চিরাচরিত ধারণা ছেড়ে সংখ্যালঘু জনতার একাংশের বিজেপি-তে যোগদানের ঘটনা শুরু হয়েছিল বীরভূম থেকেই। এ বার ধর্মতলায় দলের ‘উত্থান দিবসে’ সংখ্যালঘুদের প্রতি বার্তা দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বোঝাতে চাইলেন, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে পুঁজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বাজিমাত করবেন, সে দিন ফুরোতে চলেছে!
বীরভূমের পাড়ুই ও সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তিন বিজেপি সমর্থকের পরিবারকে রবিবার অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয় ধর্মতলার সমাবেশ-মঞ্চ থেকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন ‘শহিদ’ পরিবারের হাতে সাহায্য তুলে দেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অতীতে যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে বড় রাজনৈতিক মঞ্চে হাজির করে ‘শহিদে’র প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, বিজেপি-ও হেঁটেছে সে পথেই। এ ক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূলের হাতে সংখ্যালঘুরাই আক্রান্ত, এই বার্তা দিতে সুবিধা হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। তাঁরা দাবি করেন, বিজেপি-কে ‘সাম্প্রদায়িক’ দলের তকমা দিয়ে সংখ্যালঘুদের কাছে অচ্ছুত করে রাখা যাবে না। ঘটনাচক্রে, পাড়ুইয়ে দুই বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় ইলামবাজার এলাকার তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি শেখ হাবলকে এ দিনই গ্রেফতার করেছে বীরভূম পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শাসক দলের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বিরোধী দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের একাংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন। আবার তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে কোণঠাসা, বিক্ষুব্ধ অংশও গেরুয়া ছাতার তলায় আশ্রয় নিচ্ছেন। বিজেপি কেন্দ্রের শাসক দল হওয়ায় সে দিকে গেলে নিরাপত্তা মিলবে, এমন আশা করছেন সংখ্যালঘুদের অনেকেও। পাশাপাশি তাঁরা দেখছেন, রাজ্যে বিরোধী দল হিসাবে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে বাধ্যও করছে বিজেপি। এ সবের জেরে সংখ্যালঘুরাও এখন বিজেপি-র পতাকার তলায় আসছেন। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন আগেই তাঁর বইয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কোনও মানুষকেই শুধু তাঁর ধর্ম বা কোনও একমাত্রিক পরিচয়ে বাঁধা যায় না।