E-Paper

শহরের বহু মূর্তিই অযত্নে

বটতলাচকে থাকা স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। সংস্কারের প্রয়োজন।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ০৯:০০
মেদিনীপুর পুরসভা।

মেদিনীপুর পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

শহর জুড়ে প্রচার-বিজ্ঞাপনের আধিক্য। বাদ থাকছে না মনীষী ও বিপ্লবীর মূর্তির আশেপাশের জায়গাও। মূর্তির মুখ যেন ঢাকা পড়ছে বিজ্ঞাপনেই। ছবিটা মেদিনীপুর শহরের।

এই শহরে অনেক আবক্ষ এবং কিছু পূর্ণাবয়ব মূর্তি রয়েছে। এই সূত্রে অনেকে ঐতিহাসিক শহর মেদিনীপুরকে ‘মূর্তির শহর’ও বলে থাকেন। অনেক বড় শহরে যা নেই, তা রয়েছে এই মেদিনীপুরে। স্বাধীনতা সংগ্রামপর্বে মেদিনীপুরের বহু বিপ্লবী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের স্মরণে শহরের রাস্তার মোড়ে, পাড়ার মোড়ে রয়েছে মূর্তি। কিন্তু সেই সব মূর্তির বেশিরভাগই রয়েছে অবহেলা আর অনাদরে। সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপনের ‘দাপটে’ শহরে থাকা আবক্ষ মূর্তিগুলির মুখ তো কার্যত ঢাকা পড়ে যায়। মাঝেমধ্যে ধুলোতেও ভরে যায় মূর্তিগুলি।

বটতলাচকে থাকা স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু, সংস্কার আর করছে কে! কেরানিতলায় বিপ্লবী হেমচন্দ্র দাস কানুনগোর আবক্ষ মূর্তিতে ঝুলছে শুকনো মালা। সেই কবে থেকে! ভীমচকে রয়েছে বিপ্লবী রামকৃষ্ণ রায়ের মূর্তি। আশেপাশে অস্থায়ী দোকানের সারি। অবস্থা এমন যে রাস্তা থেকে মূর্তিটি দেখাই যায় না! পঞ্চুরচকে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। তার আশেপাশে হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স। দৃশ্যতই যেন দৃশ্যদূষণ। এখানে মূর্তি রক্ষায় এক সময়ে স্থানীয়েরা এগিয়ে এসেছিলেন। মূর্তির আশেপাশে বিজ্ঞাপনের কোনও ব্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স পড়ল কি না, সে দিকে সতর্ক নজর রাখতেন সুব্রত চক্রবর্তীরা। এ সব কেউ দিলে, নিজেরা সেই ব্যানার, ফেস্টুন খুলে গুছিয়ে রাখতেন। সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে খুলে রাখা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতেন। সুব্রত বলছেন, ‘‘এখানে বিজ্ঞাপন দেবেন না—বলতে বলতে আমরা হাঁপিয়ে গিয়েছি! কাকে কী বলব? প্রশাসনের লোকেরাও তো হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স দিয়ে যায়! সরকারি ফ্লেক্স থাকলে, বেসরকারি ফ্লেক্স দিতে না বলি কী করে!’’

অনেকের মতে, পুর- প্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় থাকা মনীষীদের মূর্তিগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিলে এই পরিস্থিতি হত না। পূর্ণাবয়ব মূর্তিগুলির মধ্যে এলআইসি মোড়ে রয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি, কালেক্টরেট মোড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তি, পঞ্চুরচকে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, কলেজ মোড়ে নেতাজির মূর্তি, বটতলাচকে বিবেকানন্দের মূর্তি। আবক্ষ হোক বা পূর্ণাবয়ব—অনেক মূর্তির গায়ে এমন ধুলো জমে আছে যে দূর থেকেও বেশ ঠাহর করা যায়! রঙের পরত উঠে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিপ্লবী বা মনীষীর জন্মদিন, মৃত্যুদিনে অনেকে এসে মূর্তিতে মালা দেন। পরে আর সে মালাটাও আর খোলা হয় না।

মেদিনীপুরের প্রবীণদের মতে, ওঁরা (মনীষীরা) নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণা। তাই মূর্তিগুলি উপযুক্ত মর্যাদা-সহ রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত পুরসভার। ‘শহিদ প্রশস্তি সমিতি’র তরফে প্রাণতোষ মাইতি বলেন, ‘‘মূর্তিগুলি ঘিরেই যেন প্রচারের জায়গা হয়ে উঠছে। ব্যানার, ফ্লেক্স দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। মূর্তিগুলির ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘বর্তমান পুরপ্রধান অনেকটাই চেষ্টা করছেন রক্ষণাবেক্ষণের। তিনি একা আর কী করবেন! সবাইকে সচেতন হতে হবে।’’

মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘মূর্তির আশেপাশে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত নয়। এ দিকে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সমস্ত সংগঠন-সংস্থার কাছেই অনুরোধ, মূর্তির আশেপাশে ব্যানার, ফেস্টুন, ফ্লেক্স দেবেন না। কেউ এ সব দিয়ে থাকলে, যেন খুলে নেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore municipality

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy