লোধা-শবর সম্প্রদায়ের। গ্রামে আঁকা শেখানোর স্কুল চালায় সংস্থাটি। সেখানে আঁকা শেখে লোধা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি বড়রাও। দেশ-বিদেশের নামি শিল্পীরা এসে গ্রামবাসীদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেন। জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামের মাটির বাড়ির দেওয়ালগুলি সেজে উঠেছে নানা ধরনের দেওয়াল চিত্র ও শিল্পকর্মে। কলকাতার নাম করা শিল্পীদের পাশাপাশি, নতুন প্রজন্মের লোধা ছেলেমেয়েদের হাতের ছোঁয়ায় গ্রামের চারপাশেই নান্দনিক শিল্পকর্মের ছড়াছড়ি।

সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক চিত্রশিল্পী মৃণাল মণ্ডল বলেন ‘‘আদিম জনজাতির মানুষ গুলির মধ্যেও প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। ওরাও স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তাবায়ন নানা কারণে হয়ে ওঠে না। খুব সীমিত পরিসরে আমরা খোয়াব গাঁয়ের পরিবারগুলিকে শিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে চাইছি।’’ মৃণাল জানালেন, সেই উদ্দেশ্যেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাঁকুড়ার বিকনার শিল্পীদের এনে গ্রামে ডোকরার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। বাঁকুড়ার বিকনা গ্রামের ডোকরা শিল্পী অমর কর্মকার, মহাদেব কর্মকারের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন খোয়াব গাঁয়ের নন্দ আহির, দীপ মল্লিক, আশাকুমার আহিররা। আপাতত খোয়াব গাঁয়ে ডোকরা শিল্প সামগ্রী তৈরির কাজে নন্দ, দীপদের হাত পাকাতে সাহায্য করছেন বিকনার ডোকরা শিল্পী অমর কর্মকার, মহাদেব কর্মকাররা। মৃণালদের আতিথেয়তায় খোয়াব গাঁয়ে রয়েছেন বিকনার দুই শিল্পী। অমর বলছেন, ‘‘সব মাটিতে ডোকরা করা যায় না। এখনকার মাটিতে ডোকরার ছাঁচের কাজ খুব ভাল হচ্ছে।’’

জানা গেল, ডোকরা শিল্পসামগ্রী তৈরি করা যথেষ্ট ধৈর্য ও সময় সাপেক্ষ। প্রথমে মাটি দিয়ে অবয়ব গড়া হয়। পিচ আর ধুনো ফুটিয়ে সেই মিশ্রণ জলপূর্ণ পাত্রে ঢেলে সেই মিশ্রণ থেকে টেনে সুতো তৈরি করা হয়। মাটির শিল্পকর্মের গায়ে সেই সুতো জড়ানো হয়। এছাড়াও মৌচাকের মোম ও ধুনো দিয়ে আরও এক ধরনের সুতো তৈরি করে শিল্পকর্মের গায়ে পেঁচানো হয়। এরপর দু’ধরনের সুতো পেঁচানোর পর মাটি লেপে সেটিকে শুকিয়ে তারপর চুল্লিতে গরম করে তরল পিতল ঢেলে তৈরি হয় ডোকরা শিল্পসামগ্রী। এক একটি শিল্পসামগ্রী তৈরি করতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। খোয়াব গাঁয়ের শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এই শিল্পকর্ম তৈরির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদী তাই রপ্ত করতে একটু সময় লাগছে। তবে এর মধ্যেই লক্ষ্মী, গণেশ, পেঁচা, হরিণ, ষাঁড়, আদিবাসী দম্পতি, প্রদীপ, নাড়ুগোপাল, ঘরসজ্জার অভিনব কয়েকশো ডোকরা শিল্পসামগ্রী তৈরি করে ফেলা গিয়েছে।

খোয়াব গাঁয়ে সংস্থার অফিস ঘরে থরে থরে সাজানো ডোকরা শিল্প সামগ্রী দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামের একটি ফুলমেলার জন্য ডোকরার স্মারক তৈরির বরাত পেয়েছেন খোয়াব গাঁয়ের শিল্পীরা। খোয়াব গাঁয়ের বাসিন্দা কমল মাহাতো ‘ডোকরার খোয়াব গাঁ’ মডেল বানিয়েছেন। কমল, নন্দ, আশাকুমারের গ্রামবাসী আগে দিনমজুরি করতেন। এখন তাঁরাই শিল্পগ্রামের কারিগর। বেসরকারি উদ্যোগে বদলে যাওয়া গ্রামে পৌঁছনোর স্থায়ী কোনও রাস্তা নেই। প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার হস্তক্ষেপে আপাতত বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর দিয়ে গ্রামে ঢুকছে পর্যটকদের গাড়ি।

জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলছেন, ‘‘আমি ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছি। খুব ভাল ডোকরার কাজ করছেন স্থানীয় শিল্পীরা। রাস্তার সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হবে।’’

tourism Jhargram Dhokra Art
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy