ফেলে দেওয়া কাগজ-প্লাস্টিক। তাই দিয়েই কেউ বানিয়েছে মরুদ্যান, কেউ বা আবার বানিয়েছে গাছঘর। শিশুদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র নিয়েই প্রদর্শনী আয়োজিত হল মঙ্গলবার। নিজেদের হাতে তৈরি সেই সব জিনিসপত্র প্রদর্শিত হতে দেখে উচ্ছ্বসিত টুবাই দাস, রিয়া দাস, লবা টুডুরা।
প্রান্তিক নামে এক সংস্থার উদ্যোগে মেদিনীপুরের গণপতি বসু স্মৃতি উদ্যানে এই প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। এই সংস্থাটি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। সংস্থার কর্ণধার প্রজ্ঞাপারমিতা মণ্ডল নিজেও কলকাতার এক নার্সিং কলেজের ছাত্রী। বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। বছর তিনেক ধরেই পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন পারমিতারা। তাদের নানা হাতের কাজ শেখান। পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটলেই তাঁদের আনন্দ।
এই ভাবনা এল কী ভাবে? পারমিতা বলছিলেন, “যখন দেখতাম পাড়ার গরিব ছেলেমেয়েগুলো স্কুলে যেতে পারছে না। তাদের অক্ষর পরিচিত হচ্ছে না। ভাল করে খেতে পারছে না, সারা দিন গলিতে নোংরা মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই অযত্ন, অবহেলা সহ্য করতে পারতাম না। তাই কেমন একটা ঝোঁকের মাথায় কাজটা শুরু করে দিলাম।’’
তাঁর কথায়, ‘‘ভাবলাম পথশিশুদের জন্য যদি কিছু করতে পারি। ছেলেমেয়েগুলো লেখাপড়া শিখে, হাতের কাজ শিখে একটু মানুষ হতে পারলে বুঝব স্বপ্ন দেখার অধিকার সকলের আছে।”
প্রদর্শনীতে গাছঘর, ফুলদানি, কাপ-চামচে প্রদর্শিত হয়। এ সবই ফেলে দেওয়া কাগজ-প্লাস্টিক দিয়ে বানানো। প্রদর্শনীতে নিজেদেরই বানানো জিনিস সাজানো দেখে খুশি সকলে। টুবাই বলছিল, “গাছঘরটা বানাতে তিন দিন লেগেছে। যতটা পেরেছি ভাল করার চেষ্টা করেছি।” রিয়ার কথায়, “পরের বার আরও ভাল করে বানাব।”
প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক রমাপ্রসাদ গিরি। রমাপ্রসাদের কথায়, “পথশিশুদের হাতের কাজ দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। কী সুন্দর সব জিনিসপত্র বানিয়েছে ওরা। উদ্যোক্তারা চাইলে আগামী দিনে এই সব পথশিশুদের পাশে থাকব।”
অভাবের তাড়নায় এইসব শিশুদের অনেকেই কাজ করতে বাধ্য হয়। বিপন্ন হয় শৈশব। অনেকের বাড়ির অবস্থাও খারাপ। ইটপাতা গলিতে পাশাপাশি দু’জন লোক হাঁটতে পারেন না। সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া সেই গলি দিয়ে ঢোকার পরে একটা ভাঙা কাঠের দরজা। ঠেললেই ছোট উঠোন। এক চিলতে দালান। এটুকুই।
বস্তি-ঝুপড়িতে থাকা পরিবারগুলোর শিশুদের কাছে এই প্রদর্শনী যেন অনেকটা। পারমিতা বলছিলেন, “ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। ফেলে দেওয়া কাগজ-প্লাস্টিক দিয়ে ওরা খুব সুন্দর জিনিসপত্র বানিয়েছে। ওদের সৃষ্টি-শিল্পকর্ম সত্যিই খুব ভাল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটু শিখিয়েছি। ওরা সেটাই রপ্ত করেছে। এটা আমাদের কাছে খুব আনন্দের। ওদের এই হাসিটাই তো বড় প্রাপ্তি।”