মা ও দিদির সঙ্গে জবাদেবী।
কুড়ি বছর পর মা ফিরে পেলেন মেয়েকে।
শনিবার তখন রাত দশটা। কনকনে ঠান্ডায় ঘাটাল থানার অজবনগর গ্রামের দোলইপাড়া তখন সুনসান। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুললেন আশি ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা মায়া দোলই। দরজা খুলেই চমকে উঠলেন মায়াদেবী। দাঁড়িয়ে কুড়ি বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে জবা। হাতে স্বর্গ পাওয়ার মতো আনন্দে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন মায়াদেবী।
ঘাটালের কোন্নগরের বাসিন্দা নিমাই পণ্ডিতের সঙ্গে বিয়ে হয় অজবনগরের বাসিন্দা জবা দোলইয়ের। বিয়ের পর থেকেই নানা বিষয়ে সংসারে গোলমাল লেগে থাকত। বছর কুড়ি আগে কোন্নগরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান জবাদেবী। একমাত্র ছেলে উত্তম পণ্ডিতের তখন বারো বছর বয়স।
মায়াদেবী বলেন, “অনেক চেষ্টা করেও মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। মনে মনে ভাবতাম মেয়ে আর বেঁচে নেই। ফের মেয়ের মুখ দেখতে পাব স্বপ্নেও ভাবিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের পর সাংসারিক গোলমালে মেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারপরে যে কোথায় চলে গেল জানি না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, আরামবাগ শহরে জবাদেবীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে শনিবার পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, তাঁর বাড়ি ঘাটালে। পুলিশ তাঁকে নিয়ে ঘাটালে নিয়ে আসে। ঠিকানা বলতে না পারায় শনিবার দিনভর ঘুরেও জবাদেবীর বাড়ির সন্ধান মেলেনি। রাতে জবাদেবীকে নিয়ে ফের ঘাটাল থানায় ফিরে আসে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, পারিবারিক অশান্তি নিয়ে অভিযোগ জানাতে কাকতালীয় ভাবে রাতেই ঘাটাল থানায় আসেন জবাদেবীর দিদির মেয়ে অনিমা বরদোলই। থানায় জবাদেবীকে দেখে মাসি বলে চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। পুলিশের এক সূত্রে খবর, জবাদেবী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা। বিগত কুড়ি বছর তিনি কোথায় ছিলেন তা জবাদেবী বলতে পারেননি।
বছর সাতেক আগেই বিয়ে হয়েছে জবা দেবীর ছেলে উত্তমের। বিয়ের পর ঘাটালের মহারাজপুরে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন উত্তম। রবিবার মায়ের ফিরে আসার খবর পেয়েই মামাবাড়িতে ছুটে আসেন তিনি। উত্তম বলেন, “মা আমাকে চিনতে পেরেছে। এ বার মাকে নিয়েই থাকব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy