কলকাতা হাই কোর্ট।
আন্দোলন ও ধর্না করেও সরানো যায়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটেছে। এবার নারায়ণগড়ের বিডিওকে সরাতে হাই কোর্টে মামলা করলেন সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সদস্যদের একাংশ।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ওই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসনিক মহলের একটি অংশের দাবি, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বিডিও কৃশানু রায় এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, সরকারি টাকার ভাগে রাশ পড়েছে। তাই বিডিওকে সরানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, "আদালতের অর্ডার কিছু পাওয়া যায়নি। এলে তারপর দেখা হবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।" তাঁর সংযোজন, "অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন। সেখানে কিছু বাধা নেই। অভিযোগের সত্য-মিথ্যা তদন্ত করে দেখা হবে। তারপর যা হওয়ার হবে।"
গতবার ওই পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল পরিচালিত ছিল। এবারও সমিতির ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪৬টিই পেয়েছে তৃণমূল। তারপরেও এমন সংঘাতের কারণ কী? ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের দাবি, বিডিও তাঁদের সহযোগিতা করছেন না। তিনি ভুয়ো বিল বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সমিতিকে না জানিয়ে নানা সামগ্রী কেনা হয়েছে। সেইসব কাজের ‘আরটিআই’ চাইলেও তিনি দেননি। চলতি বছরের ১৫ মে একই অভিযোগ এনে বিডিওর চেম্বারের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার হল মামলা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ২০ জুলাই ওই মামলা রুজু হয়েছে। ৩১ জুলাই শুনানি হওয়ার কথা। মূল পিটিশনার নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির সদ্য বিদায়ী শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অনাদি বারিক। এছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি নমিতা সিংহ, সহকারী সভাপতি গণেশ মাইতি, বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তথা নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার জানা, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ কাওসার আলি-সহ সাতজন কর্মাধ্যক্ষ আছেন। পিটিশনারদের মধ্যে গণেশ বাদে সকলেই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। গণেশ জিতেছেন জেলা পরিষদে। এই মামলায় যুক্ত হয়েছেন ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানেরাও। হাই কোর্টে মামলা করলেও মূল পিটিশনার অনাদি অবশ্য মুখে কিছু বলতে চাইছেন না। নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুকুমারের আবার দাবি, আদালতের বিষয়টি তাঁর জানা নেই! পিটিশনারদের আইনজীবী সৌমেন দত্ত অবশ্য বলেন, "বিডিওর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। প্রধান ও কর্মাধ্যক্ষেরা অভিযোগ এনেছেন। আদালতের কাছে তদন্ত চেয়ে আইনি পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছি।"
নারায়ণগড় ব্লকে এক সময়ে এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল তীব্র ছিল। একদিকে ছিলেন সূর্যকান্ত অট্টের অনুগামীরা। অন্যদিকে, মিহির চন্দের অনুগামীরা। এখন অবশ্য দুই নেতার অনুগামীরা এক। শুধু ধর্না, মামলাই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের পরের দিন থেকে নারায়ণগড়ের বিডিওর অফিসের গাড়িটিকেও আসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পুরো বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। এর আগে ওই বিডিও-র নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে প্রশাসনিকস্তরে দরবার করেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস, সংক্ষেপে ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকেও সংঘাত মেটানোর একাধিক পদক্ষেপ হয়। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ঘটনাপ্রবাহ যে ভাল দিকে যাচ্ছে না তা মানছেন জেলা তৃণমূলের একাংশও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, "বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও সবপক্ষকে নিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখব। প্রশাসন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলাটা সামাজিক সুস্থতার লক্ষণ। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন। সেটার জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হবে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy