Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রং মিস্ত্রিকে ধরতেই ফাঁস খুনের ছক

প্রতিদিনের মতোই মাকে খাইয়ে কলেজে বেরোন তরুণ রায়। বাড়ির সামনের দরজা বন্ধই ছিল। সন্ধ্যায় পিছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে শিউড়ে ওঠেন তিনি। দেখেন দোতলায় ওঠার সিঁড়ির পাশে পড়ে রয়েছে বৃদ্ধা মার নিথর দেহ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

প্রতিদিনের মতোই মাকে খাইয়ে কলেজে বেরোন তরুণ রায়। বাড়ির সামনের দরজা বন্ধই ছিল। সন্ধ্যায় পিছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে শিউড়ে ওঠেন তিনি। দেখেন দোতলায় ওঠার সিঁড়ির পাশে পড়ে রয়েছে বৃদ্ধা মার নিথর দেহ। বাড়ির সব কিছু লণ্ডভণ্ড। জুগনুতলার ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় শহর মেদিনীপুরে।

ঘটনাটি ২০১২ সালের ১ মার্চের। বছর তিরাশির গীতাদেবীকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিত হয়, যে বা যারাই এই কাণ্ড করে থাকুক, তারা জানত বৃদ্ধা দুপুরে একাই বাড়িতে থাকেন। দুষ্কৃতীরা এও জানত, সামনের দরজা দিয়ে বেরোনোর সুযোগ না থাকলেও পিছনের দরজা দিয়ে বেরোনো যেতে পারে।

শুরুতে এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় শেখ কাজেম আলিকে। পরে একে একে গ্রেফতার করা হয় শেখ শেরিফ আলি ও শেখ আকবর আলিকে। ধৃতেরা সকলেই রং মিস্ত্রি। ধৃতদের বাড়ি মেদিনীপুরের হোসনাবাদে। পুলিশ সূত্রে খবর, কাজেমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই শেরিফ ও আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় খোওয়া যাওয়া মোবাইল, টেলিভিশন প্রভৃতি।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ধৃতেরা ওই এলাকার অন্য একটি বাড়িতে রং মিস্ত্রির কাজ করত। সপ্তাহ কয়েক ধরেই তাঁরা ওই বাড়ির উপর নজর রেখেছিল। জুগনুতলা এলাকায় তাদের যাতায়াতও ছিল। ওই যুবকেরা নেশাগ্রস্ত ছিল বলেও স্থানীয় সূত্রে খবর। নেশার জন্য টাকা জোগাড় করতেই ডাকাতির ছক কষে তাঁরা।

ঘটনাটা ঠিক কী ছিল?

ঘটনার দিন দুপুরে বৃদ্ধা বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন। তিন জন এসে তাঁকে বলে, তাঁরা রঙের কাজ করবেন। বৃদ্ধা জানিয়ে দেন, এখন ছেলে বাড়িতে নেই। পরে আসতে পারেন। এরপর বৃদ্ধার কাছে জল চান দুষ্কৃতীরা। জল আনতে গীতাদেবী ঘরের মধ্যে ঢুকলে ওই তিন জন দুষ্কৃতী তাঁর পিছু নেয়। বাড়ির সামনের দরজা বন্ধ করে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালাতে শুরু করে। বৃদ্ধাকে চেয়ারে দড়ি দিয়ে বেঁধে প্রায় ৭০ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল, টেলিভিশন, এমনকী জলের কল, জুতো নিয়েও পালায় তাঁরা। পরে ওই বৃদ্ধাকে খুনও করা হয়। প্রথমে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা হয়। পরে মাথায় কাঠ দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়।

প্রশ্ন ওঠে, দুষ্কৃতীরা যদি ডাকাতির উদ্দেশেই এসে থাকে, তাহলে ওই বৃদ্ধাকে খুন করল কেন? পুলিশের কাছে ধৃতেরা দাবি করে, ওই বৃদ্ধা চিত্‌কার করে প্রতিবেশীদের ডাকাডাকির চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় দুষ্কৃতীদের মনে হয়, তাঁরা ধরা পড়ে যেতে পারে। মেদিনীপুর আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণও হয়। ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর শেখ শেরিফ আলি ও শেখ আকবর আলির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়। শেখ কাজেম আলি ঘটনার সময় নাবালক ছিল। পরে অবশ্য কাজেম ছাড়া পেয়ে যায়।

মেদিনীপুর আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাজাপ্রাপ্তরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায়। বর্তমানে হাইকোর্টে মামলাটি চলছে। মাস কয়েক আগে আকবরও হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গিয়েছে। তরুণবাবু বলছিলেন, “ওই দিন আমার কলেজে যাওয়ার কথা ছিল না। জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় যেতে হয়। রোদটা চড়া ছিল। তাই মাকে বলেছিলাম, আজ আর দুপুরে বারান্দায় বসতে হবে না। সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলেও খারাপ লাগত না। কেন ওরা নৃশংস ভাবে মাকে খুন করল বুঝতে পারছি না।” মৃতার ছেলের কথায়, “মাকে নিয়ে আমি একাই এই বাড়িতে থাকতাম। মায়ের কথাতেই বছর কয়েক আগে নতুন বাড়ি তৈরি করি। মার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারিনি। এখন নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। সেদিনের কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারি না।’’

তিনি বলছেন, ‘‘ওঁদের একজন তো আবার মাস কয়েক আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গিয়েছে। কী ভাবে এটা হল বুঝতে পারছি না।” জুগনুতলার এই বাসিন্দা বলছেন, “আমি চাই না অন্য কারও সঙ্গে এই ঘটনা ঘটুক। কাউকে এ ভাবে প্রাণ হারাতে হোক।”

অন্য বিষয়গুলি:

murder plan special story crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy