Advertisement
E-Paper

বিরোধীদের বন্‌ধে সাড়া রেলশহরে

ত্রিশঙ্কু পুরবোর্ড গঠনের এক সপ্তাহ আগে তৃণমূল বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির পথে নেমে প্রতিবাদে রামধনু জোটের সম্ভাবনা উস্কে গিয়েছে রেলশহর খড়্গপুরে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার সে কথাই বলেছেন। গত রবিবার খড়্গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী বিজেপি কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্তের স্বামী রাজুকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০১:০৩
বন্‌ধ চিত্র। গোলবাজারে বন্ধ সব দোকান ।

বন্‌ধ চিত্র। গোলবাজারে বন্ধ সব দোকান ।

ত্রিশঙ্কু পুরবোর্ড গঠনের এক সপ্তাহ আগে তৃণমূল বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির পথে নেমে প্রতিবাদে রামধনু জোটের সম্ভাবনা উস্কে গিয়েছে রেলশহর খড়্গপুরে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার সে কথাই বলেছেন।

গত রবিবার খড়্গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী বিজেপি কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্তের স্বামী রাজুকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তবে সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় রক্ষা পান রাজু। এই ঘটনার পরেই রেলশহরে জোট বেঁধেছে বিরোধী দলগুলি। রবিবারই থানায় গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম কাউন্সিলররা। তারপর মঙ্গলবার তিন দলের নেতারা বৈঠকে বসে সম্মিলিত প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেন। শহরে দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টারও বন্‌ধও ডাকা হয়। কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম দলগুলি ছাড়াও বন্‌ধকে সমর্থন জানায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। ফলে, এ দিন শহরের বেশিরভাগ দোকানপাটই বন্ধ ছিল। তবে কিছু বাস চলেছে। বন্‌ধ ঠেকাতে পথে নেমেছিল পুলিশ। পাঁচ বন্‌ধ সমর্থককে আটকও করা হয়। বন্‌ধের বিরোধিতায় মিছিল করে তৃণমূলও। তবে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “যারা জোর করে মানুষের কাজে বাধা দিয়েছে বা দোকান বন্ধের চেষ্টা করেছে তাদের আটক করা হয়েছে।”

বিরোধী দলের নেতারা অবশ্য দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে এই হাতে হাতকে পুরবোর্ড গঠনের প্রাক্কালে রামধনু জোট বলতে নারাজ। বিজেপির খড়্গপুর শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা, শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস, সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল সকলেরই বক্তব্য, এই প্রতিবাদ দুষ্কৃতীরাজের বিরুদ্ধে। পুরবোর্ড গঠনের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। তৃণমূল অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “এর আগেও শহরে অনেক অপরাধ হয়েছে। তখন তো কেউ বন্‌ধ ডাকেনি। এই বন্‌ধ যে রাজনৈতিক স্বার্থে ডাকা হয়েছিল তা স্পষ্ট।’’ তৃণমূলের বোর্ড গঠন ঠেকাতেই বিরোধীরা একজোট হয়েছে বলে দাবি এই তৃণমূল নেতার।


দরজা খোলেনি খড়্গপুর পুরসভারও ।

খড়্গপুরে দুষ্কৃতীরাজ দীর্ঘ দিনের। রেলের ঠিকাদারি থেকে ছাঁট লোহার নিলাম ঘিরেই বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল মাফিয়াদের। এক সময় শহরের ত্রাস ছিলেন রেল মাফিয়া বাসব রামবাবু। প্রয়াত সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের ছেলে গৌতম চৌবে খুনে পরে গ্রেফতার হন তিনি। তবে আপাতত জামিনে মুক্ত। রামবাবু জেলে থাকাকালীন দাপট বাড়ে আর এক মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর। তবে তাকেও বেশিদিন জেলবন্দি রাখা যায়নি। রেলশহরের রাজনীতির সঙ্গে এই মাফিয়ারাজের সম্পর্কও ওতপ্রোত। এ বারের পুরভোটে তো শ্রীনুর স্ত্রী পূজা বিজেপির টিকিটে জিতেছেন। আর রামবাবু তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করেছিলেন।

পুরভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ার পরে রাজনীতির সঙ্গে দুষ্কৃতী দুনিয়ার যোগ অন্য মাত্রা পেয়েছে রেলশহরে। অভিযোগ, বিরোধী কাউন্সিলর ভাঙাতে শাসক তৃণমূল পুলিশের সাহায্য নিয়ে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করছে। বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর উপর হামলা তারই পরিণাম।


বন্‌ধের বিরুদ্ধে শহরের রাস্তায় তৃণমূলের বাইক মিছিল।

এ দিন সকাল ৬টা থেকে বন্‌ধ শুরু হয়। মালঞ্চ, নিমপুরা, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, প্রেমবাজারে বেশিরভাগ দোকানই খোলেনি। তবে গোলবাজার, ইন্দা, কৌশল্যা বাজারে সব্জি বিক্রেতারা এসেছিলেন। তবে বেলা বাড়তেই বন্ধ হয়ে যায় বাজারও। রাজু গুপ্তের বাড়ির এলাকা খরিদা বাজার এ দিন একেবারে বন্ধ ছিল। বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ পুরীগেটের কাছে কিছু বন্‌ধ সমর্থক রাস্তা অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাঁদের তাড়া করে। আটক করা হয় তিন জন কংগ্রেস ও বাম সমর্থককে। ইন্দাতেও পুলিশ দোকান খুলতে বললে গোলমাল বাধে। তখন দু’জন বন্‌ধ সমর্থককে আটক করা হয়। তবে বাস আটকায়নি বন্‌ধ সমর্থকেরা। বেশিরভাগ অটোও চলেছে। খোলা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস। তবে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল।

বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুষ্কৃতী সমস্যা খড়্গপুরে নতুন নয়। তবে শাসকদল তৃণমূল যে ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করছে তা মানুষ মানতে পারছে না। তাই বন্‌ধে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছে।।” একই মত শহর কংগ্রেস সভাপতি অমলবাবু, সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্টের। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “এক ব্যবসায়ী ভাইয়ের উপর হামলার প্রতিবাদে আমরা বন্‌ধকে সমর্থন করেছিলাম। শহরবাসী তাতে সাড়া দিয়েছেন।” তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিসবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘মানুষের সমর্থনের অভাবে বন্‌ধ ব্যর্থ হয়েছে।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

kharagpur strike trinamool TMC cpm congress bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy