Advertisement
E-Paper

বাবার ট্রাই সাইকেলে চড়েই উচ্চ মাধ্যমিকে পূর্ণিমা 

সমাজ মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বাবা-মেয়ের সেই লড়াইয়ের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০৫:২৪
 পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে। ছবি: সমাজ মাধ্যম সৌজন্যে

পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে। ছবি: সমাজ মাধ্যম সৌজন্যে

অর্থের অভাবে নিজের পড়াশোনা হয়নি। কিন্তু পড়াশোনার মর্ম বোঝেন। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ট্রাইসাইকেলে মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন কোলাঘাটের সহদেব।

সমাজ মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বাবা-মেয়ের সেই লড়াইয়ের ছবি। তার পরেই তাঁদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরী এলাকার মেশাড়া গ্রামের বাসিন্দা সহদেব কর জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তাঁর দুই পা সোজা হয় না। লাঠির সাহায্যে হাঁটুর উপর ভর করে চলেন সহদেব। আর তা না হল ভরসা ট্রাই সাইকেল। সেই সাইকেলেই মেয়ে পূর্ণিমাকে চাপিয়ে তিনি পাঁচ কিলোমিটার দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরী বাজারের কাছে সহদেবের একটি পানের দোকান রয়েছে। ঝুপড়ি বাড়িতে ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। স্ত্রী নমিতা সংসার সামলান। দিনমজুরিও করেন। অর্থের অভাবে পড়াশোনা হয়নি সহদেবের। তাই দারিদ্র সঙ্গে লড়াই করেও ছেলে রঞ্জিত এবং মেয়ে পূর্ণিমাকে পড়াচ্ছেন। ছেলে মাধ্যমিক দিয়েছে। পূর্ণিমা মেচেদার গোপালগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্রী। এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। পূর্ণিমার পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ি থেকে পাঁচ কিমি দূরে হাকোলা হাইস্কুলে।

পরীক্ষার দিনগুলিতে বাবার ট্রাইসাইকেলে চড়েই কেন্দ্রে যাচ্ছে পূর্ণিমা। তার বক্তব্য, বাবা তার জীবনের বড় ভরসা। তাই পরীক্ষার দিনগুলোতে সে বাবার সঙ্গে কেন্দ্রে যাচ্ছে। পূর্ণিমা জানাচ্ছে, বাসে করেও হাকোলা হাইস্কুলে যেতে পারে সে। কিন্তু বাবার বাসে উঠতে কষ্ট হয়। তাই সে বাবার সঙ্গেই ট্রাই সাইকেলে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে।

উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। দু’দিনই ট্রাইসাইকেলের পিছনে মেয়েকে বসিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছেন সহদেব। কেন্দ্রের বাইরে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে একই ভাবে বাড়ি ফিরেছেন বাবা-মেয়ে। পূর্ণিমার কথায়, ‘‘জানি এভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র যেতে বাবার কষ্ট হয়। তবে বাবা সঙ্গে থাকলে মনে ভয় থাকে না। আর বাবাও কোনও দিন আমাদের নিজের কষ্ট বুঝতে দেয়নি। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে বাবার পাশে দাঁড়ানোই আমার লক্ষ।’’

শুধু মেয়ের জন্য যে সহদেব এভাবে লড়ছেন, তা নয়। ছেলে রঞ্জিতের পাশেও তিনি রয়েছেন একই ভাবে। রঞ্জিতকে মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেন তাদের এক পরিচিত। কিন্তু পরীক্ষার দিনগুলিতে বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের ওই কেন্দ্রে ট্রাই সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যেতেন সহদেবও। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা হিসাবে ছেলেমেয়ের প্রতি একটা কর্তব্য তো রয়েছে। আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকলে মেয়ে মনে ভরসা পায়। নিজে পড়াশোনার সুযোগ পাইনি। ওঁদের পড়াশোনার জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই পারি!’’

Exam Kolaghat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy