কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলন হয়ে গেল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা নিয়ে সেখানে কথা হয় কি না, কৌতূহল ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের শিল্পমহলের। তবে সেই প্রসঙ্গ সরাসরি সেখানে ওঠেনি। সম্মেলনে সৌরভকে শুধু বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি ব্যবসার খুব একটা বুঝি না। তবে গত কয়েক বছর ধরে লগ্নি করার চেষ্টা করছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর আধিকারিকদের থেকে ভীষণ সমর্থন ও সাহায্য পাই।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘সৌরভ ভেঙে বলল না। ও নিজেও কিন্তু বিনিয়োগ করছে।’’
যে জমি প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার জন্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলা বিচারাধীন। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সে জন্যই সৌরভ বা মুখ্যমন্ত্রী কেউই ভেঙে কিছু বলেননি। তবে ঘটনায় হতাশ জেলার শিল্পমহল। পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক চন্দন বসু বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনে সৌরভদের কারখানার প্রসঙ্গ আসবে। তা না হওয়ায় আমরা খানিক আশাহতই। তবে আমরা আশায় থাকছি, ওই বড় শিল্পটা আমাদের জেলাতেই হবে। জেলার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’
শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা দিনের আলো দেখেনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার কী হবে, চর্চা শুরু হয়েছে জেলার শিল্পমহলে। সব ঠিকঠাক থাকলে সৌরভদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কথা চন্দ্রকোনা রোডের (গড়বেতা-৩ ব্লক) ডুকিতে। এক সময়ে মনে করা হয়েছিল, ওই কারখানা গড়ে উঠতে পারে শালবনিতে। জিন্দলদের কারখানার আশেপাশে। পরে স্থান বদল হয়েছে।
ডুকিতে প্রয়াগ ফিল্মসিটির জমিতেই ইস্পাত কারখানা হওয়ার কথা। ওই জমির অনেকটাই ফিল্মসিটি কর্তৃপক্ষের হাতে ছিল না। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে চলে গিয়েছিল। এক সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়, চন্দ্রকোনা রোডে শিল্প গড়তে রাজ্য এক টাকায় প্রায় ৩৫০ একর জমি লিজ়ে দেবে শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। পরে প্রায় ৩১৮ একর জমি নিগমকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। সৌরভদের শিল্প সংস্থাকে এই জমিই দেওয়া হয়।
চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে প্রয়াগের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল রাজ্য। তালিকায় ছিল ডুকির জমিও। তা নিষ্পত্তির আগেই কেন জমি অন্যকে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্নে মামলা হয়েছে। আমানতকারীরা চাইছেন, আগে তাঁদের টাকা ফেরানো হোক। গবাদি পশু বেচে ও স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে সাত লক্ষ টাকা প্রয়াগে জমা করেছিলেন বসন্ত জানা। তিনিও বলেম, ‘‘আগে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। তারপর ওখানে যাই হোক, দেখতে যাব না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)