Advertisement
E-Paper

টায়ারে তাপ্পি মেরেই শহরে ছুটছে পুলকার

শুধু মেদিনীপুর শহর নয়, খড়্গপুর, ঘাটাল, বালিচক, চন্দ্রকোনা, বেলদা-সহ জেলার প্রায় সর্বত্র অধিকাংশ পুলকারের হাল কমবেশি এমনই।

সৌমেশ্বর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
বেহাল: কোনও গাড়ির সামনের ভাঙা অংশ বাঁধা দড়ি দিয়ে।

বেহাল: কোনও গাড়ির সামনের ভাঙা অংশ বাঁধা দড়ি দিয়ে।

চাকার টায়ারের গ্রিপ উঠে গিয়েছে আগেই। অনেক গাড়ির সামনের ভাঙা অংশও বাঁধা দড়ি দিয়ে। আসনের অবস্থাও তথৈবচ। কোনও কোনও গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে বছর পাঁচেক আগে। বাবা-মায়েরা তাঁদের ছেলেমেয়েকে যে গাড়িতে করে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন, সেই পুলকারেই প্রতি পদে বিপদের হাতছানি!

শুধু মেদিনীপুর শহর নয়, খড়্গপুর, ঘাটাল, বালিচক, চন্দ্রকোনা, বেলদা-সহ জেলার প্রায় সর্বত্র অধিকাংশ পুলকারের হাল কমবেশি এমনই। পুলকারের হাল খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সকালে জেলা পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা অভিযানে নামেন। মেদিনীপুর শহরের একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলকারগুলির নথিপত্র দেখতে চান আধিকারিকেরা। উত্তরে পুলকার চালকদের কেউ জানান, ‘গাড়ির মালিকের বাড়িতে নথি রয়েছে।’ আর এক চালক জানান, ‘তাঁর লাইসেন্স নেই। তিনি কেবল এ দিনের জন্যই গাড়িটি নিয়ে এসেছেন।’

এ তো গেল লাইসেন্স, গাড়ি পরীক্ষা করতে গিয়েও আধিকারিকদের চক্ষু চড়কগাছ। কোনও গাড়ির টায়ারের উপর তাপ্পি লাগানো আবার কোনও গাড়ির আসন ভাঙা। দফতরের এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘গাড়ির সামনের ভাঙা অংশ দড়ি দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে বাঁধা রয়েছে। কোনও কারণে দড়ি ছিঁড়ে ভাঙা অংশটি খুলে সামনের চাকায় আটকে গেলে গাড়ি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’’ খারাপ অবস্থা দেখে দু’টি গাড়ি বাজেয়াপ্তও করেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। ওই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেন আধিকারিকরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শবনম দত্ত বলেন, ‘‘পুলকারের সাথে স্কুলের কোনও সম্পর্ক নেই। অভিভাবকেরা নিজেরাই গাড়ি ঠিক করেন। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, বাচ্চাদের পাঠানোর আগে গাড়ির অবস্থা ভাল করে দেখে নিন।’’ খড়গপুর ডিএভি মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ নন্দকিশোর গৌতম বলেন, ‘‘আমার স্কুলে অনেক বাচ্চাই পুলকারে আসে। কোনও পুলকারেরও খারাপ অবস্থা নজরে এলে গাড়ির মালিককে ডেকে সতর্ক করে দিই।’’

কোথাও চাকার টায়ারের গ্রিপই উধাও। নিজস্ব চিত্র

অভিযানে বাজেয়াপ্ত গাড়ির মালিক শিবু মান্না বলেন, ‘‘আমার গাড়ির সমস্যা রয়েছে। মাঝে মধ্যে ওই গাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হয়।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, প্রতিদিনই স্কুল থাকায় গাড়ি মেরামত করার সময় পাওয়া যায় না।

এক অভিভাবিকার দাবি, ‘‘গাড়ির খারাপ অবস্থা নিয়ে গাড়ির মালিককে অনেকবার বলেছেন। বাড়ির সামনে দিয়ে একটি গাড়িই স্কুলে আসে। তাই তাঁরা নিরুপায় হয়ে ওই গাড়িতেই বাচ্চাদের পাঠান। খড়পুরের বাসিন্দা তানিয়া মাইতিরও বক্তব্য, ‘‘গাড়ির মালিককে বহুবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এবিষয়ে পরিবহণ দফতরের নজর দেওয়া উচিত।’’

জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলছেন, ‘‘পরিবহণ দফতর থেকে জেলায় কোনও ‘পুলকার’-এর অনুমতি দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত গাড়িগুলিই পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বৈধ নথি ছাড়া কোনও গাড়িই চলতে দেওয়া যাবে না।’’ তাঁর কথায়, বেহাল গাড়িতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের যাতায়াত কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। কর্মী সংখ্যা কম থাকলেও আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াতকারী গাড়িতে নজরদারি চলবে।’’ এ বিষয়ে পরিবহণ দফতর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও।

risky journey Pool car damaged
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy