Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

ফলনে বাড়াতে জোর নয়া জাতের ধান চাষে

পরিবর্তনই নিয়ম। পরিবর্তনে সাফল্য। ধান চাষেও লাগু এক কথা। একই জাতের ধান বছরের পর বছর না লাগিয়ে, পরীক্ষাগারে উদ্ভূত নতুন জাতগুলি চাষ করার উপরে তাই জোর দিচ্ছে রাজ্য কৃষি দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

পরিবর্তনই নিয়ম। পরিবর্তনে সাফল্য। ধান চাষেও লাগু এক কথা। একই জাতের ধান বছরের পর বছর না লাগিয়ে, পরীক্ষাগারে উদ্ভূত নতুন জাতগুলি চাষ করার উপরে তাই জোর দিচ্ছে রাজ্য কৃষি দফতর। স্বর্ণমাসুরী, আম্রপালী, ধনরাজদের বদলে ধীরেন, পুসা বাসমতী, কৌশল্যা, পুষ্পদের মতো আরও কিছু নতুন জাতের বীজ বিলি করা হচ্ছে চাষিদের। সরকারি কৃষি খামারে চলছে নতুন জাতের ধান চাষ।

Advertisement

কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একই মাটি ও জলবায়ুতে বছরের পর বছর এক জাতের চাষ করলে ফলন কমতে বাধ্য। উল্টে রোগ-পোকার আক্রমণ বাড়ে। তখন চাষিরা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা মাটির স্বাস্থ্যের পক্ষে আরও ক্ষতিকর। তাই ফসলে বৈচিত্র না রাখতে পারলে অন্তত জাতে নতুনত্ব আনা জরুরি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইতিমধ্যেই চাষিদের চিহ্নিত করে পাঁচ কেজি করে নতুন জাতের ধান বীজ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। চাষিরা অন্য জাতের পাশাপাশি নতুন জাতের ধান চাষ করবেন ১০ কাঠা করে। এছাড়া জেলা কৃষি দফতরের পিংলা ও ক্ষীরপাইয়ের খামারে চাষ করা হবে।

জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) শুভেন্দু মণ্ডল জানান, বর্তমানে যে সব জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে, তাতে খুব ভাল ফলন হলে হেক্টর প্রতি ৫ টন মেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেক্টর প্রতি ৪ টন থেকে সাড়ে ৪ টনে আটকে যায়। কিন্তু ওড়িশার কটকে অবস্থিত ন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণাগারে তৈরি নতুন প্রতিটি জাতেই ৫ টন থেকে সাড়ে ৫ টন ফলন হয়েছে। তাঁর কথায়, “যে সব জাতের ধানে ১১০ দিনে ফসল তোলা যায় তাতেও ৪ টন থেকে সাড়ে ৪ টন ফলন হয়েছে পরীক্ষাগারে। বর্তমানে আমাদের জেলায় যে জাতের ধান চাষ হয় সেগুলি ১৩০-১৪০ দিন সময় নেওয়ার পরেও অত ফলন দেয় না।” তবে পরীক্ষাগার আর চাষির নিজের জমিতে চাষ এক নয়। শুভেন্দুবাবুর কথায়, “পরীক্ষাগারের বাইরে চাষিদের ক্ষেতেও ওই ফলন হয় কি না দেখার জন্য চলতি বছরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এই জেলার মাটিতে কোন জাতের ফলন ভাল হয় দেখা যাক।” ফলন কেমন হয়, দেখার জন্য উন্মুখ চাষি। চন্দ্রকোনার চাষি উত্তম মণ্ডল বছর কুড়ি ধরে আম্রপালী আর ধনরাজ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিঘা প্রতি ৮ কুইন্টাল ধান ফলাতে হিমশিম অবস্থা। খরচ হয়ে যায় প্রায় হাজার দশেক টাকা। আমরা আর নতুন জাত কোথায় পাব? এখন সরকার দিচ্ছে। ভাল ফলন হলে খুশির কথা। আগামি বছর থেকে এই জাতের চাষ করব।” শ্রীনগরের চাষি বিমান হাজরা বছর পনেরো ধরে ধনরাজ চাষ করছেন। বিঘা প্রতি ৮ কুইন্টাল ফলন হয়। এবার নতুন জাতে ফলন বাড়বে বলে আশা করছেন তিনিও। ফলন বেশি ছিল বলেই পুরনো দিনের ধানের জাতগুলিকে সরিয়ে এক দিন জায়গা করে নিয়েছিল স্বর্ণমাসুরি, ধনরাজেরা। তাদের পরিবর্তে সুজলা, পুষ্প, কৌশল্যারা চাষিদের মন কতটা জয় করতে পারবে, সেটাই দেখার।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.