তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারসভা। জংলা ছাপের প্যান্ট, টুপি আর সাদা টি-শার্ট পরা একদল যুবক মঞ্চের চারদিকে ছড়িয়ে। প্যান্ট আর টুপি হুবহু কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মতো, পায়ের জুতো জোড়াও জওয়ানদের ধাঁচেরই।
ক’দিন আগে পিংলায় দেবের সভায় এমন পোশাকের যুবকদের ভিড় সামলাতে দেখে শোরগোল পড়েছিল। আপনারা কারা? গাড়ি কোথায় রাখা হবে দেখানোর ফাঁকেই এক যুবক জবাব দিয়েছিলেন, “আমরা তৃণমূলের জয় হিন্দ বাহিনীর কর্মী।” কাছে যেতে স্পষ্ট হয়েছিল সাদা টি-শার্টের বুকে আঁকা ঘাসফুল।
দেশের সেনাবাহিনীকে তুরুপের তাস করে ভোট বৈতরণী পেরোতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল— এই অভিযোগে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পিংলায় ‘জয় হিন্দ বাহিনী’র পরনে সেনা জওয়ানদের মতো প্যান্ট-টুপি-জুতো দেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকেছে বিজেপি। তাদের অভিমত, নির্বাচন কমিশন পুলওয়ামার ঘটনার পরে জানিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী সংক্রান্ত কোনও কিছু ভোট প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না। ফলে, তৃণমূলের এই শাখা সংগঠনের এমন পোশাক বিধিভঙ্গের শামিল। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এতে বিধিভঙ্গ হয়নি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশের অভিযোগ, “মানুষক বিভ্রান্ত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাকে ঘুরছে ওরা। কমিশনে সব জানিয়েছি।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত রিটার্নিং অফিসার তরুণকুমার মল্লিকের অবশ্য বক্তব্য, “পোর্টালে অভিযোগ পেয়ে আমরা পুলিশকে তদন্ত করতে বলেছিলাম। তবে পুলিশ রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।” বিজেপি অবশ্য তাতেও চুপ হচ্ছে না। দেবের প্রতিপক্ষ ঘাটালের পদ্ম-প্রার্থী ভারতী ঘোষ বলছেন, ‘‘পুলিশ তো তৃণমূলের দলদাস। আমার সঙ্গেও তো তা নিয়েই সংঘাত হয়েছিল। ফলে, পুলিশের রিপোর্ট সত্যি বলে মানার কোনও কারণ নেই।’’
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে যে দিন পুলিশের গুলি চলেছিল, সে দিন হাওয়াই চটি পরে লাঠি হাতে সিপিএমের ক্যাডার বাহিনী পুলিশের সঙ্গে সমান তালে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিল জমিরক্ষা কমিটি। সে দিন মমতাও পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই একই অভিযোগ করেছিলেন। সে প্রসঙ্গ টেনে জয় হিন্দ বাহিনী নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন ভারতী। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএমের থেকেই এই সব কৌশল শিখেছে তৃণমূল। এ সব করে ভোট লুটের চক্রান্ত হচ্ছে।’’
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য জয় হিন্দ বাহিনীর এমন পোশাকে আপত্তির কিছু দেখছেন না। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “বহু বছর ধরেই আমাদের জয় হিন্দ সংগঠনে এই জংলা পোশাক রয়েছে। বিজেপি এখন তাতে ভূত দেখছে।” আর জয় হিন্দ বাহিনীর পিংলা ব্লক সভাপতি শেখ কাসেম বলেন, “আসলে আমাদের ইউনিফর্মে প্যান্টের রং কালো, টুপি সাদা। কিন্তু ভোটের সময় কর্মীরা বলছিল পোশাকে একটু নতুনত্ব চাই। তাই ৬০টি জংলা ছাপের প্যান্ট ও টুপি দেওয়া হয়েছে। এতে কোনও অসুবিধা আছে বলে জানি না।”
তৃণমূলের জয় হিন্দ বাহিনী সূত্রে খবর, দলনেত্রীর নির্দেশ মতোই বছর দু’য়েক আগে পিংলা ব্লকে এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়। আপাতত ব্লকে ৬০জন সক্রিয় কর্মী ও সব মিলিয়ে ১১১জন সদস্য রয়েছেন। দলের শৃঙ্খলারক্ষা ও সেবামূলক কাজের দায়িত্ব রয়েছে তৃণমূলের এই শাখা সংগঠনের উপর। সংগঠনের এক কর্মীর কথায়, “নির্বাচনের সময় বাইকের পেট্রল ও এই পোশাক ছাড়া তেমন কিছুই সংগঠন থেকে দেওয়া হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যদি কোনও সরকারি কাজ পাওয়া যায়, তাই সংগঠনের নির্দেশ পালন করছি।”