Advertisement
০৩ মে ২০২৪

উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে লেসার অ্যাডজুটান্ট স্টর্ক

গত কয়েক দিনে ঝাড়গ্রামে দু’টি মদনটাক পাখিকে উদ্ধার করেছেন বন দফতরের কর্মীরা। স্থানীয়রাই তাদের দেখতে পেয়ে খবর দিয়েছিলেন বন দফতরে। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, গত সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেও উদ্ধার হয়েছে একই প্রজাতির একটি পাখি।

সঙ্কটে: নিজস্ব চিত্র

সঙ্কটে: নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ১০:১০
Share: Save:

গত কয়েক দিনে ঝাড়গ্রামে দু’টি মদনটাক পাখিকে উদ্ধার করেছেন বন দফতরের কর্মীরা। স্থানীয়রাই তাদের দেখতে পেয়ে খবর দিয়েছিলেন বন দফতরে। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, গত সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেও উদ্ধার হয়েছে একই প্রজাতির একটি পাখি। এরা প্রত্যেকেই অসুস্থ। আর তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পাখি বিশেষজ্ঞদের।

পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিপন্ন এই পাখিরা। দীর্ঘদেহী ‘লেসার অ্যাডজুটান্ট স্টর্ক’ নামের পাখিটি আদতে উত্তরবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা। সুন্দরবনেও দেখা যায়। মাথার পিছনের দিকে থাকে চুলের মতো রোমের গুচ্ছ আর মাথার সামনের অংশটা অনেকটা টাকের মতো দেখতে। সে কারণে বাংলায় একে বলা হয় মদনটাক।

শীতের মরসুমে উত্তরবঙ্গ থেকে মদনটাক দক্ষিণবঙ্গে চলে আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি দক্ষিণবঙ্গের উঁচু গাছের মগডালে এরা বাসা বাঁধে। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে সেখানেই। সাধারণত মাছ, ব্যাঙ, সাপ ও পোকামাকড় খেয়েই জীবনধারণ। পাখি-পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, গরম পড়ার আগেই মদনটাকরা পরিযায়ী-সফর সেরে ঘরে ফিরে যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে কিছু মদনটাক দীর্ঘপথ ওড়ার মতো অবস্থায় নেই। তাই তারা মাঝপথে লোকালয়ে নেমে পড়ছে। সম্প্রতি এ রকম দু’টি অসুস্থ পাখি ঝাড়গ্রাম ও লালগড় এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছিল। একটি পাখিকে হিজলিতে পাঠানো হয়। অন্যটির ঠাঁই হয়েছে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায়।

পক্ষীবিশারদ শিবশঙ্কর গোস্বামীর মতে, পাখিগুলি যে এ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। মদনটাক সাধারণ উচ্চ বায়ুমণ্ডলে ওড়ে। পরিবেশ দূষণের ফলে সেখানে অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে। আবার চাষের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারও এই অসুস্থতার পিছনে কারণ হতে পারে। জমি লাগোয়া জলার মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়ে কীটনাশকের প্রভাব পড়ে। তা খেয়েও পাখিগুলি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে।

আবার অনেকে তীব্র গরমকেও দায়ী করছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার জন্যও ‘হিট স্ট্রোক’-ও অসুস্থতার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মত অনেকের। সেই সঙ্গে রয়েছে বাসস্থান হারানোর যন্ত্রণা। শিবশঙ্করবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরে যে ভাবে উন্নয়নের নামে জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে। তাতে শুধু মদনটাক নয়, আরও বহু পাখির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।”

ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় সাধারণ মানুষজনকেও সচেতন হতে হবে। মদনটাক পাখিগুলি অসুস্থ হয়ে লোকালয়ে নেমে পড়ছে। কারণ খোঁজার জন্য আমরা বিভাগীয়স্তরে পদক্ষেপ করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madan Tak Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE