Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সংখ্যালঘুরা তাদের দিকে, বার্তা এ বার সমাবেশ থেকেই

চিরাচরিত ধারণা ছেড়ে সংখ্যালঘু জনতার একাংশের বিজেপি-তে যোগদানের ঘটনা শুরু হয়েছিল বীরভূম থেকেই। এ বার ধর্মতলায় দলের ‘উত্থান দিবসে’ সংখ্যালঘুদের প্রতি বার্তা দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বোঝাতে চাইলেন, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে পুঁজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বাজিমাত করবেন, সে দিন ফুরোতে চলেছে! বীরভূমের পাড়ুই ও সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তিন বিজেপি সমর্থকের পরিবারকে রবিবার অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয় ধর্মতলার সমাবেশ-মঞ্চ থেকে।

সম্প্রীতি। রবিবার ধর্মতলায় বিজেপির সভায় যোগ দিতে আসার পথে। সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

সম্প্রীতি। রবিবার ধর্মতলায় বিজেপির সভায় যোগ দিতে আসার পথে। সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

চিরাচরিত ধারণা ছেড়ে সংখ্যালঘু জনতার একাংশের বিজেপি-তে যোগদানের ঘটনা শুরু হয়েছিল বীরভূম থেকেই। এ বার ধর্মতলায় দলের ‘উত্থান দিবসে’ সংখ্যালঘুদের প্রতি বার্তা দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বোঝাতে চাইলেন, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে পুঁজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বাজিমাত করবেন, সে দিন ফুরোতে চলেছে!

বীরভূমের পাড়ুই ও সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তিন বিজেপি সমর্থকের পরিবারকে রবিবার অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয় ধর্মতলার সমাবেশ-মঞ্চ থেকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিন ‘শহিদ’ পরিবারের হাতে সাহায্য তুলে দেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অতীতে যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে বড় রাজনৈতিক মঞ্চে হাজির করে ‘শহিদে’র প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, বিজেপি-ও হেঁটেছে সে পথেই। এ ক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূলের হাতে সংখ্যালঘুরাই আক্রান্ত, এই বার্তা দিতে সুবিধা হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। তাঁরা দাবি করেন, বিজেপি-কে ‘সাম্প্রদায়িক’ দলের তকমা দিয়ে সংখ্যালঘুদের কাছে অচ্ছুত করে রাখা যাবে না। ঘটনাচক্রে, পাড়ুইয়ে দুই বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় ইলামবাজার এলাকার তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি শেখ হাবলকে এ দিনই গ্রেফতার করেছে বীরভূম পুলিশ।

পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শাসক দলের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বিরোধী দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের একাংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন। আবার তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে কোণঠাসা, বিক্ষুব্ধ অংশও গেরুয়া ছাতার তলায় আশ্রয় নিচ্ছেন। বিজেপি কেন্দ্রের শাসক দল হওয়ায় সে দিকে গেলে নিরাপত্তা মিলবে, এমন আশা করছেন সংখ্যালঘুদের অনেকেও। পাশাপাশি তাঁরা দেখছেন, রাজ্যে বিরোধী দল হিসাবে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে বাধ্যও করছে বিজেপি। এ সবের জেরে সংখ্যালঘুরাও এখন বিজেপি-র পতাকার তলায় আসছেন। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন আগেই তাঁর বইয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কোনও মানুষকেই শুধু তাঁর ধর্ম বা কোনও একমাত্রিক পরিচয়ে বাঁধা যায় না।

বীরভূম জেলা থেকেই সমাবেশে প্রায় ১৫-১৬ হাজার মানুষ এসেছিলেন বলে বিজেপি-র দাবি। তাঁদের মধ্যে পাড়ুই, চৌমণ্ডলপুরের মতো সংঘর্ষ-কবলিত এলাকার মানুষও ছিলেন। তাঁদের কথা উল্লেখ করতে গিয়েই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “মুসলিমেরা বুঝে গিয়েছেন, বোরখা পরে নমাজের নাটক করে তাঁদের ঠকানো যাবে না! তাই তাঁরা এখন বিজেপি-র পক্ষে।” ঘটনাচক্রে, অমিতের বক্তৃতা চলাকালীনই পাশে টিপু সুলতান মসজিদ থেকে আজান শুরু হয়। অমিত বক্তৃতা থামালেও সভায় হাজির জনতার একাংশ পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিচ্ছিল। আজান শেষের পরে অমিত কর্মী-সমর্থকদের বলেন, “আপনাদের আবেগ আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু মমতাদিদিকে কোনও বাহানা তৈরি করতে দিতে চাইছে না!” বিজেপি সভাপতির বার্তা ছিল উত্তেজনা তৈরি না করার জন্যই।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই এই সমাবেশে বক্তা হিসাবে রাখা হয়েছিল রাজ্য বিজেপি-র সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি শাকিল আনসারিকে। তিনি বলেন, “প্রশ্ন করতে চাই, জাভেদ খান, সুলতান আহমেদ বা ববি হাকিমের ছেলেমেয়েরা কি অনুমোদনহীন খারিজি মাদ্রাসায় পড়ে? তাঁরা জানেন এমন মাদ্রাসায় পড়লে আইএসএস, আইপিএস, এসডিও-বিডিও হওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী কেন তা হলে আরও ২০ হাজার মাদ্রাসা চালু করতে চাইছেন?” সেখানে কারা পড়বে, তা বোঝাই যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শাকিল। আর দলের একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “সংখ্যালঘু ভাইবোনদেরই ঠিক করতে হবে, তাঁরা মুর্শিদাবাদে বিড়ি বাঁধবেন, বসিরহাটে ইটভাটায় কাজ করবেন, শহরের উপকণ্ঠে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করবেন নাকি সীমান্তে চোরাচালানের কাজে যুক্ত হবেন!”

বিজেপির এই বার্তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সংখ্যালঘুরা কি বিজেপির দিকে আছেন? অমিত শাহেরা তো মুসলিমদের সামনে এনে ধোঁকা দিচ্ছেন! লোকসভায় ওঁদের ২৮২টি আসনের মধ্যে ক’টা সংখ্যালঘু মুখ আছে?” তাঁর দাবি, রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভরসাযোগ্য প্রতিনিধি যে তৃণমূল নেত্রীই, গত লোকসভা ভোটে তা প্রমাণিত। তাই মোদী-ঝড় এখানে প্রতিহত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE