Advertisement
E-Paper

রেলবস্তির বঞ্চনা শুনলেন সিদ্ধার্থনাথ

রেলশহরে পুরভোটের প্রচারে এসে রেল এলাকাকেই নিশানা করলেন বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা দলের তরফে রাজ্য পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। রেল এলাকার বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনলেন। আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘‘রেল যখন কেন্দ্রের অধীনে, তখন এখানে আমাদের দলের কাউন্সিলর না হলেও ধরেই নিন আপনাদের কাজ হয়ে গিয়েছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৬
রেল এলাকায় রাস্তা কাঁচা, নর্দমাও কাঁচা।

রেল এলাকায় রাস্তা কাঁচা, নর্দমাও কাঁচা।

রেলশহরে পুরভোটের প্রচারে এসে রেল এলাকাকেই নিশানা করলেন বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা দলের তরফে রাজ্য পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। রেল এলাকার বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনলেন। আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘‘রেল যখন কেন্দ্রের অধীনে, তখন এখানে আমাদের দলের কাউন্সিলর না হলেও ধরেই নিন আপনাদের কাজ হয়ে গিয়েছে।’’

খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি রেল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই ৮টি ওয়ার্ডেই গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এগিয়ে গেরুয়া শিবির। মঙ্গলবার প্রচারের জন্য তাই এই রেল এলাকাকেই বেছে নেন বিজেপির এই শীর্ষ নেতা। রেলের পোর্টারখোলি এলাকায় একটি প্রচারসভায় যোগ দেন তিনি। সভা শেষে বেশ কয়েকটি রেলবস্তি পরিদর্শন করেন তিনি।

প্রথমেই তিনি যান ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেলবস্তিতে। বাসিন্দারা তাঁকে কাছে পেয়ে বিদ্যুৎ, নিকাশি, শৌচালয় নিয়ে অভিযোগ জানান। এরপর তিনি ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ছুঁয়ে চলে যান ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর বড় আয়মায়। এখানে সিদ্ধার্থনাথকে ঘিরে ধরেন এলাকার মহিলারা। স্থানীয় গীতা শর্মা, শ্যামলী রায়রা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পুরসভা থেকে বিধবাভাতা পাচ্ছি না। এলাকায় এত বছরেও রাস্তা হয়নি, জল নেই। কেউ কোনও দিন আমাদের দিকে ফিরে তাকায়নি।’’ খাটিয়ায় বসে অভিযোগ শুনতে শুনতে পাশে বসে থাকা বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়দের আসন ছেড়ে দিয়ে ওই মহিলাদের বসতে বলেন সিদ্ধার্থনাথ। কেউ-কেউ মাটিতে বসতে গেলে সিদ্ধার্থনাথও মাটিতে বসতে যান। বেগতিক বুঝে খাটিয়ায় বসেন মহিলারা। সিদ্ধার্থনাথ তাঁদের বলেন, ‘‘আপনারা কেন গুটিয়ে থাকেন। এতদিন এ ভাবে থেকেছেন বলেই আপনাদের এই এলাকার উন্নয়ন হয়নি। অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। এখানে যে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন তিনি নেতা নন, তাঁকে সেবক মনে করবেন।’’

রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক এ দিন ওই এলাকার দলীয় প্রার্থীকে দেখিয়ে আরও বলেন, ‘‘উনি যদি এলাকার কাউন্সিলর হলে কাজ করিয়ে নেবেন। জল না দিতে পারলে বাড়িতে এলেও ওঁকে এক গ্লাস জল দেবেন না।’’ সিদ্ধার্থনাথ ২৭নম্বর ওয়ার্ডের সিএমই গেটে এসেও নিকাশি, শৌচালয়, পথঘাট নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ শোনেন। স্থানীয় বি সোনি, পদ্মা পালইয়ের কথায়, ‘‘রেলের কেউ আমাদের এলাকার কথা ভাবেনি। শৌচকর্মের জন্য লাইনের ধারে মহিলাদের যেতে হয়।’’ ক্ষুব্ধ সিদ্ধার্থনাথ জবাবে বলেন, ‘‘দেশে ৬৫ লক্ষ শৌচালয় করেছে মোদী সরকার। তাহলে এখানে কেন শৌচালয় হবে না? আপনারা শান্ত থাকেন বলেই এই অবস্থা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাব চান।’’ কিন্তু রেল অনুমতি দিচ্ছে না বলেই পুরসভা কাজ করতে পারছে না বলে বাসিন্দারা জানান। তখন সিদ্ধাথর্নাথ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কি এই এলাকার উন্নয়ন করেছেন? এখানকার কংগ্রেস বিধায়ক কি কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থাকার সময় চেষ্টা করেছেন? শুধু মুখে প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, উদ্যোগী হতে হবে।’’

এলাকার মহিলাদের কাছে দুর্দশার কথাই শুনলেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।

এ দিন সিদ্ধার্থনাথের প্রচার দেখে মনে হচ্ছিল পুরভোট নয়, তাঁর মূল লক্ষ্য আগামী বিধানসভা নির্বাচন। মিশ্রভাষি খড়্গপুর শহরের অবাঙালি ভোটারদের একটা বড় অংশ এই রেল এলাকারই বাসিন্দা। গত ২০১০ সালে এই রেল এলাকা খড়্গপুর পুরসভার অধীনে এসেছে। এমনকী শহরের প্রায় ১৭টি রেলবস্তি এলাকার কিছু অংশে ‘হোল্ডিং নম্বর’ প্রদান করেছে পুরসভা। কিন্তু উন্নয়ন হয়নি। পুরসভার যুক্তি, রেল উন্নয়নের কাজে বাধা দিয়েছে।

এ দিন প্রচারসভা থেকেও রেল এলাকার বাসিন্দাদের মন রাখতেই কথা বলেছেন বিজেপির এই রাজ্য পর্যবেক্ষক। দাদু লালবাহাদুর শাস্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রেলের কথা বলতে গেলে দাদুর কথা মনে পড়ে। রেল দুর্ঘটনা ঘটায় উনি ইস্তফা দিয়েছিলেন। আর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দুশোটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল। জ্ঞানেশ্বরী ও সাঁইথিয়া রেল দুর্ঘটনায় তো তিনি বিরোধীদের চক্রান্ত বলেছিলেন। এটাই পার্থক্য।’’ রেল এলাকার দুরবস্থার জন্যও ইউপিএ সরকারকে দায়ী করেন তিনি। তবে বিজেপির সরকারের আমলে রেলের বস্তির সমস্যা মিটবে বলে তাঁর আশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে বলেছিলাম আপনি খড়্গপুরের রেলের এলাকার উন্নয়নে কিছু করুন। উনি বলেছেন, এটা ছোট সমস্যা। আমার বিশ্বাস এখানে প্রভুর কৃপা হবেই হবে।’’

ভোটে রেল মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিদ্ধার্থনাথ। তিনি বলেন, ‘‘রেলের ঠিকাদারির সঙ্গে এখানে মাফিয়ারাজ চলছে। আমি শুনেছি যে মাফিয়া সেই ঠিকাদার। আর তাঁরা তৃণমূলের কোলে বসে আছে। ভোটের আগে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে।’’ এরপরই সুর চড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই রাজ্যে শাসকদলের পুলিশের প্রশ্রয়ে মাফিয়ারা ঘুরে বেড়াতে পারে। কিন্তু রেল কেন্দ্রের অধীনে। ঠিকাকাজের বরাতে স্বচ্ছতা আনতে বিজ্ঞাপন চালু হলে মাফিয়ারা চলে যাবে। মনে রাখবেন কেন্দ্রে যিনি বসে আছেন তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদী।’’

তৃণমূলকে বিঁধতেও এ দিন ছাড়েননি এই বিজেপি নেতা। কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘এখানে আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এই এলাকার মানুষকে চাকরি করতে দেশের কোনায় কোনায় যেতে হচ্ছে। কারণ তৃণমূল সরকার কারখানা বন্ধ করে বোমা তৈরি কারখানা চালু করেছে।’’ যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমবিএ ডিগ্রি নিয়েও এ দিন ফের কটাক্ষ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে নামের আগে ডক্টরেট লিখতেন। আমরা প্রশ্ন করেছিলাম কোথা থেকে তিনি ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে জানি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। উনি আর নামের আগে ওই শব্দটা লেখেন না। ভাইপো আর পিসির অবস্থা এই হলে তাঁদের সরকারের অবস্থা কেমন হবে ভাবুন।’’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিদ্ধার্থনাথ এ দিন আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রাজ্য আই-ওয়াশ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে। এখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করছেন।’’ ভোটে অঘটন ঘটলে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব না নেওয়ার যে কথা বলেছে, সেই প্রসঙ্গে এই বিজেপি নেতার কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম গুটিয়ে নেওয়া উচিত। এই কথার পর রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারে।’’

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

BJP Municipal election kharagpur Trinamool TMC Mamata Bandopadhyay Suresh Prabhu siddharth nath singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy