বিস্ফোরণে উড়ে গেছে বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
এগরার খাদিকুলে গত মে মাসে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে অক্টোবর মাসে পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতায় বাজি বিস্ফোরণে মারা যান দু'জন। রাজ্যে লাগাতার বাজি বিস্ফোরণে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে এক গুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেইমত সরকারি উদ্যোগে এবার রাজ্যে গড়ে উঠতে চলেছে সবুজ বাজির ক্লাস্টার।
পূর্ব মেদিনীপুরের দু'জায়গায় সবুজ বাজির হাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেআইনি বাজি কারখানার সাথে যুক্ত শ্রমিক ও মালিকদের সরকারি সবুজ বাজির ক্লাস্টারে কর্ম সংস্থানের সুযোগ থাকছে। কিন্তু বাজির ক্লাস্টার করে আদৌ বেআইনি বাজি কারবারে রাশ টানা যাবে কি না উঠছে সেই প্রশ্ন!
গত বুধবার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের চার জেলায় সবুজ বাজির ক্লাস্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেন। পূর্ব মেদিনীপুরে কয়েক হাজার মানুষ বাজি তৈরির সাথে যুক্ত। এখানকার বাজি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হত। কিন্তু অধিকাংশই ছিল বেআইনি। এগরার খাদিকুলের ঘটনার পর জেলা জুড়ে বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। খাদিকুলের ঘটনায় সরকারি ভাবে সবুজ বাজি তৈরি ও মজুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বুধবার তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরই মধ্যে দত্তপুকুরে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় ফের আরও একবার বেআইনি বাজির কারবার নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
সবুজ বাজির কারখানা গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে মহিষাদলের চিঙ্গুড়মারীতে ৪ একর সরকারি জায়গা দেখেছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। তৈরি হওয়া সবুজ বাজি মজুত করার জন্য কোলাঘাট রূপনারায়ণ নদ সংলগ্ন একটি সরকারি ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজী বলেন, "মহিষাদল এবং কোলাঘাটে সবুজ বাজির হাব গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতদিন যাঁরা বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করতেন তাঁদের সরকারি সবুজ বাজির ক্লাস্টারে কাজ দেওয়া হবে।’’
জেলার পুলিশসুপার অমরনাথ কে বলেন, "বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে জেলাজুড়ে পুলিশি অভিযান অব্যাহত। যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে তাদের নবীকরণের জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও জেলায় বাজির হাব গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল এভাবে বেআইনি বাজি তৈরি বন্ধ করা যাবে তো! কারণ বেআইনি বাজি কারখানায় স্থানীয় শিশু ও মহিলারা কাজ করে। বাড়ি থেকে দূরে সরকারি কারখানায় তারা আদৌ কাজ করতে আসবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধুয়াপোতা বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত অতনু ভক্তা বলেন, "সরাকরি বাজি হবে প্রকৃত ব্যবসায়ী যাঁরা তাঁরা যাবেন। কিন্তু শ্রমিকরা খুব বেশি আগ্রহী হবে বলে মনে হয় না।’’ দ্বিতীয়ত সরকারি কারখানায় কাজ করে বাজির কারবারিরা কি আগের মতো আর্থিকভাবে লাভবান হবেন? অনেকেই বলছেন, সরাকরি উদ্যোগে বাজি কারখানা তৈরির নজির পূর্বে নেই। সেটা কী ভাবে বাস্তবায়িত করা হবে তার কোনও স্পষ্ট দিশা নেই সরকারের তরফে।
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে বাজি শ্রমিক ও কারবারিদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আতসবাজি প্রস্তুতকারকদের মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স নবীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণত আতস বাজির কারবারিরা নিজের এলাকায় আত সবাজি তৈরি করেন। আতসবাজি তৈরির লাইসেন্সকে ঢাল করে স্থানীয় প্রশাসনকে হাতে রেখে চলে শব্দবাজি তৈরি। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছেই। বিষয়টি নিয়ে সরব পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটি। সংগঠনের উপদেষ্টা নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, "সবুজ বাজির সংজ্ঞা কী, আগে রাজ্য সরকার সেটা ঠিক করুক। সবুজ বাজির নামে শব্দবাজি বিক্রি হলে তার দায় কে নেবে? ক্লাস্টার তৈরির পাশাপাশি বেআইনি বাজি কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। বাড়াতে হবে পুলিশি নজরদারি। তবেই বাজি বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় রাশ টানা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy