বিমান ওড়াচ্ছেন শুভদীপ। হাতে রয়েছে রিমোট-কন্ট্রোল। নিজস্ব চিত্র
করোনা-কালে মহারাষ্ট্রের কর্মস্থল ছেড়ে তিনি রয়েছেন গোপীবল্লভপুরের পারিবারিক বাড়িতে। বছর একুশের পেশায় সিকিওরিটি ইঞ্জিনিয়ার শুভদীপ কর ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর অবসরে বানিয়ে ফেলেছেন ‘রিমোট কন্ট্রোল এরোপ্লেন উইথ ক্যামেরা’ সংক্ষেপে এফপিভি (ফার্স্ট পার্সন ভিউ)। আড়াই ফুট দৈর্ঘ্যের ও চার ফুট প্রস্থের বিমানটি পরীক্ষামূলক ভাবে গোপীবল্লভপুরের আকাশে উড়িয়েছেন শুভদীপ।
পুণের একটি বেসরকারি সংস্থার সিকিওরিটি ইঞ্জিনিয়ার শুভদীপ জানাচ্ছেন, স্রেফ শখেই তিনি বিমানের মডেলটি বানিয়েছেন। এ ধরনের বিমান ওড়াতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে এগুলি তৈরির সময় পরীক্ষামূলক ভাবে ওড়ানো যায়। শুভদীপ জানাচ্ছেন, ড্রোনের থেকে ‘এফপিভি’ কিছুটা আলাদা। ড্রোন আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় স্থির ভাবে নীচের ছবি তুলতে পারে এবং যে কোনও জায়গায় ড্রোন সোজাসুজি নামানো বা ওড়ানো যায়। কিন্তু এফপিভি ‘টেক-অফ’ এবং ‘ল্যান্ডিংয়ে’র জন্য কিছুটা জায়গা দরকার। চলন্ত অবস্থায় ছবি তুলতে থাকে। পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়ায় ড্রোনের মাটিতে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এফপিভি-র ক্ষেত্রে সেটা হয় না। আবার এফপিভি-কে দীর্ঘ সময় আকাশে ওড়ানোও যায়।
গোপীবল্লভপুরের পশ্চিম নয়াবসান গ্রামে শুভদীপের বাড়ি। তাঁর ঠাকুরদা ধনঞ্জয় কর ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। মেদিনীপুরের ইংরেজ জেলাশাসক বার্জ ও পেডি-র হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত ধনঞ্জয় তিন দফায় ১৪ বছর জেল খেটেছিলেন ধনঞ্জয়। ঠাকুরদাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি শুভদীপের। শুভদীপের বাবা অমল কর প্রাক্তন বায়ুসেনার কর্মী। অমল অবশ্য এখন রাজনীতির জগতের মানুষ। আগে ছিলেন বিজেপিতে। এখন তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য। শুভদীপের পড়াশোনা গ্রামের স্কুলেই। ২০১৬ সালে স্থানীয় নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুভদীপ ভুবনেশ্বরের ‘ট্রাইডেন্ট অ্যাকাডেমি অব টেকনোলজি’ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি-টেক করেছেন। পড়াশোনা চলাকালীন শুভদীপ চাকরিও পেয়ে যান পুণের ‘সিকিওরিটি ইনোভেশন’ নামে এক সংস্থায়। সেখানে সিকিওরিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সফটওয়্যারের সিকিওরিটি টেস্টিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
করোনা-আবহে গত মে মাসে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। শুভদীপ বলছিলেন, ‘‘নেহাতই শখের বশে এফপিভি বিমানটি বানিয়েছি। আমার পেশার সঙ্গে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু ইচ্ছা আর অধ্যাবসার ফলে দু’মাসে পরিশ্রমে মডেলটি বানিয়েছি।’’ শুভদীপের তৈরি এফপিভি-টি দুই কিলোমিটার পরিধির মধ্যে ওড়ানো যায়। শুভদীপ বলেন, ‘‘ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এই বিমান বিক্রি করতে চাই না। তবে প্রশাসন যদি বন্যা পরিস্থিতি ও অন্য কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে কিছু নজরদারি করতে চান, তা হলে এই বিমানটি আমি দিতে রাজি আছি।’’ শুভদীপ ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সিভিল অ্যাভিয়েশন’ মন্ত্রকের অধীনে ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন-এ প্রয়োজনীয় অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। শুভদীপ জানালেন, যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিনেছেন। কিছু জিনিস স্থানীয় বাজার থেকেও কেনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy