মন্দারমণিতে সরকারি জমিতে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে গড়ে উঠতে চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রশাসন সূত্রের খবর, সে জন্য ১৫ একর জমি রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দিতে জেলা প্রশাসনের তরফে একটি প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
গত বছর স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়ে জমি চেয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ। সে সময় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দিঘা সারদা রামকৃষ্ণ সেবাকেন্দ্রকে জানানো হয়েছিল, মন্দারমণি এবং সিলামপুর মৌজায় যথাক্রমে ২১১, ১১৭, ১০২ নম্বর দাগে ১৩ একর খাস জমি রয়েছে। তখন জমি পরিদর্শন করেছিলেন দিঘা সারদা রামকৃষ্ণ সেবাকেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। এর পরে গত এপ্রিলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান পর্বে রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। মিশন কর্তৃপক্ষ ফের প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেন। দিঘা সারদা রামকৃষ্ণ সেবাকেন্দ্রের সম্পাদক স্বামী নিত্যবোধানন্দ বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৫ একর জমি দরকার। জমি ঘুরে দেখেছি। তবে তার কিছুটা অংশ সিআরজেড এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিকল্প জমির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে জেলাশাসকের দফতরে চূড়ান্ত হতে পারে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই জমিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এলাকার ছেলেমেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে হাতেকলমে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সারা দেশে আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য ‘একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়’ রয়েছে। এ রাজ্যের একাধিক জেলায় এ ধরনের স্কুল রয়েছে। তবে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম একলব্যের পরিচালনার ভার ২০১৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেয় রাজ্য। সেই হস্তান্তরের পর থেকে সাফল্যের মুখ দেখেছে স্কুলটি। কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানা বলেন, ‘‘জমিটি খুঁটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য চাইলে রামকৃষ্ণ মিশনকে ওই জমি দিতে পারে প্রশাসন।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মিশনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। এ ব্যাপারে রামকৃষ্ণ মিশনের সম্মতি পাওয়ার পর সেটি প্রস্তাব আকারে রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। চূড়ান্ত সম্মতি পেলে জমি তুলে দেওয়া হবে রামকৃষ্ণ মিশনকে।’’
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক বলেন, ‘‘শুনেছি মন্দারমণিতে একটা মূল্যবান জমির রামকৃষ্ণ মিশনকে দেওয়া হবে। ওখানে প্রকৃত অর্থে কি উন্নয়ন হবে, জানি না। আসলে এ রকম উদ্যোগকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)