E-Paper

একুশে বক্তা বদল, বিরবাহা নন দুলাল

বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন দুলাল। মিনিট দশেকের বক্তৃতায় বেশিরভাগটাই সাঁওতালিতে বলেন তিনি। শেষে অবশ্য বাংলাতেও বলেন ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
ধর্মতলায় বক্তৃতা করছেন দুলাল মুর্মু। রবিবার।

ধর্মতলায় বক্তৃতা করছেন দুলাল মুর্মু। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

একুশের মঞ্চে জনজাতি সাঁওতাল বক্তার মুখ বদল হল! অন্যবার জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম বিধানসভা থেকে নির্বাচিত বিরবাহা হাঁসদা একুশের সমাবেশ মঞ্চে বক্তৃতা করতেন। রবিবার একুশের মঞ্চে মন্ত্রী বিরবাহার বদলে বললেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু।

২০২২ ও ২০২৩ সালে একুশের মঞ্চে বিরবাহা বক্তৃতা করেছিলেন। এ বারও মঞ্চে ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার আর বলার সুযোগ মেলেনি। কেন এই পরিবর্তন? প্রকাশ্যে সকলেই বলছেন, দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে বক্তার তালিকা রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্বই ঠিক করেন। তবু তৃণমূলের অন্দরে এ নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। একাধিক কারণ আলোচনায় আসছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে ৩৮,২৪০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বিরবাহা। এ বার মন্ত্রীর বিধানসভায় তৃণমূলের লিড ১৪,১০১। গতবার ২২,৭৫৪ ভোটের ব্যবধানে নয়াগ্রাম বিধানসভায় জয়ী হন দুলাল। এ বার লোকসভা ভোটে নয়াগ্রামে তৃণমূল ২৪,২৬৫ ভোটে এগিয়ে। অর্থাৎ দুলাল দলের ব্যবধান বাড়ালেও তা পারেননি বিরবাহা। সে ক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, গোপীবল্লভপুর-সহ একাধিক বিধানসভায় তো এমনই হয়েছে। তা হলে? দলের একাংশের ব্যাখ্যা, ভোটে জেলায় নেতৃত্বের কার্যকলাপ রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্বের নজরে ছিল। এ দিন একুশের সভায় তা জানিয়েওছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তবে কি বিরবাহার কাজে সন্তুষ্ট নন শীর্ষনেতৃত্ব? এ সম্ভাবনার আলোচনার পাশাপাশি চর্চায় আসছে বিরবাহা সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক পদে স্বজনপোষণের অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ‘পছন্দের’ লোকদের পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগেও দলের অন্দরে বিদ্ধ হয়েছেন মন্ত্রী। এ সব কিছুরই নির্যাস সম্ভবত একুশের মঞ্চে সাঁওতাল বক্তার মুখ বদল। এ প্রসঙ্গে বিরবাহা বলেন, ‘‘সব সময় আমি বক্তৃতা করব এমন বাধ্যবাধকতা তো নেই। এবার নতুন বক্তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’’

বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন দুলাল। মিনিট দশেকের বক্তৃতায় বেশিরভাগটাই সাঁওতালিতে বলেন তিনি। শেষে অবশ্য বাংলাতেও বলেন ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতি। জনজাতিদের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দেন দুলাল। মোদীর নাম না-করে তাঁকে ‘হিটলার’ আখ্যা দিয়ে দুলাল বলেন, ‘‘আদিবাসীদের সম্মান, তফসিলিদের ইজ্জত এই হিটলার ধ্বংস করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যের ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথরকে (বাম) গঙ্গায় ছুড়ে ফেলেছিলেন। এবার সারা দেশের মানুষ বিজেপিকে টলিয়ে দিয়েছে। বিজেপির অহমিকা, দাম্ভিকতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সময়ের অপেক্ষা।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে সারা দেশ থেকে বিজেপিকে গুজরাতের রাস্তা দেখিয়ে কচ্ছের রণ ধরিয়ে আরব সাগরে বিসর্জন দেওয়া হবে।’’

তিনবারের বিধায়ক দুলাল। বরাবর মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলেন তিনি। কিন্তু কোন অঙ্কে বিরবাহার পরিবর্তে দুলালকে বেছে নেওয়া হল? দলের অন্দরে চর্চা, ঝাড়গ্রাম জেলায় আদিবাসী মুখের ক্ষেত্রে খুব বেশি বিকল্প নেই রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্বের। এ ছাড়া ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনটি ছিনিয়ে আনার ক্ষেত্রে আপাতত দুলালকেই কাণ্ডারী মানছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। একুশের মঞ্চে বক্তৃতার সুযোগ তো বড় স্বীকৃতি। দুলাল বলছেন, ‘‘ঐতিহাসিক দিনে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে সমাবেশ মঞ্চে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য। নেতৃত্বের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’ জনজাতি-কুড়মি ভারসাম্যের অঙ্কে এ দিন আমন্ত্রিত হয়ে মঞ্চে ছিলেন এনআইএ মামলায় জামিনে মুক্ত তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো।

দুলাল যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন মঞ্চে ছিলেন অভিষেক। দুলালের পরই অভিষেক বক্তৃতা করেন। জানিয়ে দেন, দলের যে সব জনপ্রতিনিধি পদে থেকেও এ বার লোকসভা নির্বাচনে মানুষকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন, বা তাঁদের নির্দিষ্ট এলাকা থেকে প্রত্যাশিত বা আশানুরূপ ফল হয়নি, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।

নেহাতই সমাপতন। নাকি নিখুঁত চিত্রনাট্য!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy