Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশ্যে খুন, প্রশ্নে কোলাঘাটের নিরাপত্তা

মুম্বই রোডের ধারে বাড়ি হওয়ার সুবাদে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই ছুটে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও পুলিশকে জানানোর কাজটাও করেন তাঁরাই।

অকুস্থল: বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। নিজস্ব চিত্র

অকুস্থল: বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:১৫
Share: Save:

শুধু মেদিনীপুর নয়, ভিন রাজ্যের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে (মুম্বই রোডে) কোলাঘাট সেতু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নানা সময় এখানে দুর্ঘটনার জেরে বার বারই সেতু এলাকায় কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তার দাবি উঠেছে। গত ২৭ অক্টোবর, শুক্রবার ওই সড়ক সেতুর কাছেই ভর সন্ধ্যায় লোকজনের ভিড়ের মধ্যেই এক যুবককে গুলি করে খুনের ঘটনায় সেই দাবি আরও জোরাল হয়েছে।

মুম্বই রোডের ধারে বাড়ি হওয়ার সুবাদে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই ছুটে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও পুলিশকে জানানোর কাজটাও করেন তাঁরাই। কিন্তু গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চোখের সামনে যা দেখেছেন তা এযাবৎ কালে ঘটেনি বলে জানালেন সেখ ইনসাল আলি। কোলাঘাটে রূপনারায়ণ সেতুর কাছে জাতীয় সড়কের ধারে পান-বিড়ির দোকান রয়েছে বছর পঞ্চাশের ইনসানের। তাঁর দোকানের ঢিল ছোড়া দূরত্বে এক যুবককে গুলি করে খুন করার পর গাড়িতে চেপে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থল থেকে ১০-১৫ মিটার দূরে কোলাঘাট থেকে হাওড়াগামী বাসস্টপে তখন লোকজনের ভিড়। আচমকা এমন ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে তড়িঘড়ি ছুটে পালান বাসস্টপে দাঁড়ানো লোকজন। বোমার মতো আওয়াজ শুনে ছুটে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে এলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। খবর পেয়ে এরপরে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশি তদন্তে নিহতের সঙ্গে দুষ্কৃতী দলের যোগ ও বদলা খুনের তথ্য সামনে এলেও এমন ঘটনায় রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

ইনসানের কথায়, ‘‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে দোকান চালাচ্ছি। এরকম ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর থেকে সকলেই আতঙ্কে আছি।’’ স্থানীয় বড়িশা গ্রামের বাসিন্দা বাপ্পা সামন্ত বলেন, ‘‘এখানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা গিয়ে উদ্ধারকাজেও হাত লাগাই। এ সবে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজি ফাটার মতো শব্দ শোনার পরে প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। পরে ঘটনা জানতে পেরে গিয়ে দেখি এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এলাকায় এমন ঘটনায় লোকজনও ভয় পেয়ে গিয়েছে।’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভিন রাজ্যের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগের কারণে কোলাঘাট সেতু গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে পুলিশ নজরদারির অভাব রয়েছে। ভরসন্ধ্যায় জনবহুল বাসস্টপের কাছে যে ভাবে দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়ে একজনকে খুন করে পালিয়ে গেল তাতেই নজরদারি ফাঁকটা আরও প্রকট হয়েছে। অভিযোগ যে ফেলনা নয়, তার প্রমাণ কোলাঘাট সেতু থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে খড়গপুরের দিকে হলদিয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তায় নজরদারি ক্যামেরা নেই। ফলে কোনও দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটলে পুলিশের নজরে তা আসার আগেই অনেক দেরি হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়িচালক বা অপরাধে জড়িত দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগে পালাতে সক্ষম হয়।

স্থানীয় লোকজনের আরও অভিযোগ, হলদিয়া মোড়ের কাছে কোলাঘাট থানার পুলিশের গাড়ি প্রায় সব সময় থাকলেও তাদের টহল দিতে দেখা যায় না। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘গত শুক্রবার খুনের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে।’’

নজরদারি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কোলাঘাট সেতু থেকে হলদিয়া মোড় পর্যন্ত জাতীয় সড়কে নজরদারির ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি রয়েছে। ওখানে নজরদারি ক্যামেরা নেই। তবে শীঘ্রই ওই এলাকায় নজরদারি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Kolaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE