Advertisement
E-Paper

মনের জোরেই মাধ্যমিকে দৃষ্টিহীন পূজা

মায়ের সঙ্গে বায়াডাঙ্গর গ্রামে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ইঁটের গাঁথনির বাড়িতে থাকে পূজা। ২০১৪ সালে পূজার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি কৃষ্ণকান্ত মাইতি প্রয়াত হন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৫
মা সুমিত্রা মাইতি বই পড়েন, শুনে মনে রাখে দৃষ্টিহীন পূজা। নিজস্ব চিত্র

মা সুমিত্রা মাইতি বই পড়েন, শুনে মনে রাখে দৃষ্টিহীন পূজা। নিজস্ব চিত্র

জন্মের পর থেকেই চারপাশের জগতটা ঝাপসা! জন্মগত রেটিনার সমস্যায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও মনের জোরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া ব্লকের বায়াডাঙ্গর গ্রামের পূজা মাইতি। স্থানীয় আম্বি বিএম গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী পূজার পরীক্ষার সিট পড়েছে বেলিয়াবেড়া কেসিএম হাইস্কুলে। ‘রাইটারে’র সাহায্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার জীবনের বড় পরীক্ষায় বসবে পূজা।

মায়ের সঙ্গে বায়াডাঙ্গর গ্রামে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ইঁটের গাঁথনির বাড়িতে থাকে পূজা। ২০১৪ সালে পূজার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি কৃষ্ণকান্ত মাইতি প্রয়াত হন। তাঁর দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পূজারা তিন বোন। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় দিদি পিউ নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, মেজদি শিউলি অবশ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। পূজার মা সুমিত্রা মাইতি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সুমিত্রা জানালেন, পূজা ছোটবেলায় মোটা লেন্সের চশমা পরত। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের দেখিয়েও লাভ হয়নি। ক্রমে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে পূজা।

বায়াডাঙ্গর প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পূজাকে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ব্লকের গাইঘাটায় নিজের বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সুমিত্রা। সেখানকার ঘৃতগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে পূজা। কিন্তু পারিবারিক অসুবিধায় স্থানীয় আম্বি গার্লস হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় পূজা। বান্ধবীদের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ২০২১ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় পূজা। রাইটারের সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন। গত বছর কেউই রাইটার হতে রাজি না হওয়ায় পূজার পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এ বার সেটা সম্ভব হল কী ভাবে? আম্বি বিএম গার্লস হাইস্কুলের টিচার-ইনচার্জ রিঙ্কু ঘোষাল বলেন, ‘‘আমার স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মান্না, স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় অন্য একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক সৌতম বেরা ও সর্বোপরি যে স্কুলে পূজার পরীক্ষা কেন্দ্র সেই বেলিয়াবেড়া কেসিএম হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা পরীক্ষা কেন্দ্রের সুপার ভাইজার সুব্রত মহাপাত্রের জন্যই এ বার রাইটারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।’’ সুব্রত মহাপাত্র জানালেন, বিষয়টি জানার পরই তাঁদের তিনি রাইটার জোগাড়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত দু’জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর নাম তারা রাইটার হিসেবে প্রস্তাব করে। ওই দুই ছাত্রী পূজার গ্রামের কাছাকাছি থাকে।

পূজা জানায়, তাঁর মা বই পড়ে যান। পূজা শুনে পড়া মুখস্থ করে। অঙ্ক নিয়ে একটু চাপেই রয়েছে পূজা। তার কথায়, ‘‘আমার এক পড়শি তথা সহপাঠিনী অষ্টমী কিস্কু অঙ্ক বুঝিয়ে দিত। সূত্র মুখস্থ করিয়ে দিত। একটা অঙ্ক কী ভাবে করতে হবে পর পর অঙ্ক কষার সময় অষ্টমী বলে যেত আমি অঙ্কটা মনে রাখতাম। কিন্তু অষ্টমী গত বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। মাস আটেক আগে অষ্টমীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে গোপীবল্লভপুর এলাকায়। ফলে অঙ্কের তালিমে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।’’ ফোনে অষ্টমী বলেন, ‘‘পূজা বেশ স্মৃতিধর। ওর চেষ্টা দেখে ভাল লাগত। এ বার পরীক্ষা দেবে শুনে ভাল লাগছে।’’ পূজার মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের সুপার ভাইজ়ার সুব্রত মহাপাত্র বলছেন, ‘‘পূজাকে পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হবে। দু’জন রাইটারের মধ্যে একজনই উত্তরপত্র লিখবে। প্রথম রাইটার অসুস্থ হলে বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় রাইটারের ব্যবস্থা হয়েছে।’’

সুমিত্রা বিধবা ভাতা পান। আর রেশনের চাল। স্বামীর চিকিৎসায় জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু শেষ। বাপের বাড়ি থেকে কিছু সাহায্য পান। তাই দিয়েই লড়াই চলছে। পূজা বলছে, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তাই পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব।’’

Madhyamik 2023 Jhargram Blind Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy