Advertisement
E-Paper

উৎসাহ আর আশায় বেঁচে সুতোকল

রাজ্যে নেই নতুন কোনও শিল্প। এমনকী প্রায় প্রতিদিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পুরনো কারখানাগুলি। আশ্বাস দিয়েও নতুন করে লগ্নিতে আগ্রহী হচ্ছে না বাইরের শিল্প সংস্থারা। এমন ছবি যখন ‘বাংলার মুখ’ হয়ে উঠেছে তখন প্রদীপের মতো আলো দিশা দেখাচ্ছে মেদিনীপুরের সুতোকল। তবে সেটা নেহাতই ব্যতিক্রম।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৩

রাজ্যে নেই নতুন কোনও শিল্প। এমনকী প্রায় প্রতিদিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পুরনো কারখানাগুলি। আশ্বাস দিয়েও নতুন করে লগ্নিতে আগ্রহী হচ্ছে না বাইরের শিল্প সংস্থারা। এমন ছবি যখন ‘বাংলার মুখ’ হয়ে উঠেছে তখন প্রদীপের মতো আলো দিশা দেখাচ্ছে মেদিনীপুরের সুতোকল। তবে সেটা নেহাতই ব্যতিক্রম।

‘তাম্রলিপ্ত কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিল’ চলতি আর্থিক বছরে দেড় থেকে দু’কোটি টাকা লাভ হচ্ছে বলে দাবি করছেন কর্তৃপক্ষ। এমনকী মালিকপক্ষের দাবি সুতোকলের লভ্যাংশ থেকে আরও দু’টি নতুন ইউনিট তৈরির জন্যও উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। একটি মেদিনীপুর শহরেরই কেরানিতলাতে, অন্যটি ডায়মন্ড হারবারের ফলতা শিল্পতালুকে। ফলে, নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। আবার সে বিষয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। কারখানার বর্তমান শ্রমিকরাও এ বিষয়ে উৎসাহী।

বছর দেড়েক আগেই মেদিনীপুর শহরে থাকা একটি সুতোকল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লাভ হচ্ছে না— এই কারণ দেখিয়ে কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই একই শহরে এই কারখানাটি কী ভাবে এত লাভের মুখ দেখল?

বোর্ড অব ডিরেক্টরের অন্যতম সদস্য তাপস হুইয়ের কথায়, “সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছি। তা যেমন প্রযুক্তিতে তেমনই ব্যবসায়িক পদ্ধতিতেও। এটাই আমাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।” পাশাপাশি তাপসবাবু এটাও জানিয়ে দিতে ভোলেননি কর্মীদের প্রতি যতটা মানবিক, ততটাই কড়া নজরদারি রয়েছে কাজের দিকে।

বছর দশেক আগেও এই সুতোকল নির্ভর করত শুধু শ্রমিকদের উপরেই। কিন্তু এখন বসেছে স্বয়ংক্রিয় নানা যন্ত্র। ফলে উৎপাদন বে়ড়েছে কয়েক গুণ। কর্তৃপক্ষের দাবি, আধুনিক যন্ত্রে বিদ্যুত্ মাসুল লাগে কম, আবার কর্মীও লাগে কম। কিন্তু সে জন্য কর্মী ছাঁটাই করেনি মালিক পক্ষ। তাঁদের দাবি গত তিন বছরে শুধু অবসর নিয়েছেন যে সব কর্মীরা, তাঁদের জায়গায় আর নতুন করে কোনও স্থায়ী বা বদলি কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। পাশাপাশি নতুন যন্ত্রের পাশাপাশি তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন পুরনো যন্ত্রের ব্যবহারও। সেখানে মানুষ্য শ্রম প্রয়োজন। ফলে কর্মীদের কাজের অভাব নেই।

উৎপাদিত সুতোর পাশাপাশি কারখানা থেকে সরাসরি তুলোও বিক্রি করা হয়। নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সংস্থা থেকে তুলো কিনতেই হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তুলো পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ছোট ছোট কারখানাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের কল্যাণী ও দিনাজপুরকেও তুলো বিক্রি করত তাম্রলিপ্ত কো-অপরেটিভ স্পিনিং মিল। কিন্তু বর্তমানে সেই মিলটি বন্ধ। তাপসবাবু বলেন, “দিনাজপুরের কাছ থেকে আমরা ১০ কোটি টাকাও পাব। কিন্তু মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা মেলেনি। বিষয়টি সরকারের গোচরে এনেছি।”

নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় কাজের সময় বাঁধা আছে প্রত্যেক শ্রমিকের। যিনি সুতোর গোলা তৈরি করেন, তাঁদের ৪০ কাউন্টের ৮৯ কেজি সুতো তৈরি করতে হবে ৮ ঘন্টায়। ৬০ কাউন্টের সুতো হলে লক্ষ্যমাত্রা ৭১ কেজি। আবার যাঁরা লুম তৈরি করেন তাঁদের ২০ কাউন্টের ২১ ফেরা তৈরি করতে হয়। ৪০ কাউন্ট হলে ৩৪ ফেরা। না হলেই কাটা যায় বেতন।

এতে অবশ্য কর্মীদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ নেই। মিলে কাজ করা ছায়া দাস, বিদ্যাভূষণ শ্রীবাস্তবেরা বলেন, “আগে দু’বেলা কী খাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। ৫-৬ হাজার টাকায় কী সংসার চলে। বেশি বেতন পেলে কাজ করব না কেন?” ১৯৯২ সালে তৈরি হওয়া এই সুতোকলে যাঁরা প্রথম কাজে ঢুকেছিলেন তাঁদের বেতন ছিল সাড়ে ৪০০ টাকা। প্রাথমিক পর্ব অর্থাত্ প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হলে এক বা দেড় বছর পর মাইনে বেড়ে হত ৬০০ টাকা। প্রথমে ৬ জন স্থায়ী কর্মী ছিলেন। পরে তাঁদেরও অস্থায়ী করে দেওয়া হয়েছিল।

দীর্ঘ আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর সরকারি পে কমিশন চালু করেন। তাতে এক ধাক্কায় ৫ হাজার টাকা মাইনে পাওয়া কর্মীদের মাইনে গিয়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকায়। এখন তা পৌঁচেছে ১৫ হাজার টাকায়। কারও মাইনে এখন মাসে ৬০ হাজার টাকা তো কারও মাইনে ৪০ হাজার টাকাও রয়েছে। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৩৫৭ জন। বদলি কর্মী ৭২ জন। অস্থায়ী কর্মী সংখ্যা প্রায় ৩০০ এর কাছাকাছি। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করায় এদের কাছে চ্যালেঞ্জ। এই কর্মসংস্কৃতিই মুনাফার পথ দেখিয়েছে। আগে যেখানে বছরে ৩ লক্ষ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা লাভ হত বর্তমানে সেখানে দেড় কোটি থেকে ২ কোটি টাকারও বেশি লাভ করছে এই সুতোকল।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy