Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আধার ফেরাল নিখোঁজ ছেলেকে

প্রায় আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হয়ে যায় দশ বছরের ছেলে। বহু খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। শেষমেশ ‘আধার কার্ড’ মেলাল ছেলে আর বাবা-মা-কে। আধারের সূত্রে নিখোঁজের হদিস আগেও মিলেছে এ রাজ্যে। শুক্রবার তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের একটি অনাথ আশ্রম।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৪
Share: Save:

প্রায় আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হয়ে যায় দশ বছরের ছেলে। বহু খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। শেষমেশ ‘আধার কার্ড’ মেলাল ছেলে আর বাবা-মা-কে। আধারের সূত্রে নিখোঁজের হদিস আগেও মিলেছে এ রাজ্যে। শুক্রবার তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের একটি অনাথ আশ্রম।

নদিয়ার কালীগঞ্জের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাই খান চলতি বছরের অক্টোবরে পূর্বস্থলী থানায় করা নিখোঁজ ডায়েরিতে জানান, গত ৪ অক্টোবর ছেলে আসিদুল খানকে নিয়ে স্থানীয় মেড়তলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন তাঁরা। সেখান থেকেই খেলতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় আসিদুল। জন্ম থেকেই কথায় অস্পষ্টতা রয়েছে বালকের। অভ্যস্ত না হলে তার কথা বোঝা সম্ভব নয় বাইরের লোকের পক্ষে। ফলে, উদ্ধার হলেও কী করে তার সন্ধান মিলবে, তা নিয়ে বাড়তি চিন্তা ছিল পরিবারের।

শেরপুরের আদি বাসিন্দা হলেও আজাই বর্তমানে সপরিবার থাকেন দিল্লি লাগোয়া উত্তর প্রদেশের সাহিবাবাদে। ওই ঠিকানাতেই বাড়ির সকলের আধার কার্ড রয়েছে। সেখানে লোহা ভাঙা কেনাবেচার কাজ করেন আজাই। পূর্বস্থলী ছাড়াও পরিবারটি কালনা, হাওড়া, আজিমগঞ্জ-সহ নানা জায়গায় খোঁজ করে ছেলের হদিস পায়নি। শেষমেশ নভেম্বরে আজাই স্ত্রী গঞ্জরা বিবিকে নিয়ে ফিরে যান সাহিবাবাদে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি আসিদুলকে মেমারির রসুলপুর স্টেশন থেকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ। কথাবার্তায় সমস্যা থাকায় বহু চেষ্টাতেও জানা যায়নি তার নাম-ঠিকানা। গত ১৮ অক্টোবর বর্ধমান ‘চাইল্ড লাইন’ ওই বালককে অনাথ আশ্রমে পাঠায়। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়, তার আধার কার্ড তৈরি করার। গত ৭ ডিসেম্বর কালনায় ওই কিশোরের ‘বায়োমেট্রিক তথ্য’ নিতে গিয়ে জানা যায়, তার আধার কার্ড রয়েছে। ‘ই-আধার’ থেকে জানা যায়, ছেলেটির নাম আসিদুল। ঠিকানা, সাহিবাবাদ। আশ্রম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ‘চাইল্ড লাইন’-এর নজরে আনলে যোগাযোগ করা হয় উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গে।

আজাই জানান, গত মঙ্গলবার তাঁরা পুলিশ সূত্রে খবর পান, ছেলের হদিস মিলেছে। এর পরে বর্ধমান ‘চাইল্ড লাইন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ‘টেলি কনফারেন্স’-এর মাধ্যমে মা-বাবাকে ছেলের গলা শোনানোর ব্যবস্থা করেন ‘চাইল্ড লাইন’ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার আজাই এবং গঞ্জরা কালনার ওই আশ্রমে পৌঁছন। বাবা-মায়ের সঙ্গে এ দিন অবশ্য বাড়ি ফেরা হয়নি আসিদুলের। আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ‘চাইল্ড লাইন’ প্রয়োজনীয় কিছু নথি পাঠালে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এ দিন ছেলেকে দেখে চোখে জল গঞ্জরার। কোনও মতে বললেন, ‘‘ভাবিনি, আধার কার্ড ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE