E-Paper

জনজাতিদের সংগঠিত করতে মরিয়া তৃণমূল

 ‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসার কথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ ০৮:০০
জনজাতিদের সংগঠিত করতে মরিয়া তৃণমূল। 

জনজাতিদের সংগঠিত করতে মরিয়া তৃণমূল।  প্রতীকী চিত্র।

মেদিনীপুর ও দাসপুর: পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। তার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে জাতিভিত্তিক ‘দ্বন্দ্বে’র আবহ। নিজ নিজ দাবিতে পথে সাঁওতাল, কুড়মিরাও। সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসক তৃণমূলের একাংশ। জঙ্গলমহলে পিছিয়ে পড়া, জনজাতি মানুষের বাসই বেশি। গত পঞ্চায়েত ভোটে জনজাতিদের একটা বড় অংশ ঝুঁকেছিল বিজেপির দিকে। ‘জমি’ হারিয়েছিল তৃণমূল। এ বারের পঞ্চায়েতে শাসক দল এখানে আরও বেশি ‘জমি’ হারাতে পারে বলেই আশঙ্কা। সেই অনুন্নয়ন এবং নানা দাবিদাওয়া ঘিরে ফের ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনজাতিদের সংগঠিত করতে মরিয়া তৃণমূল।

‘তৃণমূলের নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসার কথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সব ঠিক থাকলে অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা এ জেলায় পৌঁছবে ২৬ মে। শুরুটা হতে পারে জনজাতি অধ্যুষিত কেশিয়াড়ি দিয়েই। দলীয় সূত্রে খবর, তার আগেই জেলা সদর মেদিনীপুরে জনজাতিদের এক জমায়েত করতে চলেছে তৃণমূল। নির্দেশ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জমায়েতের প্রস্তুতি উপলক্ষে ব্লকে ব্লকে দলের ‘আদিবাসী সেলে’র মিটিং, সম্মেলনও হবে। সব ঠিক থাকলে ১৪ মে মেদিনীপুরে ওই জমায়েত হতে পারে। সেই মতোই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতি মানছেন, ‘‘আমরা আদিবাসী মানুষদের নিয়ে একটা কর্মসূচি করব। মেদিনীপুরে কলেজ মাঠে জমায়েত করব। আদিবাসী জমায়েত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে।’’ জমায়েত সমাবেশ ঘিরে, না মহামিছিল? দল সূত্রে খবর, গরমে সমাবেশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। মহামিছিলই হতে পারে। জনজাতিদের বড় অংশ তাদের সঙ্গেই রয়েছে, জমায়েতের মধ্য দিয়ে সেই বার্তাই দিতে চাইছে শাসক দল।

কুড়মি সমাজের আন্দোলনে সম্প্রতি নাজেহাল হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশও। জাতীয় সড়ক, রেললাইন দীর্ঘ সময়ে অবরুদ্ধ থেকেছে। আবার মেদিনীপুরে জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করে রেখেছিল একটি আদিবাসী সামাজিক সংগঠন। একদিন কার্যত স্তব্ধই ছিল কালেক্টরেট। আদিবাসী সংগঠনগুলির দাবি কিন্তু মূলত কুড়মি সংগঠনগুলির দাবির বিরুদ্ধে। কুড়মিরা দাবি তুলেছেন, তাদের জনজাতি (এসটি) তালিকাভুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে, আদিবাসী সংগঠনগুলির দাবি, কুড়মিদের মতো অ-আদিবাসীদের জনজাতি তালিকাভুক্ত করা যাবে না। জাতিভিত্তিক ‘দ্বন্দ্বে’র আবহে জঙ্গলমহলে নতুন করে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা। চিন্তায় তৃণমূলের একাংশও। দলের সভা, বৈঠকে নেতাদের বক্তব্যে উদ্বেগ ধরাও দিচ্ছে। শনিবার মেদিনীপুরে দলের সাধারণ সভায় জেলা কো- অর্ডিনেটর অজিতকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমরা কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করে দেখছি, আমাদের জেলায়ও, সহজ- সরল আদিবাসী ভাইবোনেদের কেউ কেউ বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী ভারতবর্ষের মধ্যে, যিনি আদিবাসী ভাইবোনেদের সর্বাত্মক উন্নয়ন করেছেন। বাদ বাকি যারা আদিবাসী ভাইবোনেদের বন্ধু সাজার চেষ্টা করে, তারা কিন্তু আদিবাসী ভাইবোনেদের বন্ধু নয়, শত্রু। এটা আদিবাসী মানুষেরা বুঝতে পারবেন।’’ গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনজাতি মানুষকে বোঝানোর নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কোনও আদিবাসীর জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। পশ্চিমবঙ্গে আইন করে দিয়েছেন। আমরা বলব না? প্রচার করুন। পোস্টার টাঙান, ফ্লেক্স টাঙান।’’

এ জেলায়ও তৃণমূলের জনজাতি ভোটব্যাঙ্কে প্রথম ভাঙন ধরে গত পঞ্চায়েতেই। দেখা যায়, জেলার মধ্যে শালবনি, মেদিনীপুর সদর, নারায়ণগড়, খড়্গপুর গ্রামীণ, কেশিয়াড়ি, গোয়ালতোড়ের মতো জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্ম ফুটেছে! রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ভোট এলেই জঙ্গলমহলে জনজাতি ও কুড়মিদের জাতিসত্তা সহ নানা দাবি জোরালো হতে শুরু করে। এ বার তা আরও জোরালো!

মেদিনীপুরে জনজাতি জমায়েতের প্রস্তুতি, তাহলে কি পাল্টা আন্দোলনে যাচ্ছে তৃণমূল? তৃণমূলের জেলা কো- অর্ডিনেটর অজিত বলেন, ‘‘আমাদের সরকার, আমাদের দলকে যারা ছোট করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনেই শামিল হচ্ছি।’’ এদিন দাসপুরে মহিলা তৃণমূলের এক কর্মসূচিতে আক্রমণাত্মক ছিলেন অজিত। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘‘দিল্লিতে কুড়মি বিরোধী সরকার। মাহাতো বিরোধী সরকার। কোনও কোনও জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে সরল সাদাসিধে কুড়মি ভাই-বোনেদের কেউ কেউ ক্ষেপিয়ে দিয়ে আন্দোলন করছে। ওই সব নেতাদের দিল্লিতে দেওয়ার দম নেই। তারা জানে রাজ্য সরকার কুড়মিদের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘কেউ যদি ভাবে তৃণমূলকে ভোট প্রচার করতে দেবে না, দেওয়াল লিখতে দেবে না। তাহলে জেনে রাখুন, আমরাও বসে নেই। আমরা দেওয়াল লিখবই। ভোট প্রচার করবই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panchayat Election TMC Scheduled Tribe

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy