জানালার গ্রিল খুলে এদিক দিয়েই ঢোকে ডাকাতরা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
জানালার গ্রিল ভেঙে বাড়িতে ঢুকে গৃহকর্ত্রী বৃদ্ধাকে বেঁধে নগদ ও সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিল ছয় দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার ভোরে ঝাড়গ্রাম শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাছুরডোবা কমিউনিটি হল লাগোয়া এলাকার ঘটনা। ডাকাতি করে যাওয়ার সময় একটি নির্মীয়মান বাড়ির কেয়ার-টেকারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শাসিয়েও যায় ডাকাত দল। স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ডাকাত দলটিকে দেখা গিয়েছে। এ দিন সাবিত্রী দাস নামে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে ঘটনার তদন্তে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সরকার ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার। অভিযোগের ভিত্তিতে ডাকাতির ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
বাছুরডোবা কমিউনিটি হল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা বছর ছেষট্টির সাবিত্রী দাসের স্বামী প্রয়াত বিনোদবিহারী দাস ‘ন্যাশনাল হাইড্রোলিক পাওয়ার কর্পোরেশন’এর (এনএইচপিসি) কর্মী ছিলেন। ২০০৭ সালে বিনোদবিহারী অবসর নেন। তারপর ঝাড়গ্রামে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে বিনোদবিহারী প্রয়াত হন। তারপর থেকে সাবিত্রী একাই থাকেন। তাঁর দুই মেয়ে বিবাহ সূত্রে সিউড়ি ও জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। প্রতিদিন ভোরে উঠে ঠাকুরঘরে গিয়ে জপ করেন সাবিত্রী। মঙ্গলবারও ভোর চারটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ঠাকুর ঘরের দিকে গিয়েছিলেন তিনি। এমন সময়ে পাশের ঘর থেকে জোরে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পান তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ঘর থেকে এবং ছাদের সিঁড়ি থেকে নেমে আসে মুখ ঢাকা দুই যুবক। তারপর আরও জনা চারেক দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢোকে। সাবিত্রীর কথায়, ‘‘ওরা হিন্দিতে কথা বলছিল। গলার সোনার চেনে টান দিতেই ভয়ে খুলে দিই। এরপর কানের দুল, হাতের সোনা বাঁধানো পলাও খুলে নেয় ওরা।’’
আলমারিতে চাবি দেওয়া ছিল না। সহজেই আলমারি খুলে নগদ টাকা ও গয়না লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। ‘অপারেশন’ চালানোর সময়ে সাবিত্রীকে শোওয়ার ঘরে নিয়ে গিয়ে রুমাল দিয়ে তাঁর হাত বেঁধে শুইয়ে কাপড় ঢাকা দিয়ে দেয় ডাকাত দল। চম্পট দেওয়ার আগে ঘরের টেবিলে রাখা বোতলের জল খেয়ে সাবিত্রীকে তারা হুঁশিয়ারি দেয়, ‘ছে বজে তক নিকাল না নহি’। এ দিকে, বৃদ্ধার বাড়ির পাশেই একটি নির্মীয়মান বাড়ির কেয়ারটেকার পবন শর্মা ভোরে আওয়াজ পেয়ে দেখেন সাবিত্রীর পাঁচিল টপকে কয়েকজন নির্মীয়মান বাড়ির চত্বর হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পবন বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম রড চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আটকাতে গেলে ওরা পিস্তল দেখায়।’’
ইতিমধ্যে সাবিত্রীর কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে যান পবন। খবর পেয়ে সাবিত্রীর বাড়িতে যান স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শিউলি সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘জনবহুল এলাকায় ভোরবেলা এমন ঘটনা উদ্বেগজনক।’’ পৌঁছয় পুলিশও। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় এক বাসিন্দার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দলটিকে দেখা গিয়েছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা স্থানীয় বলেই মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy