Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Paddy

Paddy: সরকারি ধান ক্রয় শূন্য, দাপট ফড়ের

ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ৯টি স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্র (সিপিসি) রয়েছে। আর্থিক বর্ষে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১৯৪০ টাকা।

বেলিয়াবেড়া ব্লকের তেঁতুলডাংরা গ্রামে ধান কিনছে ফড়েরা।

বেলিয়াবেড়া ব্লকের তেঁতুলডাংরা গ্রামে ধান কিনছে ফড়েরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

খাতায়-কলমে সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। কিন্তু কুড়ি দিনেও ঝাড়গ্রাম জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার পরিমাণ শূন্য। ঝাড়গ্রামের কিসান মান্ডিতে ধান কেনা শুরু হয়নি বলে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। তবে ধান কাটা শুরু হতেই জেলা জুড়ে ফড়েদের দাপট চলছে। বাধ্য হয়ে ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।

বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের আস্তি গ্রামের কমল মাহাতো নামে এক চাষি কিসান মাণ্ডিতে গিয়েছিলেন। কমলের দাবি, ‘‘কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রির জন্য গিয়েছিলাম। আধকিারিক জানিয়ে দেন, ধান কেনা শুরু হতে এখনও এক মাস সময় লাগবে। এখন শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে।’’ বৃহস্পতিবারই কমল জেলাশাসকের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কমল বলেন, ‘‘ধান জমিতে শোষক পোকা লেগে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে মেশিন দিয়ে ধান কেটে নিতে হচ্ছে। কিন্তু কিসান মান্ডিতে ধান কিনছেন না। তাহলে ধান কোথায় রাখব? মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের কথা ভেবে ধানের দাম বাড়ালেও সরকারের একাংশ আধিকারিকই ফড়েদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।’’ শুক্রবার বেলিয়াবেড়া ব্লকে মহুলি, তেতুলডাঙা গ্রামে গিয়েও দেখা গেল চাষিরা ধান কাটার পরই ফড়েদের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। গ্রামের মধ্যেই বস্তায় ওজন হয়ে লরিতে করে ধান বাইরে চলে যাচ্ছে। চাষিরা ফড়েদের কাছে কুইন্টাল প্রতি ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ৯টি স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্র (সিপিসি) রয়েছে। আর্থিক বর্ষে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১৯৪০ টাকা। আর স্থায়ী ধান্যক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করলে উৎসাহ ভাতা হিসেবে কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা বেশি পাবেন। অর্থাৎ চাষি ধান্যক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম পাবেন ১৯৬০ টাকা। চলতি আর্থিক বছরে জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। খাদ্য দফতরের দাবি, জেলায় ধান কাটা এখনও শুরু হয় নি। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা উল্টো। ধান কাটার পরে জমি থেকেই তা কিনে নিচ্ছে ফড়েরা। এই ফড়েদের অধিকাংশ আবার সিপিসিতে গিয়ে চাষিদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে সরকারকে ধান বিক্রি করেন অভিযোগ। এ দিন বেলিয়াবেড়া ব্লকের তপসিয়া পঞ্চায়েতের তেতুলডাংরা গ্রামের হরিমঞ্চের সামনে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছিল ফড়েরা। মানিকচাঁদ ঘোষ নামে এক চাষি বললেন, ‘‘৮০ বস্তা ধান বিক্রি করেছি কুইন্টাল প্রতি ১১৮০ টাকায়। হাতে হাতে টাকা পাচ্ছি। কোনও ঝামেলা নেই।’’ স্বপন ঘোষ নামে আরেক চাষিরও বক্তব্য, ‘‘অনেকে এখানে ধান বিক্রি করছে। হাতে হাতে টাকা পাচ্ছে। আমিও অধিকাংশ ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’’

ঝাড়গ্রাম ব্লকের আস্তি গ্রামেও দেখা গেল একই চিত্র। গ্রামের মাঝে ফড়েরা কিনছে ধান। আস্তি গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু মাহাতো জানালেন, ‘‘কিসান মান্ডিতে আমার দাদা গিয়েছিল ওরা এখন নেবে না বলছেন। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই ধান রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে ১১০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল বিক্রি করতে হচ্ছে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা খাদ্য নিয়ামক মিঠুন দাস বলেন, ‘‘ওই চাষি ধান নিয়ে আসেননি। ধান নিয়ে এলে আমরা কেনার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তবে ধান তো এখনও ওঠেনি।’’ জেলাশাসক অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা ফড়েদের ঠেকানোর চেষ্টা করছিলাম। কৃষি ও খাদ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলছি। কোথায় কোথায় ধান সরকারি ভাবে কেনা হবে তা প্রচার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE