Advertisement
E-Paper

বাংলাভাষীদের উপর ‘সন্ত্রাসের’ আবহে বঙ্গে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, একসঙ্গে দু’টি কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৃণমূলে

উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশে দেখা যাচ্ছে, ভিন্‌রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের উদ্যোগে বাস ভাড়া করে গ্রামে ফিরছেন। বিভিন্ন ট্রেনে ফিরে আসছেন মালদহ, মুর্শিদাবাদের শ্রমিকেরাও।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৪
Migrant laborers are returning to West Bengal, TMC is planning to implement two parallel works

ভিন্‌রাজ্য থেকে কলকাতায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকেরা। ছবি: পিটিআই।

ভিন্‌রাজ্যে যেখানে বাঙালি শ্রমিকদের ‘অত্যাচরিত’ হতে হচ্ছে, সেখান থেকে তাঁদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড। কিন্তু বাংলাভাষী হলেই সন্ত্রাসের যে ভাষ্য নিয়ে আপাতত বঙ্গ রাজনীতি সরগরম, সেই আবহে বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিজেদের উদ্যোগেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গে। হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লির বিভিন্ন মহল্লা থেকে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় ফেরা শুরু করেছেন শ্রমিকেরা।

এই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক স্তরে সমান্তরাল ভাবে দু’টি কাজ বাস্তবায়িত করতে চাইছে শাসক তৃণমূল। সেইমতো বার্তাও দিচ্ছেন নেতৃত্ব। প্রথমত, যাঁরা ফিরে আসছেন তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের বন্দোবস্ত করা এবং দুই, ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষা ঘোষণা হলে তাঁদের নাম যাতে তালিকায় থাকে, তা সুনিশ্চিত করা। আট মাস দূরে বিধানসভা ভোট। তার আগে আটঘাট বেঁধে নামতে চাইছে তৃণমূল।

উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশে দেখা যাচ্ছে, ভিন্‌রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের উদ্যোগে বাস ভাড়া করে গ্রামে ফিরছেন। বিভিন্ন ট্রেনে ফিরে আসছেন মালদহ, মুর্শিদাবাদের শ্রমিকেরাও। অন্যান্য জেলাতেও কিছু কিছু জায়গায় এই ছবি দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে চাইলে রাজ্য সরকার ট্রেনের ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসবে। বলেছেন, ‘‘যেমন কোভিডের লকডাউনের সময়ে এনেছিলাম, সে ভাবেই নিয়ে আসব।’’ তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, অগস্টের গোড়া থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার ঘটনা আরও বাড়বে।

সাংগঠনিক স্তরে তৃণমূলের বার্তা, রাজ্যে যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাঁদের নথিপত্র খতিয়ে দেখে বিকল্প কাজের বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে হবে। কী ভাবে? অগস্টের গোড়া থেকেই শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জব কার্ড না-থাকলে সেই শিবিরে জব কার্ডের জন্য নাম নথিভুক্ত করানোর উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘যে শ্রমিকেরা ফিরছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলীয় নেতৃত্বকে সেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তাঁরা প্রাথমিক ভাবে দেখবেন ওই শ্রমিকদের নথিপত্র (ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড) রয়েছে কিনা। তার পরে যোগাযোগ করতে হবে দলের উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে।’’

উল্লেখ্য, আগামী ৮ অগস্ট দলের প্রায় ৪ হাজার নেতাকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই বৈঠক থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে সংগঠনের করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ‘বার্তা’ দিতে পারেন।

সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা চরিত্রগত ভাবে দু’প্রকার। একটি অংশ মরসুমি পরিযায়ী। অর্থাৎ, কয়েক মাসের জন্য তাঁরা রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যান। অন্য অংশ স্থায়ী ভাবে পরিযায়ী। যাঁরা প্রায় সারা বছরই বাইরে কাজ করেন। মরসুমি পরিযায়ীদের ক্ষেত্রে অনেকেরই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের জব কার্ড রয়েছে। ফলে তাঁদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না বলেই মনে করছে তৃণমূলের একটি বড় অংশ। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতে প্রতি বুথে ১০ লক্ষ টাকার কাজ হবে। কোথাও রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার, কোথাও ছোট সেতু নির্মাণ, নলকূপ স্থাপনের মতো কাজ হবে। তাতে মরসুমি পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁদের জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের সুযোগ দেওয়া যাবে। সেটাও মাথায় রাখছে শাসকদল। প্রশাসনিক স্তরেও বিষয়টি ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে।

তবে বছরের পর বছর যাঁরা ভিন্‌রাজ্যে কাজ করছেন, তাঁরা রাজ্যে ফিরে এলে তাঁদের কী ভাবে কাজের সুযোগ করে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ‘চিন্তিত’ শাসকদলের অনেকেই। আবার তৃণমূলের অন্য অংশের বক্তব্য, নির্মাণশিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের কাজ পেতে সমস্যা হবে না। তবে উৎপাদন বা স্বর্ণঁশিল্পের মতো ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের কর্মসংস্থান নিয়ে সাময়িক সমস্যা হতে পারে।

এই দোলাচলের মধ্যেও তৃণমূল চাইছে পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরুন। কারণ, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় নিবিড় সমীক্ষা তথা ‘স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) শুরু করছে। বিহারের এসআইআর-এর নির্যাস সম্পর্কে বিরোধী দলগুলি বলেছে, কমিশন যে ভোটারদের ‘স্থানান্তরিত’ বলে চিহ্নিত করে তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছে, তাঁদের সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিক। ভোটার তালিকার সমীক্ষার কাজে তৃণমূল ইতিমধ্যেই গোটা সংগঠনকে ‘সতর্ক’ থাকার বার্তা দিয়েছে। তবে শাসকদল চাইছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ওই নিবিড় সমীক্ষার সময়ে সশরীরে বাসস্থানে থাকুন।

ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিদের বড় অংশই মুসলিম। যাঁরা আবার ভোটের অঙ্কে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তৃণমূল তথা মমতার জনসমর্থনের ‘পুঁজি’। ফলে তাঁদের ফেরাতে যে তৃণমূল বাড়তি উদ্যোগী হবে, তা প্রত্যাশিত। সম্ভবত সেই কারণেই মঙ্গলবার বীরভূমের সভা থেকে মমতা বলেছেন, ‘‘সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদের বলব, শুধু ইদের সময় এলে হবে না। ভোটার লিস্টে নাম তুলুন। এখানে এসে থাকার চেষ্টা করুন।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব তথা মমতা যখন বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের আখ্যান তুলে ধরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, তখন পদ্মশিবিরও অনুপ্রবেশ তত্ত্বে সরব। আবার সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার ঢল নামলে তাকেও বিজেপি ‘মেরুকরণের অস্ত্র’ করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। যা থেকে স্পষ্ট, বঙ্গ রাজনীতি আবর্তিত হবে গত কয়েক বছরের চেনা কক্ষপথেই। যার এক দিকে থাকবে সামান্য হিন্দুত্ব (দিঘার জগন্নাথ ধাম জাতীয় কিছু উপমা) মিশ্রিত বাঙালি অস্মিতা অন্য দিকে শুধুই হিন্দুত্ব।

Migrant laborers Migrant Workers West Bengal Politics TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy