Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Contai Kapalkundala Temple

পুজোর আগেও মূর্তিহীন কপালকুণ্ডলা মন্দির

কপালকুণ্ডলা মন্দিরকে ঘিরে সার্কিট টুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

বেহাল কপালকুণ্ডলা মন্দির।

বেহাল কপালকুণ্ডলা মন্দির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫১
Share: Save:

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’র ভাবনার বীজ বপন হয়েছিল এই মন্দির থেকেই। প্রায় দেড় দশক ধরে সেই মন্দির পড়ে রয়েছে মূর্তিহীন অবস্থায়। সর্বত্র যেখান শ্যামা মায়ের আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, তখন এবছরও মূর্তিহীন দেশপ্রাণ ব্লকের দরিয়াপুরের কপালকুণ্ডলা মন্দির। এমনকী, কষ্টিপাথরের পুরনো মূর্তিরও কোনও হদিস নেই।

প্রায় ১০০ বছর আগে কপালকুণ্ডলা নামে এক নারীর হাত কেটে বলি দিচ্ছিলেন এক কাপালিক। সে সময় তাঁকে উদ্ধার করেন নবকুমার এক যুবক। তারপর থেকেই কপালকুণ্ডলা মন্দিরে কালীপুজোর প্রচলন। এমনই জনশ্রুতি রয়েছে দরিয়াপুরে। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরের সংস্কারের জন্য ২০১৩ সালে উদ্যোগী হয় সরকার। ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই বছরই সংস্কারের কাজ শেষ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। একেবারে নতুন রূপে সেজে ওঠে কপালকুণ্ডলা মন্দির। কিন্তু মন্দিরের ভেতরে সেই সময় থেকেই কোনও কালী মূর্তি বসানো হয়নি। এদিকে, সংস্কারের কয়েক বছর পরই ফের মন্দির বেহাল হয়েছে। ছাদ থেকে চুঁইয়ে জল পড়ে। দেওয়ালের প্লাস্টারও খসে পড়ে কিছু কিছু অংশে।

গোটা মন্দির সংস্কারের পরও অনেক ফাঁকফোঁকর রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নবকুমার জানা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘মন্দিরের যেখানে সেখানে ভেঙে গিয়েছে। মন্দির মূর্তিহীন। অথচ এই মন্দির দেখতে প্রতিদিন নানা প্রান্ত থেকে লোকেরা আসেন।’’ মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভবেশচন্দ্র জানা বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। বহু পর্যটক নিয়মিত মন্দির দেখতে আসেন। মন্দিরের দরজা খুলে দিই। মূর্তিহীন অবস্থা দেখে তাঁরা ফিরে যান।’’

এ বছরও কালীপুজোর দিন মূর্তিহীন অবস্থাতেই থাকবে কপালকুণ্ডলা মন্দির। যা নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কপালকুণ্ডলার মূল মন্দির থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সম্প্রতি একটি নতুন কালি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই কয়েক বছর ধরে কালী মায়ের পুজো করা হয়।

কপালকুণ্ডলা মন্দিরকে ঘিরে সার্কিট টুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। গত বছর ডিসেম্বরে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক এবং রাজ্য পর্যটন দফতরের সচিবকে চিঠিও দিয়েছিলেন। সে সময় জানানো হয়েছিল, কপালকুণ্ডলা মন্দির এবং পার্শ্ববর্তী পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দর ও স্থানীয় লাইট হাউসকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কী উন্নয়ন করা দরকার, তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে। মন্দিরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি, কোন প্রকল্প থেকে ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য কী করা যায়, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছিল। যদিও এরপর কপালকুণ্ডলা মন্দির নিয়ে আর কোনও পদক্ষেপ প্রশাসনিকভাবে করা হয়নি।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ জানা বলেন, ‘‘কপালকুণ্ডলা মন্দির এবং সংলগ্ন শিবালয় মন্দির সংস্কার হয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে। সেখানে কালীর মূর্তি বসানোর দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। এ বছর সেখানে স্থায়ী প্রতিমা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে মন্দির ফের সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নতুন মূর্তি বসানো সম্ভব নয়।’’ কিন্তু কপালকুণ্ডলা মন্দিরের কষ্টি পাথরের তৈরি পুরনো মূর্তি গেল কোথায়? সেই প্রশ্নের উত্তর এখন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE