Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Schools

নতুন ক্লাসে উঠলেই করতে হবে উৎসব! কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে? প্রশ্ন শিক্ষকদের

সর্ব শিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ২ জানুয়ারির পরে ওই মাসেই সুবিধামতো কোনও দিনে স্কুলগুলিকে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি পালন করতে হবে।

প্রতি ক্লাসে পড়ুয়াদের নিয়ে করতে হবে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’ বা উৎসব।

প্রতি ক্লাসে পড়ুয়াদের নিয়ে করতে হবে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’ বা উৎসব। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪১
Share: Save:

নতুন ক্লাসে ওঠার পরেই প্রতি ক্লাসে পড়ুয়াদের নিয়ে করতে হবে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’ বা উৎসব। সম্প্রতি সর্বশিক্ষা মিশনের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তাঁদের একাংশের প্রশ্ন, উদ্যোগটি ভাল হলেও সরকারি, সরকার পোষিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে এই ধরনের উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার জন্য তহবিল কোথায়? পড়ুয়াদের বেতন তো মাত্র ২৪০ টাকা। এই ২৪০ টাকা যাদের দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের সেটাও মকুব করা হয়। তাই গ্র্যাজুয়েশন উৎসব করতে গেলে আলাদা তহবিল মঞ্জুর করার দাবি জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা।

প্রতিবছর ২ জানুয়ারি স্কুলে ‘বুক ডে’ পালন করা হয়। সে দিন বই দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। সর্ব শিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ২ জানুয়ারির পরে ওই মাসেই সুবিধামতো কোনও দিনে স্কুলগুলিকে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি পালন করতে হবে। ওই অনুষ্ঠানে নতুন ক্লাসে ওঠা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষক সম্মান জানাবেন। ক্লাস টিচার প্রতিটি পড়ুয়াকে চকোলেট, মিষ্টি, ফুল আর পেন এবং সার্টিফিকেট দিয়ে স্বাগত জানাবেন তাঁর নতুন ক্লাসে। নবাগত ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস টিচারকে তাদের পরিচয় জানাবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বা ক্লাস টিচার নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের ইতিহাস বলবেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বই, পোশাক, জুতো, স্কুলব্যাগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মিড-ডে মিল-সহ যে সব পরিষেবা দিচ্ছে সেগুলির সুবিধার কথা জানাবেন। এ ছাড়াও প্রতিটি ক্লাসে শিশু সংসদ তৈরির কথা বলা হয়েছে।

কয়েক জন প্রধান শিক্ষকের মতে, চকোলেট, মিষ্টি, ফুল আর পেন দিতে গেলে পড়ুয়া পিছু কমপক্ষে ২৫ টাকা লাগবে। কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের প্রায় ১২০০ পড়ুয়ার জন্য ২৫ টাকা করে বরাদ্দ করলে মোট খরচ পড়বে ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা কোথা থেকে আসবে? স্কুলে যে কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়া হয়, সেই ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যয় করা যাবে তারও একটা গাইডলাইন আছে। স্কুলের কম্পোজিট গ্রান্টের টাকাও এই গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি করার জন্য যথেষ্ট নয়।”

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডার অভিযোগ, “প্রাথমিকে এমন বহু স্কুল রয়েছে, যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। পর্যাপ্ত গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি কর্মী নেই। প্রতিটি ক্লাসে ক্লাস টিচার নেই। গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনির থেকে শিক্ষক নিয়োগ আগে দরকার।”

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর কথায়, “শিক্ষা বহির্ভূত প্রায় ১৮ ধরনের কাজে ব্যস্ত রাখা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা না বাড়িয়ে, স্কুলগুলোর আর্থিক অনুদান না বাড়িয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান কি শিক্ষার মান বাড়াতে সাহায্য করবে?”

কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়াদের সর্টিফিকেট দেওয়ার থেকে বেশি জরুরি অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার সার্টিফিকেট। অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট অনেক চাকরির পরীক্ষায় দরকার পড়ে। স্কুলের পড়ুয়ারা সময়মতো এই সার্টিফিকেট পায় না, এমন অভিযোগও রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Schools Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE