Advertisement
E-Paper

পোষ্য কুকুরের চাহিদা শহরতলিতে

বছর বারো আগের কথা। ভোরবেলা মেদিনীপুর শহরে যাঁরা হাঁটতে বেরোতেন তাঁদের মধ্যে একজন সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন সাধের ল্যাব্রাডরকে। মাঝে তিনি কাজের সূত্রে বদলি হয়েছিলেন কেরলে। এ বার ফিরে দেখছেন প্রাতঃভ্রমণে তাঁর মতোই বেশ কয়েকজন বেরিয়েছেন তাঁদের পোষ্য কুকুরকে সঙ্গে নিয়েই!

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:১১
আদরে, শাসনে চলছে প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

আদরে, শাসনে চলছে প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।

বছর বারো আগের কথা। ভোরবেলা মেদিনীপুর শহরে যাঁরা হাঁটতে বেরোতেন তাঁদের মধ্যে একজন সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন সাধের ল্যাব্রাডরকে। মাঝে তিনি কাজের সূত্রে বদলি হয়েছিলেন কেরলে। এ বার ফিরে দেখছেন প্রাতঃভ্রমণে তাঁর মতোই বেশ কয়েকজন বেরিয়েছেন তাঁদের পোষ্য কুকুরকে সঙ্গে নিয়েই!

বছর ছয়েকের মধ্যে এভাবেই বেড়েছে মেদিনীপুর শহরে পোষ্য হিসাবে কুকুরের চাহিদা। পরিসংখ্যান বলছে, তিরিশ বছর আগেও হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে পোষ্য রাখার চল ছিল নিতান্তই নিরাপত্তার কারণে। এখন সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৫ হাজারে। আর কোন কুকুর নেই সেই তালিকায়? ডোবারম্যান, জার্মান শেফার্ড, ল্যাবরেডর তো রয়েছেই। এমনকী শীতের পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত বহু কুকুরই হাজির পশ্চিম মেদিনীপুরে। লক্ষ লক্ষ টাকা দাম দিয়ে, বিদেশ থেকে প্লেনে উড়িয়েও পোষ্য নিয়ে আসছেন অনেকে।

কিন্তু হঠাৎ এমন চাহিদা কেন?

জেলার পুরনো কুকুর প্রশিক্ষক সিদ্ধার্থ আচার্য জানাচ্ছেন, চল বরাবরই ছিল। অনেকে নিরাপত্তার কারণে কুকুর পোষেন। কেউ বা কুকুর পোষেন একাকিত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে। কেউ কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে প্রাতঃভ্রমণ পছন্দ করেন। এমন প্রভুভক্ত প্রাণীই তো সকলে পোষ্য হিসেবে চান! তবে আগে কুকুর পুষলে তার অসুস্থতা, পরিচর্যা বা বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় মিলত না। এখন সেই সমস্যার সমাধানের নানা উপায় রয়েছে। সেই কারণেও পোষ্য হিসেবে কুকুরের চাহিদা বাড়ছে।

কুকুরপ্রেমী প্রদীপকুমার রথের কথায়, “আগে ১০০ টাকার বেল্ট কিনতেও কলকাতা ছুটতে হত। এখন তো শহরের বিভিন্ন এলাকায় কুকুরের প্রয়োজনের সব জিনিস পাওয়া যায়। আর কোনও সমস্যাই নেই।’’ খড়্গপুর, মেদিনীপুর শহরে পোষ্যদের জন্য একাধিক ওষুধের দোকান হয়েছে। আর শহরে এখন অনেক পশু চিকিৎসক রয়েছেন। শহরে রয়েছে তাঁদের চেম্বার। আর আগের মতো কুকুর অসুস্থ হলে তাকে ফেলে না রেখে প্রায় সকলেই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এমনকী বাড়িতে এসেও চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তাঁরা।

দিন কয়েকের জন্য যদি কেউ বেড়াতে যেতে চান, তাহলেও চিন্তা নেই। প্রিয় পোষ্যকে রেখে যেতে পারেন ক্রেশে। এমনই এক ক্রেশের মালিক শুভদীপ জানার কথায়, “প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কেউ বাইরে গেলে তাঁদের কুকুর রাখি। মাসে গড়ে ৩-৫ হাজার টাকা ভাড়া নিই।” তবে এক্ষেত্রে একটু সতর্কতা প্রয়োজন। অনেক সময়ই কুকুরকে ক্রেশে বেঁধে রাখা হয়। ঠিকভাবে খাবার দেওয়া হয় না। সেই সব খোঁজ নিয়েই পোষ্যকে রেখে যেতে পারেন ক্রেশে। সম্প্রতি ল্যাব্রাডর কিনেছেন অমলেন্দু সাহা। তাঁর কথায়, “ইচ্ছে ছিল অনেকদিন। কিন্তু তখনও কুকুর রাখার ক্ষেত্রে যা সুবিধে মেলার কথা তা শহরে কতটা পাব তা নিয়ে সংশয় থাকায় কিনতে সাহস করিনি। এখন সব সুবিধে রয়েছে বুঝেই কিনেছি।”

প্রশিক্ষক সিদ্ধার্থ আচার্য জানান, এখন শহরের ভাল প্রশিক্ষক হিসাবে ৮-১০ জনের নাম উঠে আসে। যাঁরা রীতিমতো পড়াশোনা করে আদব কায়দা শিখে নিয়েছেন। করছেন গ্রুমিংও। ৯ বছর আগে মেদিনীপুর টাউন ক্লাবে প্রথম শুরু হয়েছিল ডগ শো। জেলায় কুকুর বেশি না থাকায় এই শোয়ের ভরসা ছিল বাইরের কুকুর। কিন্তু শহরে সম্প্রতি যে শো হয়ে গেল সেখানে বাইরের কোনও কুকুরের প্রবেশাধিকার ছিল না। শহরেরই ১১৮টি কুকুর যোগ দিয়েছিল। সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশাবাদী তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy