Advertisement
E-Paper

ইলিশের ভরা বাজারেও ডুমুরফুল কোলাঘাট

এ বছর দিঘা, ডায়মন্ড হারবারে প্রচুর ইলিশ ওঠায় আশায় ছিলাম, এখানেও হয়তো কিছু মিলবে। কিন্তু কোথায়! আষাঢ়ের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪টি ইলিশ ধরতে পেরেছি। তাও ওজনে সব এক কিলোগ্রামের কম।’’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সাগরে এত ইলিশ উঠলেও গেঁওখালির কাছে হুগলি নদীর সঙ্গে মিশে যাওয়া রূপনারায়ণে তার দেখা নেই কেন?

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৯
অলস-মধ্যাহ্ন: গাঙে ইলিশের দেখা নেই। ঘাটেই পড়ে মেছো নৌকা। কোলাঘাটে রূপনারায়ণে। নিজস্ব চিত্র

অলস-মধ্যাহ্ন: গাঙে ইলিশের দেখা নেই। ঘাটেই পড়ে মেছো নৌকা। কোলাঘাটে রূপনারায়ণে। নিজস্ব চিত্র

সাগরে ইলিশের জোয়ার দিঘা, নামখানা, ডায়মন্ড হারবারের মৎস্যজীবীদের স্বস্তি দিয়েছে। হাসি ফুটিয়েছে ইলিশপ্রিয় বাঙালির মুখে। কিন্তু তাতেও মন ভরছে না অনেকেরই। কেননা রোজ দু’বেলা বাজারে ইলিশের দাপাদাপি চোখে পড়লেও ইলিশপ্রিয় বাঙালি যে নাম শুনলে কাতর হয়ে পড়ে সেই কোলাঘাটের ইলিশ সেখানে অদৃশ্য।

আবহাওয়ার আনুকূল্যে সাগরে ইলিশের ঝাঁক থাকলেও, একেবারেই উল্টো ছবি হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের প্রান্তে রূপনারায়ণ নদে। দিন-রাত কয়েক’শো নৌকা নদের বুক চষেও ফেললেও দেখা দিচ্ছে না রুপোলি রানি। যার স্বাদের গুণ, চড়া দামকেও পিছনে ফেলে দেয়। অথচ এমন ভরা মরসুমেও তার নাগাল না পেয়ে হতাশ কোলাঘাটের মৎসজীবীরা। এমন অবস্থা যে, রূপনারায়ণে জাল ফেলে কয়েক পুরুষ ধরে ইলিশ ধরে আসা দুই জেলার মৎস্যজীবীদের অনেকেই নদীতে জাল ফেলা বন্ধ করে নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। কেউ কেউ রুটি রুজির তাগিদে অন্য মাছের খোঁজে জাল পাতছেন।

কোলাঘাট শহর লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুরের দেনান, কোলা, সাহাপুর ও বড়িশা গ্রাম। গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই মৎস্যজীবী। দেনান গ্রামের প্রায় ৩০টি এবং কোলা গ্রামের ২০টি নৌকা মিলিয়ে দেড়শোরও বেশি মৎস্যজীবী প্রতি বছর বর্ষায় ইলিশের খোঁজে রূপনারায়ণের স্রোতে জাল পাতেন। কিন্তু এ বার দিন-রাত জাল ফেলেও ইলিশ না ওঠায় তাঁরা হতাশ। রবিবার সকালে কোলাঘাট শহরে রেল সেতুর কাছে দেখা গেল, ঘাটে সার দিয়ে বাঁধা নৌকা। নৌকায় ইলিশ ধরার জালের পাশেই রাখা অন্য মাছ ধরার জাল। ঘাটেই বসেছিলেন সত্তর ছুঁই ছুঁই মদনমোহন বেরা। দেনান গ্রামের বাসিন্দা মদনমোহনবাবু বলেন, ‘‘বছর দশেক ধরেই রূপনারায়ণে ইলিশের আনাগোনা কমেছে। কিন্তু এ বছর দিঘা, ডায়মন্ড হারবারে প্রচুর ইলিশ ওঠায় আশায় ছিলাম, এখানেও হয়তো কিছু মিলবে। কিন্তু কোথায়! আষাঢ়ের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪টি ইলিশ ধরতে পেরেছি। তাও ওজনে সব এক কিলোগ্রামের কম।’’

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সাগরে এত ইলিশ উঠলেও গেঁওখালির কাছে হুগলি নদীর সঙ্গে মিশে যাওয়া রূপনারায়ণে তার দেখা নেই কেন?

দেনান গ্রামের প্রবীণ মৎস্যজীবী মুরারী বেরার ক্ষোভ, ‘‘সাগরে কয়েক হাজার ট্রলার জাল ফেলে সেখান থেকেই তো সব ইলিশ ছেঁকে নিয়ে যাচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ নদীতে ঢোকার সুযোগই পাচ্ছে না। তার উপর ঘাটালের বন্যার প্রচুর পচা জল নদী দিয়ে বের হওয়ায় এখানে ইলিশের খরা দেখা দিয়েছে।’’

কোলাঘাটের কালীমন্দির ঘাটে নৌকায় বসে থাকা বৃদ্ধ মৎস্যজীবী ব্রজ খাঁড়া, পুলক খাঁড়া বলেন, ‘‘এক মাস ধরে কাগজে দেখছি দিঘা, ডায়মন্ড হারবারে ইলিশ ধরা পড়ার খবর। কিন্তু আমাদের এখানে ইলিশ আসেনি বললেই চলে। এ বছর ইলিশ পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছি।’’

কোলাঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী শ্রীমন্ত দাসের কথায়, ‘‘গত বছর এখনও পর্যন্ত ৫০০ কিলোগ্রামেরও বেশি পরিমাণ ইলিশ বিক্রি করেছিলাম। বছর চারেক আগেও দিনে ১০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বার একেবারেই ছবিটা উল্টো। ইলিশ না মেলায় অধিকাংশ নৌকা ঘাটে বাঁধাই পড়ে রয়েছে।’’ তিনি জানান, জোগান কম থাকায় এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০০ কিলোগ্রাম রূপনারায়ণের ইলিশ বিক্রি হয়েছে। দাম প্রতি কিলো ৮০০ -১৫০০ টাকা। ফোনে বুকিং করলেও ইলিশ না থাকায় দেওয়া যাচ্ছে না।

মুখ ব্যাজার ইলিশপ্রেমীদের।

Hilsa Fish Runarayan River Kolaghat ইলিশ কোলাঘাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy