কাঁথিতে প্রচারে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগে তো বটেই। ভোট মিটে যাওয়ার পরেও বার বার নিজেকে ‘সনাতনের সেবক’ বলে দাবি করে এসেছেন। এমনকী নিজেকে হিন্দু বলে প্রমাণের পাশাপাশি অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বলতেও শোনা গিয়েছে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু মঙ্গলবার ‘অধিকারী গড়’ কাঁথিতে পুরভোটের প্রচারে একেবারেই উল্টো ছবি দেখা গেল।সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে পদ্মফুল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানালেন শুভেন্দু।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরভোটের আগে মঙ্গলবার কাঁথিতে প্রথম প্রচারে নেমেছিলেন শুভেন্দু। সকালে রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রণাম নিবেদন করেন। মহারাজদের কাছে মিশনের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এরপর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী ও বিধায়ক অরূপ দাসের সমর্থনে ‘গৃহ সম্পর্ক’ অভিযান শুরু করেন শুভেন্দু। কখনও পথচলতি মোটরবাইক চালককে থামিয়ে, কখনও বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা ভোটারদের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করে পদ্মফুলে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে গিয়ে হিন্দুদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোটারের বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন শুভেন্দু। যাঁদের অনেকেই তাঁর পূর্ব পরিচিত। আলিঙ্গন শেষে সকলের খোঁজখবর নেন। এক মহিলা শুভেন্দুকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আমাদের ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলেন? খুব খারাপ লেগেছিল। এখন এসেছেন। ভাল লাগছে।’’ ওই মহিলার চোখের অসুখের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য দলের স্থানীয় কর্মীদের তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন তিনি।
এক বছরেরও বেশি সময় বাদে শুভেন্দুকে ‘অন্য ভূমিকায়’ দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। শহরে কান পাতলে শোনা যাবে, সাতের দশক থেকে কাঁথি কার্যত অধিকারী বাড়ির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেই সুবাদে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষের সঙ্গে শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। পুরসভার ২১টি ওয়ার্ডে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভোটার রয়েছে। এদিন শুভেন্দু যে সব এলাকায় ঘুরেছেন সে সব এলাকায় হাজারখানেক সংখ্যালঘু ভোটারের বসবাস। গোটা শহর জুড়ে ন’হাজারের বেশি সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। পুরভোটে তৃণমূলকে ঠেকাতে এবং নিজের ঘর অটুট রাখতে তাঁদের সমর্থন যে প্রয়োজন তা শুভেন্দু অনুভব করতে পেরেছেন বল মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এদিন শুভেন্দু কিছুটা হুমকির সুরে বলেন, ‘‘সমস্ত ভোটার বুথে যেতে পারবেন। তার জন্য আমরাই বন্দোবস্ত করব। কাঁথি-সহ বাকি পুরসভাগুলিতে ভোটের আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। বিধাননগরেও ভোট দিতে পারেননি এমন দশ হাজার বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরসহ হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছি।’’
তবে পুরভোটের প্রাক্কালে শুভেন্দুর ‘অন্যরকম’ প্রচারে আলাদা রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। কাঁথি পুরসভা নির্বাচনী কমিটির অন্যতম সদস্য ও পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন, ‘‘উনি বহুরূপী, বসন্তের কোকিল। কখন কী বলেন আর কী করেন নিজেই বুঝতে পারেন না। পুরভোটের ঠেলায় পড়ে সংখ্যালঘুদের সমর্থন ফিরে পেতে চাইছেন।’’
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘শুধু শুভেন্দু নন, ওঁর পরিবারের সঙ্গে কাঁথির মানুষের আত্মিক সম্পর্ক। তা ছাড়া উনি সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শাসকদল এটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে।’’ আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা চার দিন কাঁথিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শুভেন্দু প্রচার করবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy