Advertisement
E-Paper

মারণ মাদক চলছেই

জেলার সদর শহরে মাদক-কারবারের রমরমা নিয়ে গত ২৬ জুন, মাদক বিরোধী দিবসে এই সংস্করণেই প্রকাশিত হয়েছিল বিশেষ প্রতিবেদন। প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তারপর তিন মাস পেরিয়েছে। তবে শহরের নেশা-ছবি পাল্টায়নি। হাতের নাগালে এখনও দিব্যি মিলছে গাঁজা, ডেনড্রাইট, কাফ সিরাফ থেকে নেশার ট্যাবলেট, এমনকী হেরোইন-চরস কিংবা ব্রাউন সুগারও। নেশায় ডুবছে কিশোর-তরুণদের জীবন। আরও একবার শহর ঘুরে সেই ছবি তুলে ধরলেন বরুণ দে।মাস খানেক আগের কথা। মেদিনীপুরের বটতলা চকে নেশা করতে দেখে বছর পনেরোর এক কিশোরকে ধরে এনেছিল কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সন্ধে থেকে কয়েক ঘণ্টা ঝিমিয়ে ছিল ছেলেটি।

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৯

মাস খানেক আগের কথা। মেদিনীপুরের বটতলা চকে নেশা করতে দেখে বছর পনেরোর এক কিশোরকে ধরে এনেছিল কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সন্ধে থেকে কয়েক ঘণ্টা ঝিমিয়ে ছিল ছেলেটি। কিন্তু রাত এগারোটা বাজতেই তার অন্য চেহারা। নেশার জিনিস না পেয়ে নাগালে থাকা ব্লেডের টুকরো তুলে নিয়ে হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করে সে। পুলিশকর্মীরা তাকে সামলাতে হিমশিম খান। পরে তার ঠাঁই হয় শহরের এক নেশা মুক্তি কেন্দ্রে।

হাত বাড়ালেই

বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ, মেদিনীপুর টাউন স্কুল, চার্চ স্কুল থেকে শুরু করে মেদিনীপুর কলেজ, কমার্স কলেজ— শহরের প্রায় সব স্কুল-কলেজের কাছেপিঠেই বিড়ি-সিগারেট-গুটখার দোকান। পয়সা দিলেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের হাতে চলে আসে নেশার জিনিস। প্রকাশ্যে চলে ধূমপান, মদ্যপান। ব্রাউন সুগারের মতো নেশার জিনিসও দিনের আলোতেই হাতবদল হয়। আধ গ্রামেরও কম ব্রাউন সুগারের একটা পুরিয়ার দাম ৭০ টাকা। ফলে, সহজেই নেশায় ডোবেন কিশোর-তরুণরা। রাঙামাটি, শরৎপল্লি, মিয়াবাজার, নিমতলাচক, মানিকপুর, সিপাইবাজার, নতুনবাজার, মিত্র কম্পাউন্ড, শেখপুরা, হবিবপুর, তাঁতিগেড়িয়ায় রমরম করে চলে ঠেক।

বিপন্ন জীবন

এক সময় মাদকের কারবার চলত লুকিয়ে- চুরিয়ে। এখন প্রকাশ্যে চলে কারবার। দিনে- দুপুরে গাঁজার ঠেক বসে। সন্ধে নামলে শুরু হয় অবাধ মদ্যপান। বল্লভপুর থেকে জুগনুতলা, নজরগঞ্জ-ছবিটা এক। দিনের পর দিন নেশার কবলে পড়ে অনেকেই অুসুস্থ হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত মাদক সেবনে কিডনি, ফুসফুস, যকৃৎ বিকল হতে পারে। আর নিয়মিত ব্রাউন সুগার নিলে দু’বছর আর ব্যথার অসুধ খেলে তিন-চার বছরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ফাঁদে কৈশোর

স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ তামাক ও মাদকে আসক্ত। এক সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের ১৩-১৫ বছর বয়সী ছাত্রদের ৪.৪ শতাংশ ধূমপান করে। এবং ১৪.৬ শতাংশ ধূমায়ী এবং অধূমায়ী দু’ধরনের তামাকই ব্যবহার করে। ঘরে-বাইরে ৫০ শতাংশ ছাত্র পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। গোটা দেশে তামাক সেবনের গড় যেখানে ৩৫ শতাংশ, সেখানে এ রাজ্যে গড় ৩৬ শতাংশ। প্রতিটি সিগারেট মানুষের আয়ু ১১ মিনিট করে কমিয়ে দেয়।

ভীত অভিভাবকরা

কিশোর-তরুণদের মধ্যে মাদকের ব্যবহারের প্রবণতা কমেনি এতটুকু। বরং দিন দিন তা বাড়ছে। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, স্কুলে পড়ার সময়ে ছেলেমেয়েদের যতটা শাসনে রাখা যায়, কলেজে গেলে সেই রাশ অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। বিপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শহর মেদিনীপুরে হচ্ছেও তাই।

বাড়ছে অপরাধ

শহরে নেশার প্রবণতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ। শহরবাসীর একাংশের মত, চুরি-ছিনতাই-কেপমারির মতো ছোট-বড় ৭০-৮০ শতাংশ অপরাধই ঘটায় মাদকাসক্তরা। শহরে বাড়ছে মাদক পাচারকারীর সংখ্যাও। মহিলারাও এই কারবারে জড়াচ্ছে। শহরে এমন বহু মহিলা রয়েছে, যাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় বিকোয় হেরোইন, গাঁজা, চরস। অনেকে লি ঙ্কম্যান হিসেবে কাজ করে। সঙ্কেত দিয়ে খদ্দের চিনিয়ে দেওয়া হয়।

ঠুঁটো আইন

মাদক-কারবার ঠেকাতে আইন আছে। কিন্তু তা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ হয় না বলেই অভিযোগ। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট সংশোধন করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে নেশার বস্তু বিক্রির সাজার মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। অবশ্য, শহরে সেই আইন রয়েছে খাতায়-কলমে। আইনে ফাঁকও রয়েছে। মাদক কারবারে ধরা পড়লে মাদক পাচার সংক্রান্ত আইন ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট’ (এনডিপিএস)-এ মামলা হয়। অপরাধ প্রমাণ হলে এই ধারায় জেল হবেই। তবে এই আইন অনুযায়ী ব্রাউন সুগারের ক্ষেত্রে ১০ গ্রামের বেশি ও গাঁজার ক্ষেত্রে ২১ কিলোগ্রামেরও বেশি মাদক পাওয়া গেলে তবেই মামলা রুজু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই পরিমাণ মাদক না মেলায় জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা।

পুলিশের দাবি

সারা বছরই রুটিন নজরদারি থাকে, অভিযান চলে। নাবালকদের কাছে যারা নেশার জিনিস পৌঁছে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়। তবে পুলিশের একাংশই মানছে, এ ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রসারে হয়তো কিছু খামতি রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে দিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। যদিও শহরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযান চালায় ঠিকই। তবে মাদক পাচারে মূল পান্ডাদের কেউ ধরা পড়ে না। যারা ধরা পড়ে তাদের বেশিরভাগই বাহক। ফলে, সমস্যা মেটে না।

alcohol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy