Advertisement
E-Paper

বন্ধ দরজা বৈঠকে শুভেন্দু, অতঃপর!

গত পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী অধ্যুষিত কেশিয়াড়িতে ধাক্কা খায় তৃণমূল। ব্লকের ৯টি  পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টিই দখল করেছিল বিজেপি।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২৬
সেই-সময়: ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রশাসনিক সভায় একমঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। কেশিয়াড়িতে। ফাইল চিত্র

সেই-সময়: ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রশাসনিক সভায় একমঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। কেশিয়াড়িতে। ফাইল চিত্র

সেদিনের ফল ছিল বিজেপির অনুকূলে ১৩- ১২। দফায় দফায় দলবদলে এখন তৃণমূলের অনুকূলে ২১- ৪। তবুও...!

গত পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী অধ্যুষিত কেশিয়াড়িতে ধাক্কা খায় তৃণমূল। ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টিই দখল করেছিল বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল তারা। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টি জিতেছিল বিজেপি। বাকি ১২টি তৃণমূল।

পরিস্থিতি দেখে কেশিয়াড়িতে ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেশিয়াড়ির মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী শুনিয়েছিলেন, ‘‘২ টাকা কিলো চাল পেতে, হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পেতে, শিক্ষাশ্রী পেতে, রাস্তাঘাট তৈরি করতে রাজ্য সরকারকে লাগে। সবটাই রাজ্য করে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী পেতে, সবুজসাথীর সাইকেল পেতেও রাজ্যের কাছেই আসতে হবে। আমার কাছে আসতে হবে।’’ তাঁর দলের নেতাকর্মীদের একাংশ যে ‘ভুল’ করেছেন, তা খোলাখুলি স্বীকারও করে নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁকে ‘ভুল’ না- বোঝার আবেদনও করেছিলেন মমতা। পাশাপাশি, ‘হারানো’ কেশিয়াড়ি ‘ফেরানো’- র দায়িত্ব মমতা দিয়েছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দু তখন দলের তরফে এ জেলার পর্যবেক্ষকও।

দলনেত্রীর কাছ থেকে এই দায়িত্ব পেয়ে কেশিয়াড়িতে ছুটে এসেছিলেন শুভেন্দুও। একদফায় ‘ক্লোজ ডোর’ বৈঠক, আরেক দফায় প্রকাশ্য সভাও করেছিলেন। সে সময়ে স্থানীয়দের প্রতি তাঁর বার্তা ছিল, ‘‘কারও বাড়িতে যাবেন না। কারও কাছে হাত পাতবেন না। সমস্যা হলে বিডিওর কাছে যাবেন। কেউ আক্রমণ করলে থানার আইসির কাছে যাবেন।’’ গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে তৃণমূলকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছিল বিজেপি। কেশিয়াড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ছিল ১১০টি। বিজেপি পেয়েছিল ৬০টি, তৃণমূল ৩৮টি, সিপিএম ৪টি, নির্দল ৮টি। তবে জেলা পরিষদের ২টি আসনই তৃণমূল দখল করেছিল। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি ছিল, কেশিয়াড়ি ‘গুছিয়ে’ নিয়েছেন তাঁরা। ফল বলেছিল উল্টো কথা। লোকসভায় কেশিয়াড়ি থেকে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটে অবশ্য ভাল ফল করেছে তৃণমূল। কেশিয়াড়ি থেকে তৃণমূলের পরেশ মুর্মু জিতেছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ভোটে। বিধানসভার আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন শুভেন্দু।

তৃণমূল যাতে দল ভাঙাতে না পারে সে জন্য গোড়ায় কৌশলী চাল দিয়েছিল বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী দলীয় ১৩ জন সদস্যকে সরিয়ে অন্যত্র রেখেছিল তারা। পরে অবশ্য দলবদল হয়েছে। সংখ্যা ওলটপালট হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সহ- সভাপতি শমিত দাশের দাবি, ‘‘কেশিয়াড়িতে এতদিন ধরে গণতন্ত্রের হত্যা করা হচ্ছে। এতে তৃণমূলের যাঁরা জেতা প্রার্থী, তাঁরাও কিন্তু বিরক্ত।’’ শমিতের দাবি, ‘‘দল ভাঙাতে পুলিশকে নামানো হয়েছিল। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মানুষই তৃণমূলকে জবাব দেবেন।’’ বিজেপি ভাঙানো কেন? তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির দাবি, ‘‘আমরা বিজেপি ভাঙার চেষ্টা করিনি। বিজেপির লোকেরাই বিজেপি ভেঙে দিয়েছে!’’ কেন সমিতির বোর্ড গঠন হল না? তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার জবাব, ‘‘বোর্ড গঠনের বিষয়টি প্রশাসনিক।’’

বারবার দলবদলে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি এখন তৃণমূলের অনুকূলে সেটাই ২১- ৪। তাও কেন সমিতির বোর্ড গঠন হচ্ছে না? কেশিয়াড়িতেও রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। দলের অন্দরে কানাঘুষো, এখানে না কি তিনটি গোষ্ঠী সক্রিয়। বোর্ড গঠন হলে সেই গোষ্ঠী কোন্দল ফের প্রকাশ্যে এসে পড়বে। গেরুয়া শিবিরের কটাক্ষ, জোর করে কয়েকজনকে দলবদল করিয়েও গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসার ভয়ে বোর্ড গঠন করতে পারছে না তৃণমূল। তৃণমূলের কো- অর্ডিনেটর অজিতের অবশ্য মন্তব্য, ‘‘বিজেপি কী বলল তাতে আমাদের কিচ্ছু এসে যায় না! আমাদের পক্ষে ২১ জন সমিতি- সদস্য রয়েছেন। যেদিন হবে, সেদিন আমরাই বোর্ড গঠন করব!’’

দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটা পঞ্চায়েত ভোট। পাঁচ বছরে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি সোনার হরিণ হয়েই থেকে গেল তৃণমূলের কাছে। (চলবে)

Keshiary Suvendu Adhikari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy