E-Paper

ফের কি মাফিয়ারাজ! অতীতকেই ভয়

নিজেকে রেলশহরের ‘ত্রাতা’ দাবি করলেও রামবাবু ছিলেন তখন খড়্গপুরের ‘ত্রাস’। মানস, গৌতম ছাড়াও একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৬:৫৭
মেদিনীপুর আদালতের কোর্ট লক আপ থেকে পুলিশের গাড়িতে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া সময় স্ত্রী-র সঙ্গে সাক্ষাৎ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর আদালতের কোর্ট লক আপ থেকে পুলিশের গাড়িতে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া সময় স্ত্রী-র সঙ্গে সাক্ষাৎ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

১৯৯৯ সালের ২৭ জুন। খরিদায় গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন প্রয়াত সাংসদ নারায়ণ চৌবের ছোট ছেলে মানস চৌবে। অভিযুক্ত ছিলেন একদা রেলশহরের ‘ত্রাস’ রেলমাফিয়া বাসব রামবাবু।

তারপর পেরিয়েছে ২৪ বছর। মাঝে খুন হয়েছেন মানসের দাদা গৌতমও। মানসের স্মৃতিতেই মঙ্গলবার রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল মানস-গৌতম-নারায়ণ চৌবে মেমোরিয়ার ট্রাস্ট। আর এ দিনই রামবাবু-সহ ১৩জন বেকসুর খালাস হলেন আরেক রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনের মামলায়। অতীত উস্কে গেল খড়্গপুরের। শহরবাসীর একটাই দাবি, শান্তিটুকু যেন থাকে।

নিজেকে রেলশহরের ‘ত্রাতা’ দাবি করলেও রামবাবু ছিলেন তখন খড়্গপুরের ‘ত্রাস’। মানস, গৌতম ছাড়াও একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিিন। ২০১০-এ সুপ্রিম কোর্টে জামিনে পেয়ে শহরে ফেরেন রামবাবু। ততদিনে তাঁর সাম্রাজ্যে ভাগ বসিয়েছেন শ্রীনু। রেষারেষি বাড়ে। গুলি, পাল্টা গুলির অভিযোগ তোলে রামবাবু-শ্রীনু। ২০১৫ সালের পুরভোটে রামবাবুকে যখন তৃণমূলের প্রার্থী অঞ্জনা সাকরের প্রচারে দেখা যাচ্ছে, শ্রীনু হাজির তাঁর স্ত্রী বিজেপি প্রার্থী পূজার প্রচারে। পরে অবশ্য নানা মামলায় গ্রেফতার হয়ে শ্রীনু ঝোঁকেন তৃণমূলে। পূজাও জিতে দল বদলান। তারপর ২০১৭ সালে তৃণমূল কার্যালয়েই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান শ্রীনু। খুনে রামবাবু, শঙ্কর রাও, সঞ্জয় প্রসাদ-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন তাঁরা সকলেই বেকসুর হওয়ায় ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে রেলশহর।

এত দিন জেলে বসেই তোলাবাজি, গুলি চালনা, হুমকির অভিযোগ উঠেছিল রামবাবুর সঙ্গেই জেলবন্দি শঙ্করের বিরুদ্ধে। শহরের অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিশ্বজিৎ কর বলেন, “এখন হয়তো শহর অনেক শান্ত। কিন্তু মাফিয়ারাজ যাতে কোনওভাবে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেই দাবি রাখব প্রশাসনের কাছে।” খরিদার বাসিন্দা এক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার আধিকারিক দেবাশিস দে-র কথায়, “রায় নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে অপরাধের কালো দিন যেন না ফেরে।” শঙ্কিত শহরের সাংস্কৃতিক মহলও। সাংস্কৃতিক কর্মী অর্ণব চক্রবর্তীর কথায়, “দস্যু রত্নাকর যেন আমাদের প্রাণের শহরে ফিরে না আসে।”

এই শহরের অপরাধেও বরাবর জড়িয়ে থেকেছে রাজনীতি। রামবাবু থেকে শ্রীনুদের দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। সময়ের সঙ্গে তাঁরা দলও বদলেছেন। একসময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে থাকা রামবাবুকে পরে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে। আবার বিজেপির টিকিটে স্ত্রীকে পুরভোটের প্রার্থী করা শ্রীনুকে মরতে হয়েছে তৃণমূল কার্যালয়ে। গৌতম চৌবে হত্যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী তৃণমূলের জেলা সম্পাদক দেবাশিস চৌবেও বলেন, “গত কয়েক বছর শহর যেভাবে শান্ত ছিল সেই শান্তি বজায় থাকুক। রাজনীতিতে যেন দুর্বৃত্তায়ন না হয়।” বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি, স্থানীয় সাংসদ দিলীপ ঘোষের আবার দাবি, “শ্রীনু খুনে আমাকেও জড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। পরে আরেক রেলমাফিয়া গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকলেও বেকসুর খালাস হয়ে গেল। সবটাই আমাদের কাছে রহস্যের। আমরা চাই শহরে শান্তি বজায় থাকুক। কিন্তু সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরে লোকসভা ভোট। ফলে, অন্য সমীকরণের আশঙ্কা করছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Electon 2018 WB Panchayat Election 2023 midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy