Advertisement
E-Paper

বাড়ি থেকে আসছে পথ্য, প্রশ্নে খাদ্যগুণ

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের যে খাবার দেওয়া, তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন বহু রোগীই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের রান্নাঘর চত্বর। নিজস্ব চিত্র

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের রান্নাঘর চত্বর। নিজস্ব চিত্র

দুপুরে দেওয়া খাবারের ঢাকা খুলে চমকে গিয়েছিলেন মধ্য বয়স্ক এক মহিলা রোগী। ওই খাবারের মধ্যে ছিল মেরেকেট ১৫০ গ্রাম ওজনের ভাত। ছোট একটি বাটিতে সামান্য আনাজের তরকারি এবং ডাল। আর এক টুকরো মাছের ভাজা। অভিযোগ, সেই আনাজের তরকারি এবং ডালে জলের পরিমাণই ছিল বেশি। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুতাহাটার হরিবল্লভপুরের ওই মহিলার জন্য শেষমেশ বাড়ি থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা করেন তাঁর পরিজনেরা।

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের যে খাবার দেওয়া, তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন বহু রোগীই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে— দুপুরে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সাড়ে ৪৫০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম মুসুর বা মুগ ডাল, আনাজের তরকারি ২২৫ গ্রাম এবং ৫০ গ্রামে মাছ। এছাড়া, সকালে জল খাবারে ২৫০ মিলিলিটার দুধ, ৫০ গ্রাম পাউরুটি, একটি ডিম সেদ্ধ এবং খেজুর বা কলা দেওয়ার কথা। রাতের খাদ্য তালিকায় রয়েছে— ভাত, ডাল, আনাজের তরকারি এবং ডিম সেদ্ধ। কিন্তু হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে জল খাবারে খেজুর বা কলা কোনওটাই জোটে না বলে অভিযোগ রোগীদের।

একাধিক রোগীর পরিবারের অভিযোগ, মাছের যে ঝোল দেওয়া হয়, তার মাছ ‘নরম’ হয়ে যায়। এক রোগীর মা আমিনা বিবি বলেন, ‘‘এত কম খাবারে কি আর পেট ভরে! তাই হলদিয়ার বাজিতপুরে বাড়ি থেকে খাওয়ার আনানো হয়েছে।’’ কিছু রোগীর পরিবার জানাচ্ছে, খাবারের গুণমান নিয়ে মাঝে মধ্যেই হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়।

সম্প্রতি হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে দেখা গেল, রান্নাঘার মোটামুটি পরিষ্কার। তবে কর্মীরা বাইরের জুতো পরে অনায়াসেই রান্নাঘরে ঢুকছেন। ভেতরে ঢুকছেন। সেখান হাজির কর্মীরাই জানালেন, মোট ১১ জন কাজ করেন। কিন্তু ওই সব কর্মীদের স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়টি চোখে পড়েনি। কারও মাথায় টুপি বা হাতে গ্লাভস পরা ছিল না। ফলে খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর ভাবে তৈরির হচ্ছে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অতনু সিংহ নামে হাসপাতালের ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘ক্যান্টিন অনেকটাই পরিষ্কার। পরিচ্ছন্নভাবে পরিমাণ মত খাওয়ার দেওয়া হয়। পোষাক বিধি এবং মাছ নিয়ে কোনও অভিযোগ ঠিক নয়।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রোগীর তিনবেলা খাবারের জন্য ৫৬ টাকা ৪৯ পয়সা বরাদ্দ করা হয়। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে গড়ে ১২৫ জন রোগীকে খাওয়ার দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অতনু বলেন, ‘‘দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির বাজারে এত কম টাকায় তিনবেলা রোগীদের খাওয়ার দিতে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।’’ ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মাথাপিছু বাড়তি অর্থ বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনিক স্তরে বহুবার বলেছি। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’

রোগীদের খাবার দেওয়া এবং ক্যান্টিনের পরিবেশ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ মানতে রাজি নন মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুমনা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘নিয়মিত খাবার তদারকি করা হয়। স্বাস্থ্য বিধিও সময় মত মেনে চলা হয়।’’ কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে রোগীর পরিজন তো বাড়ি থেকে খাবার আনছেন— এ তো হাসপাতালের নিয়ম বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সুপার বলেন, ‘‘বাইরের থেকে খাবার এনে খাওয়ানো হচ্ছে, ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাইরে থেকে আনা খাবার রোগীর পরিজনেরাই খান।’’

Health Haldia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy