Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে কমলেও পূর্বে এগোল ডিওয়াইএফ

রাজ্যে যখন ডিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা পড়তির দিকে, তখন একেবারে উল্টো ছবি নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে! ২০১৩ সালে এ রাজ্যে সিপিএমের যুব সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

রাজ্যে যখন ডিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা পড়তির দিকে, তখন একেবারে উল্টো ছবি নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে!

২০১৩ সালে এ রাজ্যে সিপিএমের যুব সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার। পরের বছরে তা নেমেছে ৪০ লক্ষ ৩৯ হাজারে। পক্ষান্তরে পূর্ব মেদিনীপুরে সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫২০! সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে যা তাত্‌পর্যপূর্ণ।

জেলায় লক্ষ্মণ শেঠের বহিষ্কারের পর জেলা সিপিএমে বড়সড় ভাঙন দেখা দেয়। দল ছাড়েন লক্ষ্মণ অনুগামী বহু নেতা। জেলায় সংগঠন এখনও যে খুব একটা শক্ত ভিতের উপরে নেই, ঘনিষ্ট মহলে তা গোপন করেন না জেলা নেতারাও। দলের ছাত্র শাখা এসএফআইও সাম্রতিক ছাত্রভোটে সাফল্য পায়নি। জেলার ১৭টি কলেজেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কাছে কার্যত গোহারা হারতে হয়েছে তাদের। সেই জেলায় কোন জাদুতে ডিওয়াইএফ নিজেদের সদস্য সংখ্যা ধরে রাখল? ক্ষমতাসীন না থেকেও বরং কিছু সদস্য বাড়াতে সক্ষম হল?

সাফল্যের নেপথ্যে সাংগঠিক শক্তি বাড়িয়ে যুবদের সামনে এগিয়ে পরিকল্পনা মতো লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং তৃণমূলের দুর্নীতি, এই দুই কারণকে এগিয়ে রাখছেন ডিওয়াইএফ-এর জেলা নেতারা। সংগঠনের জেলা কমিটির অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক ঝাড়েশ্বর বেরার ব্যাখ্যা, ২০১৩ সালে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তৃণমূলের ব্যাপক দুর্নীতি জেলার যুব সমাজে প্রভাব ফেলেছে। জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারও অজানা নয়। সব মিলিয়ে তৃণমূলের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মোহভঙ্গ হওয়ার লাভ সিপিএমের যুবরা তুলতে পেরেছে বলে নেতৃত্বের অভিমত।

ডিওয়াইএফ-এর প্রাক্তন সর্ব ভারতীয় সম্পাদক তাপস সিংহ মনে করেন, রাজ্যে তেমন ভাবে নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় জেলার যুব সমাজ ফের সংগঠনে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। ক্রমশ তাঁরা বিজেপি-র প্রকৃত স্বরূপও বুঝতে পারছেন। তাঁরা উপলব্ধি করছেন, ঝাড়ু হাতে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ সেকেন্ডের জঞ্জাল সাফাই বা স্বচ্ছ্ব ভারত অভিযানের চটক। তাপসের কথায়, “যুবসম্প্রদায় বুঝতে পারছেন বামপন্থার কোনও বিকল্প নেই।” একই সঙ্গে বলছেন, “জেলার বহু জায়গাতেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখে গোপনে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালাতে হয়েছে।”

হলদিয়া ছাড়াও ডিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা বেড়েছে রাজ্যে তৃণমূলের পালাবদলের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত নন্দীগ্রাম, খেজুরিতেও। নন্দীগ্রামে ৫৫০ জন এবং খেজুরিতে ২,০৫০ নতুন সদস্য হয়েছেন। জেলা সংগঠনের ২৩টি জোনাল কমিটির মধ্যে অবশ্য কাঁথি ও কোলাঘাট জোনালে সদস্য সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কমেছে। ভগবানপুরে গতবারের সদস্য সংখ্যা একই থাকলেও বাকি ২০টি জোনালে সদস্য সংখ্যা তুলনায় বেড়েছে।

পূর্বে ডিওয়াইএফ-এর এই অন্য ছবি স্বস্তিতে রাখছে বামেদের। জেলার রাজনীতি মহলের বক্তব্য, সর্বত্রই যখন বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যহত তখন যুব সংগঠনের বৃদ্ধি বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে। সদস্য সংখ্যা বাড়ার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে পুরুলিয়া, তৃতীয় স্থানে নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার। এমনই নানা তথ্য উঠেছে এসেছে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ সংক্রান্ত নিজস্ব হিসেবে।

রাজ্যে কিন্তু ডিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা এক বছরে প্রায় ৬ লক্ষ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে বাঁকুড়ায়। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ সদস্য সংগঠন ছেড়েছেন, অথবা বসে গিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও সদস্য সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। কেন? সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লার এক্ষেত্রে শাসক দলের অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস ও দুষ্কৃতীদের সশস্ত্র হামলার মুখে সদস্য সংখ্যা কমেছে।” তবে তিনি মেনে নিচ্ছেন, শুধু সন্ত্রাস নয় সাংগঠনিক দুর্বলতাও সদস্য সংখ্যা কমার অন্যতম কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subrata guha kanthi dyf medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE