Advertisement
E-Paper

প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণের ফলপ্রকাশ ঘিরেও বিতর্ক

শিক্ষার অধিকার আইনে প্রত্যেক শিক্ষকেরই প্রশিক্ষণ জরুরি। আইন মাফিক প্রাথমিক শিক্ষকদের বেসিক ট্রেনিং বা ডিএড-এর ব্যবস্থাও করেছিল সরকার। কিন্তু, প্রশিক্ষণের শুরুতে পশ্চিম মেদিনীপুরে নানা অব্যবস্থা সামনে আসায় বিস্তর জলঘোলাও হয়।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০০:২০

শিক্ষার অধিকার আইনে প্রত্যেক শিক্ষকেরই প্রশিক্ষণ জরুরি। আইন মাফিক প্রাথমিক শিক্ষকদের বেসিক ট্রেনিং বা ডিএড-এর ব্যবস্থাও করেছিল সরকার। কিন্তু, প্রশিক্ষণের শুরুতে পশ্চিম মেদিনীপুরে নানা অব্যবস্থা সামনে আসায় বিস্তর জলঘোলাও হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ফল প্রকাশের পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না ডিএডের।

কেমন? লিখিত পরীক্ষায় যে শিক্ষক-ছাত্র ৮০-৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তাঁর ফল অসমাপ্ত রয়েছে। কেন? ৭০০ নম্বরের পরীক্ষায় যে দেড়শো নম্বর কলেজগুলির হাতে থাকে শিক্ষক-ছাত্র নাকি তাতে ‘ফেল’ করেছেন! জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) কবিতা মাইতি বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে এমন ঘটেছে। বিষয়টি রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে জানাব।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার বেসিক ট্রেনিং ছিল না। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও সরকারি বা সরকারি অনুমোদিত স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া চাকরি করতে পারবেন না। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চের মধ্যেই সকলকেই প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ২০১২ সালেই তার জন্য পদক্ষেপ নেয় রাজ্য সরকার। ঝাড়গ্রামে খোলা হয় ‘ডিস্ট্রিক্ট ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’। ভর্তির সময় থেকেই এ নিয়ে বিস্তর ঝামেলা দেখা দেয়। কারণ, জেলার কিছু ছাত্রকে বীরভূমে বা কোচবিহারের ডিএড কলেজে প্রশিক্ষণ নিতে যেতে বলা হয়। অন্য জেলার শিক্ষকদেরও পশ্চিম মেদিনীপুরে পাঠানো হয়েছিল। শিক্ষকদের দাবি ছিল, সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিতে গেলে বেশিরভাগ দিনই স্কুল ছুটি নিতে হবে তাঁদের। এ নিয়ে চরম বিক্ষোভ দেখা দেয়। ঘেরাও করা হয় সংসদও। তারপর জেলার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলতে থাকে।

পরীক্ষার সময়েও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। ফলে দু’টি পত্রের পরীক্ষা নিয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছিল পরীক্ষা। পরে নতুন প্রশ্নপত্রে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্ক এই তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার রেজিস্ট্রেশনেও ভুল রয়েছে। কোন শিক্ষাবর্ষে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিলেন? কারও ক্ষেত্রে ২০১২-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ রয়েছে, আবার কারও ক্ষেত্রে রয়েছে ২০১৩-২০১৪। অথচ, হওয়ার কথা ২০১২-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ। ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন সকলেই। সংসদের নিয়ম মেনেই ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যেই সকলে সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখনও রেজিস্ট্রেশনের শংসাপত্র হাতে পাননি কেউই।

এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ শিক্ষক-ছাত্রের ফল অসম্পূর্ণ। মোট ৭০০ নম্বরের পরীক্ষা রয়েছে। ১০০ নম্বর ওয়ার্কশপ, ১০০ নম্বর ‘স্কুল বেসড অ্যাকটিভিটি’। আর বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক-সহ পাঁচটি বিষয়ে ৫০০ নম্বর। এই পাঁচটি বিষয়ে ১০০ এর মধ্যে ৭০ নম্বর করে লিখিত পরীক্ষা ও বাকি ৩০ নম্বর করে অ্যাসাইনমেন্ট (অর্থাত্‌, বাড়িতে বসে প্রশ্নের উত্তর লিখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিলেই হল)। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী লিখিত পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ কিংবা ৮০-৮৫ শতাংশও নম্বর পেয়েছেন, তিনি নাকি বাড়িতে বই দেখেও ওই ১৫০ নম্বরে পাশ করতে পারেননি!

এমন ফল দেখে সকলেই হতচকিত। সরকারি ও বেসরকারি দুই কলেজের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। চন্দ্রকোনার বেসরকারি বিএড কলেজের মালিক প্রভাস ঘোষ বলেন, “আমি তিনবার অ্যাসাইনমেন্টের ফল জমা দিয়েছি। তারপরেও এমন হলে আমি কী করতে পারি।” মেদিনীপুর শহরের এক সরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষা সবিতা দেব রায়ের কথায়, “আমরা যথা সময়েই ফল জমা দিয়েছি। তবু ক’য়েক জনের ফল এমন হয়েছে। কী করে এমন হল, কিছুতেই বুঝতে পারছি না।” এখন ওই শিক্ষক-ছাত্রেরা যাবেন কোথায়? অসম্পূর্ণ ফলের শংসাপত্র নিয়েই বা করবেন কী? তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সকলে। এক শিক্ষক ছাত্র বলেন, “আমি ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭৩ নম্বর পেয়েছি। কিন্তু ইন্টারনেটে ফল বলছে, ‘নট কনসিডার’। অর্থাত্‌, অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর জমা পড়েনি। তা হলে দু’বছর পরিশ্রম করে কী হল?” কেন এমনটা হল তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। সব মিলিয়ে, শংসাপত্র না মেলা পর্যন্ত চূড়ান্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া জেলার প্রায় ৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক।

primary teachers' training result controversy medinipur suman ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy