ডাকের অপেক্ষায়। মেদিনীপুরে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
বছর খানেক হল মেদিনীপুরের ডাকঘরে মিলছে না পোস্টকার্ড। অনেকেই পোস্টকার্ডের খোঁজে এসে খালি হাতি ফিরতে বাধ্য হন। সদ্য পুজো মিটেছে। এই সময় অনেকেই পোস্টকার্ডের মাধ্যমে পরিচিতদের শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠান। কিন্তু, মেদিনীপুরের ডাকঘরের পরিস্থিতি সেই একই। শুধু উপ-ডাকঘরগুলোয় নয়, খোদ মেদিনীপুরের প্রধান ডাকঘরেও পোস্টকার্ড অমিল!
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ডাকঘরে গিয়ে দরবার করেন লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকেরা। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমির পক্ষ থেকে অবিলম্বে পোস্টকার্ড আনানোর দাবি জানিয়ে সিনিয়র পোস্টমাস্টারকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কথায়, “আমরা যাঁরা লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশ করি, তাঁদের কাছে ডাক বিভাগের পোস্টকার্ড গুরুত্বপূর্ণ। পত্রিকায় লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো, লেখার প্রাপ্তি স্বীকার করা, মত বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও সুলভ মূল্যের মাধ্যম হল পোস্টকার্ড। সব কিছুই তো আর মেল- মেসেজে সম্ভব নয়।”
এ দেশে ডাক ব্যবস্থার প্রচলন ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের পত্তনের গোড়ার দিক থেকে। পোস্টকার্ড আসলে ডাক-চিঠিই। ভৌগোলিক দূরত্ব পেরিয়ে প্রেরকের লিখিত বক্তব্য প্রাপকের কাছে পৌঁছয় চিঠির মাধ্যমে। এক সময় সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে চিঠি বিলির ব্যবস্থা নিতে হয় প্রশাসনকে। সেই শুরু। একটা সময় ছিল, যখন পোস্ট মাস্টাররা সুতলি বাঁধা চটের বস্তা নিয়ে ঘুরতেন। খাম-পোস্টকার্ড কত কী থাকত সেই বস্তার মধ্যে। পোস্টকার্ডে বড় বড় করে ঠিকানা লেখা থাকত, ডাক-টিকিট সাঁটানো থাকত। এ সব এখন যেন অতীত। শহরের নানা প্রান্তে থাকা ডাকবাক্সগুলোর জীর্ণ দশাই বলে দেয়, সময় দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পোস্টকার্ডের চাহিদা আগের থেকে কমেছে অনেকটাই।
মেদিনীপুরের কলেজ মোড়ের অদূরে রয়েছে প্রধান ডাকঘর। এই ডাকঘরের অধীনে আরও ৪৯টি উপ-ডাকঘর রয়েছে। কেন ডাকঘরগুলোয় পোস্টকার্ড থাকছে না? ডাক বিভাগের এক সূত্রে খবর, মানুষের চাহিদা কম থাকায় এখন আর জেলাগুলোয় নিয়মিত পোস্টকার্ড পাঠানো হয় না। ফলে, মেদিনীপুরের মতো শহরের প্রধান ডাকঘর কিংবা উপ-ডাকঘরগুলো থেকে পোস্টকার্ড মেলে না। কিন্তু পোস্টাকার্ডের এমন আকালে সমস্যায় পড়েছেন শহরের লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা। তাঁদের মতে, ডাকঘরগুলোয় পোস্টকার্ড রাখা সরকারি পরিষেবার মধ্যেই পড়ে। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমির সম্পাদক ঋত্বিকবাবুর কথায়, “জেলার বাইরের লেখক, প্রখ্যাত লেখকদের কাছে লেখা চেয়ে পোস্টকার্ড পাঠানোর গুরুত্বই আলাদা।” অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক চপল ভট্টাচার্য্য বলেন, “পোস্টকার্ড সম্পর্কে আমাদের সকলেরই একটা আলাদা অনুভূতি আছে। ডাকঘরগুলোয় সব সময়ই পোস্টকার্ড রাখা উচিত।”
পোস্টকার্ডের চাহিদা যে এখনও রয়েছে, তা মানছেন ডাক-কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুরের সিনিয়র পোস্টমাস্টার বিকাশকান্তি মিশ্রর কথায়, “এখনও অনেকে পোস্টকার্ডের খোঁজ করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বার্তা পাঠানোর জন্য পোস্টকার্ডকেই নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বলে মনে করেন। বছর খানেক ধরে আমাদের কাছে পোস্টকার্ড না থাকায় আমরা তা দিতে পারি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” বিকাশবাবুর আশ্বাসে সন্তুষ্ট লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকেরাও। অরিন্দম সাউ, কৃষ্ণেন্দু দে, লক্ষ্মণ ঘোষ প্রমুখের কথায়, “সিনিয়র পোস্টমাস্টার আমাদের স্মারকলিপি নিয়েছেন। আশা করি, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy