বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধ ছাড়া মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা বনধে গঙ্গাপারের দুই জেলা হাওড়া ও হুগলিতে সে ভাবে কোনও প্রভাব পড়েনি। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত খোলা ছিল। হুগলি শিল্পাঞ্চল এবং জুটমিলগুলিও যথারীতি খোলা ছিল। বেসরকারি বাস কম চললেও সরকারি বাসের সংখ্যা ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। তবে যাত্রী ছিল বেশ কম। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘হাওড়া জেলায় কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি জোরদার নয়। তাই আমরা রাস্তায়-রাস্তায় অবরোধ করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রচারে সাধারণ মানুষ সাড়া দিয়েছেন। জেলায় বনধ সফল।’’ হুগলি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব বনধকে সার্বিক এবং সর্বাত্মক বলে বর্ণনা করেছেন। যদিও শাসকদলের দাবি, দুই জেলার বিস্তীর্ণ অংশে কোনও প্রভাবই পড়েনি এই বনধের। সবংয়ে ছাত্র পরিষদের কর্মী খুন আর রাজ্যজুড়ে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টার বনধ-এর ডাক দিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস।
হুগলি জেলার অধিকাংশ জুটমিলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন অন্যান্য দিনের মতোই। অশান্তি এড়াতে জেলা পুলিশের টহলদারি ভ্যান এদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছে। বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি জায়গায় গুটি কয়েক কংগ্রেস সমর্থক রাস্তায় নেমে বনধ কর্মসূচি সফল করার চেষ্টা করেন। যদিও তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। সকালের দিকে হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার রিষড়া স্টেশনে কংগ্রেস সমর্থকেরা রেল অবরোধ শুরু করেন। সকাল ৮টা থেকে ৮-৩০ পর্যন্ত অবরোধ চলার পর রিষড়া থানা এবং রেল পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দিলে রেল চলাচল শুরু হয়।
বনধে আটকে ট্রেন। রিষড়ায় নিজস্ব চিত্র।
অবরোধকারীরা এরপর জিটি রোডে হেস্টিংস জুটমিলের কাছে অবরোধ শুরু করেন। ফের পুলিশ গিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেয়। বৈদ্যবাটি চৌমাথার কাছে জিটি রোড অবরোধ করেন কিছু কংগ্রেস সমর্থক। সেখানেও অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। এদিনের বনধে মূলত দূরপাল্লার বাস চলাচলের ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু প্রভাব পড়ে। আরামবাগ মহকুমা সড়ক যোগাযোগের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তার উপর কলকাতার থেকে সড়ক পথে আরামবাগ হয়ে বাঁকুড়া, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুরে বেশকিছু বাস চালচল করে। এদিন হলদিয়া আরামবাগ, হলদিয়া তারকেশ্বর রুটের বাস চলেনি। চুঁচুড়া ব্যসস্ট্যান্ড থেকে চুঁচুড়া স্টেশনগামী, তারকেশ্বর ও ধনেখালিগামী বাস কিছু চলাচল করলেও শ্রীরামপুর রিষড়াগামী ২ নম্বর রুটের কোনও বাস এদিন সকাল থেকে চোখে পড়েনি। বন্ধ ছিল পান্ডুয়া-কালনার মধ্যে ১৩ নম্বর রুটের বাস। বেশ কিছু মহিলা-সহ কংগ্রেস সমর্থকরা সকাল থেকে রাস্তায় অবরোধে নেমে পড়লে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয় চুঁচুড়া তারকেশ্বর-ধনেখালি রোডের সুগন্ধা এলাকায়। অবরোধ তুলতে পুলিশকে হয়রান হতে হয়। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিলে অবরোধকারীরা মিছিল করে দিল্লি রোডে গেলে সকালের দিকে খোলা দোকানগুলির বেশিরভাগই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘জেলায় কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জোর করে বনধ্ করার জন্য ১৩ জনকে আটক করা হয়।’’ জেলা কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর প্রীতম ঘোষ বলেন, ‘‘হুগলিতে বনধ্ সর্বাত্মক সফল। রাজ্য জুড়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে যে নৈরাজ্য চলছে তাতে রাজ্যবাসী বিরূপ হয়ে বনধ্-এ সাড়া দিয়েছেন।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে সব জায়গাতেই কলকারখানা, দোকানপাট খোলা ছিল। যান চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।’’
এ দিন গ্রামীণ হাওড়াতেও কয়েকটি জায়গায় রেল ও রাস্তা অবরোধ করা হয়। বেসরকারি বাস কম চললেও সরকারি বাসের সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় চোখে পড়ার মতো বেশি। অবশ্য যাত্রী ছিল অনেক কম। বাগনান, শ্যামপুর, আমতা, উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল-সহ কয়েকটি এলাকায় কিছু দোকান বন্ধ ছিল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাস বন্ধ থাকলেও বাগনান-জয়পুর, শ্যামবাজার-বাগনান, ঝিখিরা-হাওড়া, ডোমজুড়-রবীন্দ্রসদন-সহ কয়েকটি রুটে বেসরকারি বাস চলেছে। বাগনান-ধর্মতলা, আমতা-ধর্মতলা, গাদিগাড়া-ধর্মতলা রুটে সিটিসি বাস চলেছে। তবে যাত্রী ছিল কম। এ দিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বাউড়িয়া স্টেশনে সকাল ১০টা নাগাদ কংগ্রেস কর্মীরা রেল অবরোধ শুরু করেন। নেতৃত্বে ছিলেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র। প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ চলে। তার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। দাশনগর স্টেশনেও কিছুক্ষণ রেল অবরোধ করেন বনধ সমর্থকেরা। বীরশিবপুরের শিল্পতালুকে ৮০ শতাংশ হাজিরা ছিল বলে মালিক কর্তৃপক্ষের। বাউড়িয়া, উলুবেড়িয়ার জুটমিলগুলিতে কমবেশি ৭০ শতাংশ শ্রমিকের হাজির ছিলেন।
সকালে উলুবেড়িয়ার জেলেপাড়ার কাছে মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়। সেখান থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শ্যামপুরে লরির কাচ ভাঙার অভিযোগে এক জন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাঁকরাইলের আন্দুল বাসস্ট্যান্ড, ধূলাগড় মোড়, চাঁপাতলা-সহ কয়েকটি এলাকায় দফায় দফায় পিকেটিং করেন বনধ সমর্থকেরা। তবে ডোমজুড়ে বনধের প্রায় কোনও প্রভাবই পড়েনি। বনধকে কেন্দ্র করে বাগনানের কল্যাণপুর ও সাঁকরাইলের পোদরায় কংগ্রেস ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাওড়া ময়দান চত্বরে একটি সিটিসি বাসের কাচে ইট মারেন বনধ সমর্থকেরা। তবে কেউ আহত হননি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, জোর করে বনধ করায় রাত পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলায় বনধের কোনও প্রভাবই পড়েনি বলে দাবি করেন হাওড়া (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায়। তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন জনজীবন অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল।’’