Advertisement
E-Paper

প্যারোলে মুক্ত চন্দনের সৃষ্টি ‘করোনা মডেল’

চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগার থেকে প্যারোলে পাঁচ মাসের জন্য ছাড়া পান চন্দন। সাজা খাটার ফাঁকে ছুটি পেলেই মূর্তি বানানোর কাজ করেন তিনি।

বিশ্বসিন্ধু দে

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫৬
করোনা যোদ্ধাদের মডেল।

করোনা যোদ্ধাদের মডেল।

খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন তিনি। মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগার থেকে পাঁচ মাসের জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিলেন দাঁতনের সোনাকোনিয়ার বাসিন্দা চন্দন চন্দ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে হাতে কাজ ছিল না শিল্পী চন্দনের। উপার্জন না থাকায় সংসারেও টান পড়েছিল। তিনি বাড়ি ফিরে আসার পর স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ করেছিলেন এলাকার যুবকেরা। এরপরই করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে চন্দন বানিয়ে ফেলেছেন ‘করোনা মডেল’।

কী এই করোনা মডেল? চন্দনের সৃষ্ট মূর্তিদের কারও পরনে নার্সের পোশাক, কেউ আবার পুলিশবেশী। সকলের মুখে মাস্ক। পিছনের বোর্ডে লেখা করোনা সচেতনতার বার্তা। ঠিক এ ভাবেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছেন চন্দন। তাঁর সৃষ্ট এই মডেল এলাকার বেশ কয়েকজন যুবকের উদ্যোগে বসানো হয়েছে সোনাকোনিয়ার ওড়িশা-বাংলা সীমানা এলাকায়। শিল্পী হিসেবে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে চন্দনের। মূলত মাটির মূর্তি গড়েন, ছবিও আঁকেন তিনি। দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, গণেশ, বিশ্বকর্মার মূর্তি বানান অনায়াসে। কলকাতাতেও জোগান যায় তাঁর তৈরি মূর্তি। চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগার থেকে প্যারোলে পাঁচ মাসের জন্য ছাড়া পান চন্দন। সাজা খাটার ফাঁকে ছুটি পেলেই মূর্তি বানানোর কাজ করেন তিনি। মেদিনীপুরে একটি ঘর ভাড়া নিয়েই এই কাজ করেন। সোনাকোনিয়ার যুবক স্বপন জানা বলেন, ‘‘চন্দন দাদা বাড়িতে আসার পর এলাকার মানুষকে সচেতন করতে কিছু একটা বানানোর আর্জি জানাই। তিনি মডেলগুলি বানিয়েও দেন। খুব গুণী মানুষ।’’

প্যারোল-পর্ব শেষ হলে গত ২১ সেপ্টেম্বর সংশোধনাগারে ফিরে গিয়েছেন তিনি। সেখানে গিয়েও থেমে থাকেননি চন্দন। সংশোধনাগারের ভিতরেও কাজ চালাচ্ছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এ বারের প্যারোল-পর্বে তিনটি গণেশ মূর্তি এবং ১৮টি বিশ্বকর্মার মূর্তি গড়ছেন তিনি। চন্দনের কথায়, ‘‘করোনায় যাঁরা নিরন্তর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সম্মান জানিয়েছি। এখন প্রায় ৩০টি লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। অনেক আগে থেকেই কুমোরটুলিতে কাজ শিখেছিলাম। পরে আলিপুর জেলে থাকার সময় আরও প্রশিক্ষণ পাই।’’

যাবজ্জীবন সাজা পেলেন কী ভাবে? চন্দন জানাচ্ছেন, ২০০০ সালে ২৬ বছর বয়স ছিল তাঁর। সেই সময় একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয় তাঁর নামে। গ্রামের অনুষ্ঠানের জন্য ‘অগ্নিশিশু ক্ষুদিরাম’ নাটকের মহড়া চলছিল। মহড়ার সময় একটি ধারাবাহিকের নকল করতে গিয়ে মৃত্যু হয় ১২ বছরের এক বালকের। শিশুটির পরিবারের কেউ চন্দনের নামে অভিযোগ না করলেও, শিশুর মামা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চন্দন, তাঁর স্ত্রী এবং বোনের নামে। মামলায় চন্দনের স্ত্রী, বোন ছাড়া পেলেও তিন বছর পর ২০০৪ সালে চন্দনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। সেই থেকেই টানা ১৭ বছর ধরে সংশোধনাগারেই কাটছে চন্দনের জীবন। তিনি বলছিলেন, ‘‘পুরনো কথা আর ভাবতে চাই না। কবে ছাড়া পাব জানি না। বাকি জীবনটা শিল্পের কাজে যুক্ত থেকে কাটিয়ে দিতে চাই।’’

Coronavirus COVID-19 Corona
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy