Advertisement
E-Paper

ঝাপসা হচ্ছে বিপ্লবী ভূপতিভূষণের স্মৃতি

প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল ছিল না। ছিল না রাস্তা কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ সব কিছুই হয়েছে যাঁর হাত ধরে ঝাড়গ্রামের চুবকা অঞ্চলের সেই ভূপতিভূষণ মণ্ডলকে ভুলেই গিয়েছেন অধিকাংশ এলাকাবাসী।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:০০
শেষ জীবনের ঠিকানা। ইনসেটে, ভূপতিভূষণ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

শেষ জীবনের ঠিকানা। ইনসেটে, ভূপতিভূষণ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল ছিল না। ছিল না রাস্তা কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ সব কিছুই হয়েছে যাঁর হাত ধরে ঝাড়গ্রামের চুবকা অঞ্চলের সেই ভূপতিভূষণ মণ্ডলকে ভুলেই গিয়েছেন অধিকাংশ এলাকাবাসী। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাঁর নাম পর্যন্ত জানেন না। স্বাধীনতা দিবসে নানা বিপ্লবী ও সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। অথচ ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন অগ্নিযুগের এই বিপ্লবী। আজ পর্যন্ত তাঁর কোনও মূর্তিও স্থাপন হয়নি এলাকায়।

ভূপতিবাবুর জন্ম বঙ্গভঙ্গের পরের বছর ১৯০৬ সালে চুবকা অঞ্চলের রাউতারাপুর গ্রামের সম্পন্ন চাষি পরিবারে। এলাকায় স্কুল নেই। তাই পড়াশোনার জন্য তাঁকে পাঠানো হয় মেদিনীপুরে মামার বাড়িতে। মেদিনীপুরে টাউন স্কুলে ভর্তি হন তিনি। স্কুলে পড়ার সময়ই অনুশীলন পার্টির কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন ভূপতিবাবু। তাই দশম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা হয়নি। মেদিনীপুরে পর পর তিন জন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট পেডি, ডগলাস ও বার্জকে গুলি করে খুন করেছিল বিপ্লবীরা। ভূপতিভূষণের খুড়তুতো ভাই বছর নব্বইয়ের অনিল মণ্ডল জানান, ওই তিনটি হত্যাকাণ্ডে আড়ালে থেকে বিভিন্ন দায়িত্বপালন করেছিলেন বহু বিপ্লবী। তাঁদের অন্যতম ছিলেন ভূপতিভূষণ। ১৯৩৩ সালে বার্জ খুনের ঘটনার ভূপতিভূষণের নাম জড়ালেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।

রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে ১৯৩৪ সালে ভূপতিবাবুকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। তখন তাঁর বয়স আঠাশ বছর। পরে বিভিন্ন সময়ে ওড়িশার বেরহামপুর, উত্তরবঙ্গের বক্সা দুর্গ এবং পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের বালিয়াখাণ্ডি শিবিরে বন্দি ছিলেন তিনি। ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান। কিন্তু গ্রামে ফেরেননি। ভূপতিভূষণের সম্পর্কিত নাতি চঞ্চল মণ্ডল বলেন, “ভূপতি-দাদুর কাছেই শোনা, উনি শপথ নিয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই গ্রামে ফিরবেন। ফিরেওছিলেন ১৯৪৯ সালে।” এলাকায় ফিরে অন্ত্যজদের হাতের রান্না করা খিচুড়ি এলাকাবাসীকে খাইয়েছিলেন ভূপতিভূষণ। চুবকা অঞ্চলের ইউনিয়ন বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন তিনি। সেই সময়ে চুবকা অঞ্চলের খালশিউলি এলাকাটি কিছুটা জনবহুল ছিল। ভূপতিভূষণের উদ্যোগে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের নিয়ে গঠিত হল খালশিউলি পল্লি উন্নয়ন সমিতি। ভূপতিভূষণের উদ্যোগে স্থাপিত হয় খালশিউলি উচ্চতর বিদ্যালয়। আমৃত্যু এই স্কুলের সম্পাদক ছিলেন ভূপতিভূষণ। স্থানীয় সমাজসেবী শম্ভুনাথ সেনের দান করা জমিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে প্রথমে রাজি হয়নি তত্কালীন রাজ্য সরকার। কিন্তু ভূপতিবাবুর ব্যক্তিত্বের দাপটে সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য সিলমোহর দিতে বাধ্য হয় সরকার। বিপ্লবীমনস্ক মানুষটি শেষ জীবনে অবশ্য গাঁধীজির আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ভবতারণ মণ্ডল, গোবিন্দ পাত্র, অরুণ গোস্বামী বলেন, “এলাকায় হাটবাজার বসানো, বিদ্যুৎ সংযোগ আনা, রাস্তা তৈরি, সাংস্কৃতির দল গঠন করে যাত্রা মঞ্চস্থ করা সবই শুরু করেছিলেন ভূপতিভূষণ।” ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রয়াত হন তিনি। রাউতারাপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের পুরনো বাড়িটাই এখন ভূপতিভূষণের স্মৃতি আঁকড়ে রয়েছে।

Independence day celebration Independence day স্বাধীনতা দিবস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy