Advertisement
E-Paper

নালার পাশে রোগীর রান্না মেডিক্যালে

সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাচ্ছেন রোগীরা। ভর্তি থাকাকালীন কেমন খাবার খাচ্ছেন তাঁরা? রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না হয় তো? মেডিক্যাল, সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল— রান্নাঘরে উঁকি দিল আনন্দবাজার। মেডিক্যালের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে নিকাশি নালা। নিয়মিত সাফাই হয় না। ঘরটাও জীর্ণ। পলেস্তারা খসে পড়ছে। মেঝেতে ফাটল ধরেছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
মেদিনীপুর মেডিক্যালের রান্নাঘর। নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুর মেডিক্যালের রান্নাঘর। নিজস্ব চিত্র

শয্যাসংখ্যা ৫৬০। রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৭৫০ জন। প্রত্যেকের জন্যই রান্না হয় জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। রান্না তো হয়। কিন্তু সুরক্ষাবিধি স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় কি?

মেডিক্যালের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে নিকাশি নালা। নিয়মিত সাফাই হয় না। ঘরটাও জীর্ণ। পলেস্তারা খসে পড়ছে। মেঝেতে ফাটল ধরেছে। সেখানেই কাটা হয় আনাজ। রান্নাঘরে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তো নেই, অভিযোগ, ন্যূনতম সুরক্ষা বিধিও অনেকসময় মানা হয় না। সিলিন্ডার, আভেন ঠেসাঠেসি করে রাখা থাকে। রান্নাঘরের সমস্যার কথা মানছেন হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘ঘরটা অনেক পুরনো। কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো অজানা নয়। সমাধানে পদক্ষেপ করা হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘ওই ঘর সংস্কার করা হবে।’’ বহু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে? সুপারের আশ্বাস, ‘‘নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

সম্প্রতি খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আধিকারিকেরা। হাসপাতালের রান্নাঘরে ঢুকে বিরক্ত হন তাঁরা। নির্দেশ দেন, নজর দিতে হবে হাসপাতালের হেঁশেলে। জেলার হাসপাতালগুলির রান্নাঘরের কী হাল, সুলুকসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এল করুণ ছবি। ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রান্নাঘর খোলা হয়নি। অদূরে গ্রামীণ হাসপাতালের ভাঙা সেপটিক ট্যাঙ্কের ধারে ছোট ঘরে চলে রান্না। মূলত স্বনির্ভর দল এই রান্নার কাজের দায়িত্বে রয়েছে। কার্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘুপচি ঘরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলে রান্না। স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই নেই। একসঙ্গে তিন-চারজন মিলে ছোট ঘরে রান্নার কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয় না বলে স্বীকারও করেন ওই স্বনির্ভর দলের মহিলারা। এমনকী, গ্যাস সিলিন্ডার নয়, এখনও পর্যন্ত ওই ঘরের মধ্যে মাটির উনুনে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না হয়। ধোঁয়ায় ভরে থাকে ঘর। হাতে গ্লাভসের বালাই নেই। ঘাটাল হাসপাতালের রান্নাঘরের পরিবেশও খারাপ। মেঝেতে আনাজ কাটা হয়। নামী কোম্পানির তেল ও মশলায় রান্না করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। রোগীদের অবশ্য খাবার নিয়ে অভিযোগ নেই। হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খাবার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’ হাসপাতালের রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না? পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘রান্নাঘরের মানোন্নয়নের সব রকম চেষ্টা হবে। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মর্গের ২০ মিটার দূরে রান্নাঘর। রান্নাঘরের এক পাশে মর্গ, অন্যপাশে মেডিক্যাল ওয়েস্ট জমিয়ে রাখার ঘর (কমন কালেকশন সাইট)। রান্নাঘরটি প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো। দেড় হাজার বর্গফুটের রান্না ঘরটির আধুনিকীকরণ হয়নি। এখনও মেঝে ও দেওয়াল অসমান কংক্রিটের।

রান্না ঘরের ভেন্টিলিটর ও জীর্ণ ছাদ দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে বলে জানালেন এক রাঁধুনি। রান্নাঘরে কাজ করেন খাবার সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ১৫ জন কর্মী। তাঁদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি শৌচাগার। এমনই হেঁশেলে রোগীদের জন্য রান্না হচ্ছে। দিনের পর দিন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা।

Health Hygiene
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy