Advertisement
E-Paper

পছন্দের বিষয় পড়ার নয়া সুযোগ

পথ দেখিয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বার সেই পথে এগোচ্ছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ও। কলা-বাণিজ্য-বিজ্ঞান ইত্যাদি শাখা বিভাজনের গণ্ডি ছাপিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে মূল বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের যে কোনও বিষয় পড়তে পারেন, সেই লক্ষ্যে মেদিনীপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকোত্তরে চালু হচ্ছে ‘চয়েস-বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’, সংক্ষেপে সিবিসিএস।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০২:৪১

পথ দেখিয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বার সেই পথে এগোচ্ছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ও।

কলা-বাণিজ্য-বিজ্ঞান ইত্যাদি শাখা বিভাজনের গণ্ডি ছাপিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে মূল বিষয়ের সঙ্গে পছন্দের যে কোনও বিষয় পড়তে পারেন, সেই লক্ষ্যে মেদিনীপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকোত্তরে চালু হচ্ছে ‘চয়েস-বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’, সংক্ষেপে সিবিসিএস। এর ফলে কেউ চাইলে পদার্থবিদ্যার সঙ্গে অর্থনীতি পড়তে পারেন কিংবা গণিতের সঙ্গে বাংলা বা ইংরাজি সাহিত্য। পরের বার থেকে স্নাতকেও এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এ বার স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে সিবিসিএস চালু হবে। এর ফলে, ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক ‘অপশন’ খুলে যাবে। চাইলে বাণিজ্য শাখায় স্নাতকও ইংরাজি সাহিত্য নিতে পড়তে পারবেন।”

শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে ইতিমধ্যে সারা দেশে ‘নিউ এডুকেশন পলিসি’ (এনইপি) তৈরি হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতর চাইছে, চাকরির ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের দক্ষতা বাড়াতে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘গ্রেডিং সিস্টেম’ চালু করতে। উচ্চশিক্ষার সব ক্ষেত্রেই ‘গ্রেডিং সিস্টেম’ চালু হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। এর ফলে, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় সমতা আনা সম্ভব। যা পড়ুয়াদের দক্ষতা যাচাই করতেও সাহায্য করবে। এই পরিস্থিতিতে সিবিসিএস চালু হলে ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন সমান্তরাল ভাবে হবে বলেই মনে করছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্ধালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। প্রতিটি বিভাগই ইলেকটিভ কোর্স হিসেবে দু’টি করে কোর্স অফার করবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

তবে নতুন এই ব্যবস্থায় মূল একটি বিষয় (কোর কোর্স) থাকবেই। সেটা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, দু’টি ইলেকটিভ কোর্সও থাকবে। পড়ুয়ারা অনেকগুলো কোর্সের মধ্যে থেকে এই ইলেকটিভ কোর্স বাছাই করার সুযোগ পাবে। মাইক্রো বায়োলজি নিয়ে পড়া কোনও ছাত্রছাত্রী যদি ইলেকটিভ কোর্স হিসেবে পরিবেশবিদ্যা রাখতে চায় রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা হবে সেমিস্টার ভিত্তিক। পছন্দের ইলেকটিভ কোর্স যদি নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার সুযোগ না থাকে তাহলে তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পড়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অমলকুমার মণ্ডল বলেন, “এই পাঠ্যক্রম চালু করে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে, ইতিহাসের কোনও ছাত্র ইচ্ছে থাকলে উদ্ভিদবিদ্যার একটি কোর্সও পড়তে পারেন। এতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুপ্রাণিত হবে।”

বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিবিসিএস চালু রয়েছে। এ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই সিস্টেম চালু হয়েছে। রাজ্যের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু হয়েছে এই ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে অবশ্য শিক্ষাবিদ মহলে দু’ধরনের মতই রয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় যেমন মনে করছেন, ‘‘এই পদ্ধতি পড়াশোনাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে।’’ তবে শিক্ষক-শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, নির্দিষ্ট পরিকাঠামো না থাকলে এই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়। যেহেতু নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই নিয়ে পড়া যাবে তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিও তেমন পরিকাঠামো সম্পন্ন হতে হবে। নিজের বিষয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ অন্য বিষয় পড়তে গেলে পড়াশোনায় তার অন্য প্রভাব পড়তে পাড়ে বলেও মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনও সকলে চাকরি পেতেই পড়াশোনা করে। সেখানে এই নয়া নিয়ম কতখানি কার্যকরী হবে তা প্রশ্নের।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘এই পদ্ধতিতে পড়াশোনা বস্তুত ভুল পদ্ধতি, রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করলে সেই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত বিষয় বেছে নেওয়াই ঠিক। তাতে পড়াশোনার সাযুজ্য থাকে।’’

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “পছন্দসই বিষয় নিয়ে পড়ার দরজা খুলে দিতেই ইউজিসি এই সিবিসিএস চালুর কথা বলছে। আজকের দিনে একাধিক বিষয় রপ্ত থাকলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীও বলেন, “এই সিস্টেমের ফলে ছাত্রছাত্রীরাই উপকৃত হবে। তাঁরা নিজেদের পছন্দসই বিষয় নিতে পড়তে পারবে।”

Vidyasagar University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy