Advertisement
২২ মে ২০২৪

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন চন্দ্রকোনায়

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে খবর, চন্দ্রকোনা-২ ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীর সঙ্গে এলাকায় প্রবীণ তৃণমূল নেতা মধু কুশারীর গোলমাল দীর্ঘদিনের। সম্পর্কে মধুবাবু অমিতাভবাবুর বাবা।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূল কর্মী খুনের অভিযোগ উঠল চন্দ্রকোনায়। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে বসনছড়া পঞ্চায়েতের ছোট মুইদা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম তন্ময় কোলে (৪৬)।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রে খবর, চন্দ্রকোনা-২ ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীর সঙ্গে এলাকায় প্রবীণ তৃণমূল নেতা মধু কুশারীর গোলমাল দীর্ঘদিনের। সম্পর্কে মধুবাবু অমিতাভবাবুর বাবা। বর্তমানে দলের কোনও পদে না থাকলেও বসনছড়া এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত মধুবাবু। ব্লক সভাপতি হলেও ওই এলাকায় তাঁর দাপট সে ভাবে না থাকায় এলাকার দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাবার সঙ্গে অমিতাভবাবুর গোলমাল চলছে বলে দলেরই একাংশ জানিয়েছেন। তার জেরে মাঝেমধ্যে দুই নেতার অনুগামীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই খুন বলে মনে করছে দলের একাংশ। মধুবাবুর অনুগামী হিসাবে এলাকায় পরিচিত তন্ময়বাবুকে খুনের পিছনে অমিতাভবাবুর লোকজনেরই হাত রয়েছে বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ মোটর বাইকে রেশন দোকানে যাচ্ছিলেন ছোট মুইদা বুথ কমিটির সদস্য তন্ময় কোলে। অভিযোগ, বাড়ির অদূরে ওই বুথ কমিটির সভাপতি শান্ত কোলে ও তার দলবল গরুর গাড়ি দিয়ে তাঁর পথ আটকায়। তন্ময়বাবু কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁশ দিয়ে তাঁকে পেটাতে শুরু করে শান্ত কোলের দলবল। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় লোকজন তন্ময়বাবুকে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয় তন্ময়বাবুর।

মধুবাবুর অভিযোগ, “ব্লক সভাপতির আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।” যদিও অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘দলের এক সক্রিয় কর্মী খুন হয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।” বাবার অভিযোগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “বাবা ও ছেলের মধ্যে দ্বন্দ্বে দল বিব্রত। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্লক সভাপতিকে লিখিতভাবে সব তথ্য জানাতে বলেছি।”

নিহত তৃণমূল কর্মী তন্ময়। রবিবার চন্দ্রকোনায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিহত তন্ময়বাবুর স্ত্রী সুজাতা কোলেরও দাবি, “ব্লক সভাপতির মদতেই আমার স্বামীকে খুন হতে হল। আমি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।” পরিস্থিতি সামাল দিতে চন্দ্রকোনা জুড়ে শুরু হয়েছে পুলিশি টহল। ছোটমুইদা গ্রামেও পুলিশ রয়েছে। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে, এলাকা দখল নিয়ে ক্রমশ তপ্ত হচ্ছে চন্দ্রকোনা। একই পরিস্থিতি চন্দ্রকোনা থানার ক্ষীরপাই ব্লকেও। মূলত পঞ্চায়েতের কাজকর্ম, ত্রাণ বিলি, দলীয় অফিস দখল, ঠিকাদারের কাছ থেকে তোলা আদায়, বালি চুরিতে মদত প্রভৃতি নানা কারণেই বিবাদ বেধেছে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। কিছুদিন আগে ছোট মুইদা গ্রামে জমি কেনাবেচা নিয়ে লক্ষাধিক টাকা লেনদেন হয়েছিল বলে তৃণমূলের একাংশ সূত্রে খবর। সেই টাকা ছিল ব্লক সভাপতির ঘনিষ্ঠ শান্ত কোলের হেফাজতে। দলের নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় নিয়ে আপত্তি করেন তন্ময়বাবু। এ নিয়ে ক’দিন আগেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতিও হয়। তৃণমূলের এক কর্মীর কথায়, “দলীয় তহবিলের টাকার ভাগ-সহ এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।’’ তাঁর আশঙ্কা, এখনও জেলা তথা রাজ্যের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে রাশ টানতে না পারলে এ ধরনের ঘটনা যে আর ঘটবে না তার নিশ্চয়তা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE