Advertisement
E-Paper

রূপ ফিরবে ঠিক, আশায় খাঁন্দারানি

পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির খাঁন্দারানি আদতে একটি ঝিল। যাকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে পাহাড় আর শাল-মহুয়ার জঙ্গল। চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জায়গাটি ঘিরে পর্যটনের ভাবনা-চিন্তা শুরু করে প্রশাসন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
প্রতীক্ষায়: এখন খাঁন্দারানি। নিজস্ব চিত্র

প্রতীক্ষায়: এখন খাঁন্দারানি। নিজস্ব চিত্র

তাকে নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় খাঁন্দারানি ভেবেছিল বোধহয় এ বার কপাল ফিরল তার। তার সাজগোজ দেখে মুখ ফেরাতে পারবে না কেউ। কিন্তু খাঁন্দারানির সেই আশা কবে মিটবে তা প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির খাঁন্দারানি আদতে একটি ঝিল। যাকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে পাহাড় আর শাল-মহুয়ার জঙ্গল। চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জায়গাটি ঘিরে পর্যটনের ভাবনা-চিন্তা শুরু করে প্রশাসন। ঠিক হয়েছিল, রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের বরাদ্দে সেখানে পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। থাকবে পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা, পানীয় জল প্রকল্প, উপযুক্ত শৌচাগার, ঝিলের পাখি দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ার, জঙ্গলপথে ট্রেকিং রুট। এমনকী ‘হোম স্টে’ ট্যুরিজমও। ঠিক হয় ওই এলাকায় রাস্তার সংস্কারও করা হবে। কিন্তু বাদ সাধে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ। ফলে খাঁন্দারানির রূপ কবে ফিরবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি অবশ্য জানিয়েছেন, খাঁন্দারানির সৌন্দর্যায়নে বন দফতরের উদ্যোগে পরিকাঠামো উন্নয়নে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। সেই মতো ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য বন দফতরের কাছে অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের জন্য পাঠানো হবে।”

তাহলে প্রথমে আপত্তি উঠেছিল কেন?

ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশের কথা ভেবে সেখানে কংক্রিটের পাকা কাঠামো তৈরি নিয়ে আপত্তি করা হয়েছিল। যদিও পরে এ নিয়ে বিবেচনার প্রশ্নে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিবেশ বাঁচিয়ে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখেই পর্যটকদের স্বার্থে কী ভাবে খাঁন্দারানিকে সাজিয়ে তোলা যায় সে বিষয়েই চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

তিনদিক পাহাড়ে ঘেরা খাঁন্দারানির কাছে বছরভর পরিযায়ী পাখি ও বালিহাঁসের আনাগোনা লেগেই থাকে। ঝিলে স্নান করা নিষিদ্ধ। এলাকায় বনভোজন ও মাইক বাজানো বন্যপ্রাণ আইন বিরুদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও শীতের মরসুমে ঝিল চত্বরে অবাধে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে বনভোজন ও হুল্লোড় চলে। চলে ঝিলে নমে স্নান। পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া থার্মোকলের থালা, প্ল্যাস্টিকের বাটি-গ্লাস পড়ে থাকে ইতিউতি। শীতে প্রচুর পর্যটক খাঁদারানিতে আসেন। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। পাশাপাশি নজরদারির অভাবে এলাকাটি দিন দিন অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি শৌচাগার অবশ্য তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে জলের বন্দোবস্ত নেই। শৌচাগারের দরজাও উধাও। ঝিলে স্নান করা, মাইক বাজানো ও প্লাস্টিক নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিডিও’র দেওয়া বিজ্ঞপ্তি উল্টে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা অভিরাম সিংহ, দশরথ সিংহ বলেন, ‘‘এখানে বিশ্রামের জায়গা না থাকায় পর্যটকেরা এসে সমস্যায় পড়েন।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা ঝাড়খণ্ড পার্টির শেফালি মুণ্ডা বলেন, “দোমোহনি পিচ রাস্তা থেকে খাঁন্দারানি যাওয়ার পাঁচ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। পর্যটকদের গাড়ি নিয়ে আসতে সমস্যা হয়। অনেক সময় গাড়ি ও বাস রেখে পর্যটকরা ও পিকনিক পার্টির লোকজনকে হেঁটে আসতে হয়। অথচ এত সুন্দর প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের কোনও উন্নতিই হচ্ছে না।”

বেসরকারি পর্যটন সংস্থা ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’ এর কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘খাঁন্দারানি যাওয়ার রাস্তা বেশ খারাপ। ঝিল চত্বরে পর্যটকদের জন্য কোনও পরিকাঠামোও নেই। অথচ প্রশাসন তৎপর হলে এলাকাটি বেলপাহাড়ির অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।”

বেচারি খাঁন্দারানি। কপাল ফিরবে কবে আশায় দিন গুনে চলে।

Khandarani lake Reconstruction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy