নিত্যদিন থাকে স্কুলে যাওয়া বা সরকারি দফতরের কাজ। সেই কাজ সামলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ফর্ম বিলি করাটা বাড়তি ‘চাপ’ বিএলও’দের। তাই এসআইআরের কাজ দ্রুত শেষ করতে বুধবার গুরু নানক জয়ন্তীর ছুটিতেই বিএলওর দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষক এবং সরকারি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম (গণনাপত্র) বিলি করলেন। তাঁরা বলছেন, ‘আগে ভাগে ফর্ম দেওয়া হলে ভোটারা ধীরে সুস্থে নির্ভুল ভাবে তা পূরণ করতে পারবেন’।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভায় মোট ৪৪২০টি বুথ রয়েছে। সেই অনুযায়ী সমসংখক বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে পঞ্চায়েত অফিসগুলির কর্মী— কাউকে করা হয়েছে ‘বুথ লেভেল অফিসার’ (বিএলও)। আবার কেউ পেয়েছেন সুপারভাইজারের দায়িত্ব। সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে ফর্ম বিলি করতে হলেও তাঁদের নিজেদের সরকারি দফতরের দায়িত্বও সামাল দিতে হচ্ছে। যেমন, মঙ্গলবার বহু শিক্ষক স্কুল শুরু এবং শেষের পরে ফর্ম বিলি করেছেন। এ ভাবে জোড়া দায়িত্ব পালনের ফলে তাঁদের বাড়তি চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ।
এই আবহে এ দিন ছিল সরকারি ছুটি। কিন্তু পাঁশকুড়া থেকে তমলুক, কাঁথি থেকে মহিষাদল— জেলার প্রায় সর্বত্রই বিএলওরা এসআইআরের কাজে সকাল থেকে বেরিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি এনুমারেশান ফর্ম পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশিকা রয়েছে। সপ্তাহের মাঝে বাড়তি ছুটি পাওয়ায় ফর্ম ভোটারদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন বিএলওরা।
পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভার ৮৩ নম্বর বুথের বিএলও হলেন মহৎপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভোলানাথ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘ছুটির দিন। তাই সকাল ৮টা থেকে বেরিয়েছি। দ্রুত ফর্ম দিলে ভোটাররা তা পূরণ করার জন্য হাতে বেশি সময় পাবেন। ওই কাজ যাতে নির্ভুল হয়, তাই যত দ্রুত সম্ভব ফর্ম দিয়ে দিতে চাইছ।’’ শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই-১ পঞ্চায়েতের ৪৮ নম্বর বুথের বিএলও শুভাশিস মল্লিক। তিনি বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার স্কুল ছুটির ফর্ম বিলি করি। ওই দিন ৭৩টি ফর্ম দিয়েছি। এ দিন স্কুল ছুটি থাকায় বিকেল পর্যন্ত ১৫৫টি ফর্ম বিলি করা হয়েছে।’’ মহিষাদলের অমৃতবেডিয়া পঞ্চায়েতের ১৩ নম্বর বুথের বিএলও পিন্টু জানাও সকাল থেকে ফর্ম বিলি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের পর হাতেগোনা কয়েকটি ফর্ম বিলি করেছিলাম। এ দিন ছুটি থাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে ২৪০টি ফর্ম বিলি করেছি।’’
উল্লেখ্য, প্রথম দিন মঙ্গলবার কাজ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন বিলিওরা। বহু এলাকায় দেখা যায়নি রাজনৈতিক দলগুলির ‘বুথ লেভেল এজেন্ট- ২’দের (বিএলএ-২)। এ দিন বেশিরভাগ বিএলও দাবি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন এজেন্টরা। ফলে ভোটারদের বাড়ি খুঁজতেও যেমন সমস্যা হয়নি, তেমনই মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি ফর্ম বিলি করা গিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলাশাসক ইউনিস রিশিন ইসমাইল বলেন, ‘‘মঙ্গলবার তিন লক্ষ ৫৫ হাজার ফর্ম বিলি হয়েছিল। তবে এ দিন অনেক বেশি ফর্ম বিলি হয়েছে। অনুমান, ওই সংখ্যাটা আট লক্ষ ছাড়িয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)